|
|
|
|
কপ্টার ভেঙে পড়ল গৌরীকুণ্ডে |
গণচিতার আয়োজনে গিয়ে যাত্রা শেষ ২০ উদ্ধারকারীর |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
কেদারনাথে ইতস্তত ছড়ানো দেহগুলিকে জড়ো করে গণচিতার আয়োজন করছিলেন তাঁরা। খারাপ আবহাওয়ার জন্য শেষকৃত্য স্থগিত হয়ে যাওয়ায় গোচরে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন ২০ জন। কিন্তু সেই খারাপ আবহাওয়াই যে তাঁদের শেষযাত্রা হয়ে উঠবে, কে ভেবেছিল? খরস্রোতা মন্দাকিনীতে আছড়ে পড়ল বায়ুসেনার এমআই-১৭ হেলিকপ্টারটি। আশঙ্কা, মারা গিয়েছেন সকলেই। তিন জন অসামরিক লোক।
বাকিরা এনডিআরএফ, আইটিবিপি ও বায়ুসেনার অফিসার ও জওয়ান।
ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির কর্তা এস শশীধর রেড্ডি জানিয়েছেন, ইস্টার্ন কম্যান্ডের ব্যারাকপুর কপ্টার-হাব থেকে উত্তরাখণ্ডে উদ্ধারের কাজে গিয়েছিল ২৪ আসনের অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারটি। এ দিনও গোচর থেকে কেদার তিন বার উড়েছিল সেটি। কেদার থেকে গোচর ফেরার পথে গৌরীকুণ্ডে প্রবল বৃষ্টি। ঘন কুয়াশায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত মন্দাকিনীতে ভেঙে পড়ে কপ্টারটি। রেড্ডি জানিয়েছেন, আটটি দেহ উদ্ধার হয়েছে। খরস্রোতা নদীর জলে ভেসে যাওয়া বাকিদের বেঁচে থাকার আশা নেই।
বায়ুসেনার মুখপাত্র প্রিয়া জোশী অবশ্য জানিয়েছেন, “এ ঘটনার পরেও বায়ুসেনার উদ্ধার অভিযান চালু থাকবে। কী ভাবে এই দুর্ঘটনা, তা জানতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” |
|
এ বার হয়তো বাড়ি ফেরার সুযোগ মিলবে। গোচরে কপ্টারের অপেক্ষায়। |
উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে বায়ুসেনা যে কাজ শুরু করেছে, তা এখনও পর্যন্ত বৃহত্তম ‘এয়ারলিফ্ট অপারেশন’। এখনও পর্যন্ত ৪৫টি কপ্টার ও বিমান উদ্ধারের কাজে লাগানো হয়েছে। শুধু দুর্গম এলাকায় আটকে পড়া তীর্থযাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ধার করে আসা, সড়ক ও সেতু মেরামতের জন্য ভারী ভারী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামও বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে করে উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু উদ্ধারের কাজে দেরি হওয়ায় চাপ পড়ছিল বায়ুসেনার উপরে। শনিবারই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে দেহরাদূনে গিয়ে বলেছিলেন, তিন দিনের মধ্যে উদ্ধার কাজ শেষ করতে হবে। তার সঙ্গে যোগ হয় নতুন করে খারাপ আবহাওয়ার আতঙ্ক।
বায়ুসেনার কর্তারা বলছেন, সোমবার থেকে ফের আবহাওয়া খারাপ হওয়ার পরেও তাই উদ্ধার কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছে। অধিকাংশ সময়েই কপ্টার ওড়ার মতো আদর্শ আবহাওয়া ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও কাজ থামানো যায়নি। ধরাসু ও গোচরেই একমাত্র পাকাপাকি হেলিপ্যাড ছিল। গৌরীকুণ্ড ও অন্য জায়গায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরেই তাড়াহুড়ো করে অস্থায়ী হেলিপ্যাড বানানো হয়েছে। প্রতিদিন ভোর তিনটে থেকে রাত পর্যন্ত
