|
|
|
|
টাকা নেই, খাবারও |
গাড়ি ফেলে ফিরে আসতে পারছেন না চালকেরা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ধস নেমে রাস্তা বন্ধ। মাথার ওপর হেলিকপ্টারের ওড়াউড়ি। সেনা-আধাসেনারা এসে আটকে পড়া লোকেদের উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন। আটকে পড়েছেন তাঁরাও। কিন্তু ফেরার উপায় নেই।
অথচ খাবার নেই, জলেরও অভাব। পকেটে সামান্য টাকা থাকলেও তা খরচ করা যাবে না। টেলিফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগটুকুও বিচ্ছিন্ন।
এঁরা গাড়ির চালক। হরিদ্বার, হৃষীকেশ, দিল্লি বা চণ্ডীগড় থেকে যাত্রীদের নিয়ে গিয়েছিলেন তীর্থে। আটকে পড়ার পরে যাত্রীরা কোনওক্রমে ফিরে এসেছেন। কিন্তু গাড়ি ফেলে রেখে চালকরা ফিরতে পারেননি। কবে রাস্তা ঠিক হবে, তার পরে গাড়ি নিয়ে তাঁরা মালিকের কাছে জমা দেবেন।
হরিদ্বার, কংখল, পউরি বা শ্যামপুরে তাঁদের বাড়ির লোকজন দিন কাটাচ্ছেন চরম উদ্বেগে। টেলিভিশন খুললেই একের পর এক ভাঙা গাড়ির ছবি। কোনওটা ধসে পড়া রাস্তার পাশে উল্টে রয়েছে, কোনওটা আবার ভেসে চলেছে নদীর খরস্রোতে। টেলিফোনে সাড়া না পেয়ে উদ্বেগ আরও বাড়ছে।
গৌরীকুণ্ডে পার্কিংয়ের জায়গা নেই। সওয়ারিদের নামিয়ে দিয়ে গাড়ি অপেক্ষা করছে কয়েক কিলোমিটার নীচে সোনপ্রয়াগ বা সীতাপুরে। দু’এক দিন পরে যাত্রীরা কেদারনাথ থেকে ফিরে ফোন করলে আবার গৌরীকুণ্ডে গিয়ে তাঁদের নিয়ে আসা। কিন্তু ১৭ তারিখের পরে আর কেউ কেদার থেকে গৌরীকুণ্ডে নামেননি। কুণ্ডের কাছে সেতু ভেসে গিয়েছে। সিয়ালসোর পর্যন্ত বহু জায়গায় গোটা রাস্তাটাই গিলে ফেলেছে মন্দাকিনী। তাই ফিরে যাওয়ার উপায় নেই।
বদ্রীনাথে সওয়ারি থাকলেও ফেরার রাস্তা বন্ধ। সেনারা কেদারের উদ্ধারকাজ শেষ করার পরে বদ্রীতে আটকদের ফেরানো শুরু করেছে। পাঁচ-ছ’দিন খাবার-জল ছাড়া কাটিয়ে সেনাদের কপ্টারে উঠে গিয়েছেন যাত্রীরা। আসতে পারেননি চালকরা।
পঞ্জাব থেকে শিখ তীর্থযাত্রীদের নিয়ে অজস্র গাড়ি এসেছিল জোশীমঠ হয়ে গোবিন্দঘাটে। সেখান থেকে হেমকুণ্ড সাহিবে গিয়ে ফেরেননি যাত্রীরা। গাড়ি নিয়ে বসে রয়েছেন চালকেরা।
কত গাড়ি আটকে রয়েছে পাহাড়ে?
হরিদ্বারে গাড়ির ব্যবসায়ী প্রবীর নাগ জানালেন, শুধু তাঁর সংস্থারই ১৩৫টি গাড়ি এখনও ফেরেনি। গাড়ি ফেলে চলে আসতে পারেন না বলে আটকে রয়েছেন চালকরাও। তাঁর হিসেবে, হরিদ্বার থেকে গিয়ে আটকে পড়েছে অন্তত তিন-সাড়ে তিনশো গাড়ি। দিল্লি থেকে গিয়েছে অন্তত ৭০টি গাড়ি, যার মধ্যে ৫০টিই বাস। এ ছাড়া উত্তরপ্রদেশের নানা শহর থেকে চারধাম যাত্রায় আসা ৩০-৩৫টি গাড়ি ছিল। চণ্ডীগড়, অমৃতসর ও পঞ্জাবের নানা শহর থেকে শিখ যাত্রীদের নিয়ে এসেছিল অজস্র ছোট ছোট গাড়ি।
জোশীমঠের উত্তরে গোবিন্দঘাটে ছ’দিন দিন আটকে থাকার পর গাড়ি নিয়ে হরিদ্বারে ফিরছেন চালক গুনিরাম। পিপলকোঠিতে এসে ফোনে চার্জ দিয়ে এ দিনই প্রথম বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। ফোন করেছেন বাড়িতেও। স্বভাবতই খুশি। কিন্তু কী ভয়ঙ্কর একটা সপ্তাহ কেটেছে, ভেবে নিজেই অবাক।
গুনিরাম জনালেন, একেবারে হিসেব করা টাকা নিয়ে তাঁরা বের হন। তেলের টাকা বাদ দিলে খাওয়া-থাকার জন্য বরাদ্দ থাকে সামান্যই। আটকে পড়ার পরেও সঙ্গে বেশ কিছু টাকা ছিল। কিন্তু তা খরচ হয়ে গেলে ফেরার সময়ে তেল কেনা যাবে না। যেটুকু খাবার মিলছিল তার দামও আকাশছোঁয়া। তাই একবেলা খেয়েই কেটেছে। তবে তিনি ফিরছেন খবর পেয়ে বাড়িতে যে খুশির ঢেউ উঠেছে, তা জানাতে ভুললেন না গুনিরাম।
চালকদের পথ চেয়ে রয়েছেন গাড়ির মালিকরাও। যে গাড়ি পাহাড়ে গিয়েছিল, তার ভাড়া যে আর পাবেন না, মালিকরা তা বিলক্ষণ বুঝেছেন। চালকেরা ফিরলে গাড়িগুলো অন্তত তারা ফিরে পান।
|
|
|
|
|
|