ছেলের স্মৃতিতে সর্বস্ব দান করলেন দম্পতি |
সাধের দোতলা বাড়িটায় আর থাকেন না সূর্য-তাপসী। সেখানে এখন অনেক যন্ত্রপাতি বসছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র হবে। গরিব মানুষের চিকিৎসা হবে কম খরচে। ঘরে ঢুকতেই সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের আবক্ষ মূর্তি।
বছর কয়েক আগে সূর্যবাবু এবং তাপসীদেবীর একমাত্র সন্তান সৌরভের মৃত্যু হয়। তাঁর স্মৃতি আগলে রাখতেই নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু বিলিয়ে দিয়েছেন ওই দম্পতি। সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থও ঢেলে দিয়েছেন একটি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর উন্নয়নে।
সৌরভ ছিলেন সফট্ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কাজ করতেন কলকাতার সেক্টর ফাইভে। কয়েক বছর আগে কর্মসূত্রে দিল্লিতে যেতে হয়েছিল তাঁকে। মাত্র ২৬ বছর বয়সে ২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর সেখানেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। একমাত্র ছেলের আকস্মিক মৃত্যুতে এলোমেলো হয়ে যায় মুখোপাধ্যায় পরিবার।
ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী সূর্যবাবু ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসর নেন। অবসরকালীন পাওনাগণ্ডা এবং সঞ্চিত অর্থ মিলিয়ে হাতে কয়েক লক্ষ টাকা ছিল। আর ছিল চন্দননগরের গোন্দলপাড়ায় রাজকুমার মুখোপাধ্যায় রোডের দোতলা বাড়িটা। পুত্রের স্মৃতিতে সবটাই মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে মনস্থ করেন সূর্য-তাপসী। কিন্তু কোথায় দেবেন?
খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, চন্দননগরের ঋষি অরবিন্দ বিদ্যামন্দিরের দ্বিতল ভবন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। কিন্তু অর্থাভাবে তা কার্যকর করা যাচ্ছে না। সেই বাধা কাটাতেই এগিয়ে যান মুখোপাধ্যায় দম্পতি। সঙ্গে পান চন্দননগর পুরসভাকে। গত ২৫ মে ছেলের জন্মদিনে মুখোপাধ্যায় দম্পতি ওই স্কুলের উন্নয়নে সমস্ত টাকা দান করে দেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির জন্য নিজেদের বাড়িটা সঁপে দেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘গোন্দলপাড়া নব দিগন্ত সৌরভ সেবাসদন’।
ওই দম্পতি জানান, জীবনের অভিজ্ঞতা তাঁদের শিখিয়েছে, সমাজের সার্বিক উন্নতি তখনই সম্ভব, যখন স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাক্ষেত্রে পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটানো যায়।
সেই কারণেই এমন সিদ্ধান্ত। বসতবাড়ি দান করে নিজেরা মাথা গুঁজতে চলে গিয়েছেন চন্দননগরের বড়বাজারের একটি আবাসনে মাসিক ভাড়ায়।
সূর্যবাবুর কথায়, “যা করেছি, তা জনগণের সেবায় লাগবে। তার মধ্যে দিয়েই আমার ছেলের স্মৃতি বেঁচে থাকবে।” |