অভিযান চলছে। মহাতাণ্ডবের পর কেটে গিয়েছে বেশ ক’টা দিন। তার পরেও শান্ত হওয়ার কোনও লক্ষ্মণই দেখাচ্ছে না প্রকৃতি। উল্টে নতুন উদ্যমে শুরু হতে পারে ধ্বংসলীলা।
মঙ্গলবারেও দু-দু’টি বিপর্যয়। প্রথমটি ঘটে দেবপ্রয়াগে। ভোর সাড়ে ছ’টা নাগাদ আচমকাই মেঘভাঙা-বৃষ্টিতে ভেসে যায় ওই এলাকা। সরকারি সূত্রে খবর, তিন জনের মৃত্যু হয়েছে এ দিনের বিপর্যয়ে। ধুয়ে মুছে গিয়েছে বহু ঘরবাড়ি। গুরুতর জখম অনেকে। দেবপ্রয়াগে এ হেন বিপর্যয় ও টিহরির অন্যান্য এলাকায় নতুন করে ধস নামার জেরে সকালবেলার দিকে ধাক্কা খায় উদ্ধারকাজ। বেলা বাড়লে অবশ্য জোর কদমে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। কিন্তু সন্ধের দিকে ফের নতুন বিপর্যয়। গৌরীকুণ্ডে যান্ত্রিক গোলযোগের জেরে ভেঙে পড়ে উদ্ধারকারী কপ্টারটি। |
|
চলছে দুর্গতের শুশ্রূষা। লাম্বাগড়ে। ছবি: পিটিআই |
এ দিনও ১৪২টি দেহ উদ্ধার হয়েছে। সব মিলিয়ে সরকারি হিসেবে নিশ্চিত মৃতের সংখ্যা ৮২২। প্রতিকূল আবহাওয়ার জেরে জোশীমঠে উদ্ধারের কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে রুদ্রপ্রয়াগের অগস্ত্যমুনিতেও। সব মিলিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টা উদ্ধারকাজ চালানোটাই সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে সেনাবাহিনীর কাছে। আবহবিদদের মতে, মঙ্গলবার থেকেই বাড়বে বৃষ্টির তীব্রতা। সেই সঙ্গে আগামী ক’দিনও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্য দিকে, কেদারনাথে উদ্ধারকাজ প্রায় শেষ বলেই জানিয়েছে প্রশাসন। গত কালই রুদ্রপ্রয়াগ জেলার নোডাল অফিসার রবিনাথ রমন জানান, কেদারনাথে আটক সকলকেই উদ্ধার করা হয়েছে। জঙ্গলে বা অন্য কোথাওআর জীবিত কেউ আটকে নেই বলেই দাবি করেন তিনি। ধ্বংসাবশেষে পরিণত হওয়া সোনপ্রয়াগেও প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকবিলা দফতরের (এনডিআরএফ) অল্প ক’জন কর্মীই রয়ে গিয়েছেন।
তাঁরাই জানালেন, সোনপ্রয়াগের বাতাসে এখন শুধুই পচা দেহের গন্ধ। বেশির ভাগেরই অবস্থা এত খারাপ যে সরানো অসম্ভব। অগত্যা সেখানেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করার কথা ভাবছে প্রশাসন।
ত্রাণকাজে হাত লাগাতে এগিয়ে এসেছে বিএসএফ। মঙ্গলবার বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রত্যেক কর্মী তাঁদের এক দিনের বেতন দেবেন উত্তরাখণ্ডের ত্রাণ তহবিলে। প্রথম ধাপে, ১০ কোটি টাকা তুলে দেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণার হাতে। পরে আরও অর্থসাহায্য আসবে। অন্য দিকে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে আগামী ১৫ দিন বিনামূল্যে পরিষেবা দেবে রেল।
|
|
|
|
|
|