উদ্ধার সতীর্থদের দেহ
জন্তুদের রুখতে কম্যান্ডোদের জন্য অস্ত্রবৃষ্টি
ন জঙ্গলে এক টুকরো ফাঁকা জমি নজরে পড়ে না, হেলিকপ্টার নামা তো দূর অস্ত! মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন ৩৮ জন কম্যান্ডো। দড়ি ধরে নামতে শুরু করেন তাঁরা। জঙ্গলের মধ্যেই হয়তো পড়ে রয়েছে সহকর্মীদের দেহগুলো। নিষ্প্রাণই হবে।
৩৮ জনের মধ্যে ১২ জন এলিট গার্ড কম্যান্ডো। বলা হয়, সেনাবাহিনীতে এঁদের দক্ষতা প্রশ্নাতীত। প্রায় যন্ত্রের মতোই কাজ করেন এঁরা। স্বভাবতই দড়ি বেয়ে তরতরিয়ে নেমে পড়লেন গৌরীকুণ্ডের জঙ্গলে। কিন্তু তাঁরা তো নেমেছেন দেহ উদ্ধারের কাজে! নিরস্ত্র! জঙ্গলে বন্য জন্তুর মুখে পড়লে কী হবে?
কপ্টার থেকে তখন ফেলা হতে থাকল আগ্নেয়াস্ত্র।
জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে নদী পারাপারের অবলম্বন।
উদ্ধারকাজে নেমে নতুন সেতু তৈরি করছে সেনা। উত্তরাখণ্ডের লাম্বাগড়ে।
আগের দিন কেদারনাথে ছড়িয়ে থাকা মৃতদেহগুলির সৎকারের ব্যবস্থা করতেই তো চপারে রওনা হয়েছিলেন বায়ুসেনার একটি দল। ভাগ্যের পরিহাসে চপার ভেঙে নিজেরাই মৃতদেহে পর্যবসিত হয়েছেন। সেই সহকর্মীদের দেহ উদ্ধার করতে গিয়ে পশুদের আক্রমণে আবার যাতে কেউ বিপদে না পড়েন, তার জন্যই অস্ত্রবৃষ্টি!
গত কাল কেদার থেকে গোচরে ফেরার পথে এই জঙ্গলের ধার ঘেঁষে মন্দাকিনীর জলে ভেঙে পড়েছিল বায়ুসেনার এমআই-১৭ কপ্টার। ঘটনার পরেই ধরে নেওয়া হয়েছিল, চপারের ২০ জন যাত্রীর কেউই হয়তো বেঁচে নেই। গত কাল মিলেছিল ১২ জনের দেহ। বাকিদের মধ্যে কেউ কি বেঁচে? বেঁচে না থাকলে দেহগুলো কোথায়? আশা-নিরাশার দ্বন্দ্ব নিয়েই মঙ্গলবার রওনা হন ৩৮ জন কম্যান্ডো। অরণ্যের নিকষ অন্ধকারকে উপেক্ষা করেই রাতভর চলল উদ্ধারকাজ। হিমালয়ের এই জঙ্গলগুলোতে কালো ভালুক, চিতাবাঘের মতো হিংস্র জন্তুর অবাধ বিচরণ। তাই কম্যান্ডোদের আত্মরক্ষার্থে কপ্টার থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ফেলা শুরু হয়। সারা রাত আঁতিপাঁতি করে খুঁজে জঙ্গলে আরও পাঁচ জনের দেহ মেলে। বাকিদের সন্ধান মিলল আরও পরে। তবে বিশদ জানা নেই। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পক্ষ থেকে শুধু এটুকুই জানানো হয়েছে, ২০ জনেরই দেহ উদ্ধার হয়েছে।
শেষ ১১টা দিন, দিনরাত এক করে কাজ করে চলেছে সেনাবাহিনী। কখনও কাঁধে করে নামিয়ে আনছেন বৃদ্ধবৃদ্ধা-শিশুদের। দড়ি বেয়ে নিমেষে পার করছেন নদীর এ পার-ও পার। এত খারাপ আবহাওয়ায় শুধু প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাওয়াই নয়, উদ্ধার কাজ শেষ হলে শুরু হবে পুনর্বাসন। এর মধ্যে গত কাল কপ্টার ভেঙে পড়ার খবর পেয়ে ছুটে আসেন বায়ুসেনা প্রধান এন এ কে ব্রাউন। বললেন, “ভাগ্য প্রসন্ন, তাই ককপিটের ভয়েস রেকর্ডার আর ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডারটা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে নিশ্চয় কারণটাও জানা যাবে।” প্রশ্ন উঠেছিল, হেলিকপ্টারের কোনও রকম যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল কি না? ব্রাউন তাতে বলেন, “আমি বলব না এর পিছনে নির্দিষ্ট কোনও কারণ আছে... একে পাহাড়ি এলাকা, এত বৃষ্টি, তাতে খারাপ আবহাওয়াটা অবশ্যই একটা কারণ। তবে এই মুহূর্তে বলা মুশকিল, খারাপ আবহাওয়া না যান্ত্রিক ত্রুটি।”
ভাগীরথীতে পড়ে গিয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার ভর্তি ট্রাক।
গত কাল সহকর্মীদের হারানোর পর আজ ফের একটানা বৃষ্টির মধ্যেই মেঘেঢাকা উত্তরাখণ্ডে চলে উদ্ধারকাজ। আকাশপথ, কী হাঁটাপথ, অভিযান চলে লাগাতার। দেবভূমিতে এখনও আটকে রয়েছেন অন্তত সাড়ে তিন হাজার মানুষ। আজ ১১০০ জন পর্যটককে উদ্ধার করা হয়েছে বদ্রীনাথ ও হর্শিল সেক্টর থেকে। তবে হরশিল সেক্টরে আকাশপথে উদ্ধার কাজ চললেও, বদ্রীনাথের আবহাওয়া এতটাই খারাপ ছিল যে হেলিকপ্টার পৌঁছতে পারেনি। বদ্রীনাথ থেকে যে ক’জনকে উদ্ধার করা গিয়েছে, সবটাই হাঁটাপথে।
ব্রাউন বলেন, “সামনের ক’টা দিনে আকাশ একটু পরিষ্কার হলে, আগামী সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে হয়তো উদ্ধারকাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে শুধুমাত্র বদ্রীনাথ ও হরশিল সেক্টর থেকেই পর্যটকদের সরিয়ে আনা বাকি।” এই রকম বিপদসঙ্কুল কাজ আর তার মধ্যে চপার ভেঙে গত কাল সহকর্মীদের মৃত্যু! বাহিনীর মনোবল বাড়াতে চেষ্টা করলেন ব্রাউন। “তোমাদের হাসিমুখে দেখতে চাই”, বললেন ছেলেদের।গত দু’দিন বার বারই গণদাহের আয়োজন করার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু প্রবল বৃষ্টি প্রতি দিনই সে চেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছিল। অবশেষে আজ দুপুরে আয়োজন হল গণচিতার। কয়েকশো মানুষের শেষযাত্রার আগুন জ্বলল উদ্ধারকারী দলের গুটিকয়েক লোকের হাতে। সংখ্যাটা ঠিক কত? জানা নেই।

ছবি: পি টি আই

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.