প্রথমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদিত জিনিসের মানোন্নয়ন, তারপর তার উপযুক্ত বিপণন স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর উন্নয়নে দ্বিমুখী এই পদক্ষেপ করার কথা ভাবছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ন্যাশনাল ফাইবার মিশন প্রকল্পে স্ব-সহায়ক দলগুলিকে আধুনিক উৎপাদন কৌশলের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি উৎপাদিত দ্রব্য বিপণনে এ বার সাহায্য নেওয়া হবে ওয়েবসাইটের। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সুমন ঘোষ বলেন, “স্ব-সহায়ক দলগুলি যাতে তাদের উৎপাদিত সামগ্রী বিশ্বের বাজারে তুলে ধরতে পারে সে ব্যাপারে আমরা যাবতীয় সহযোগিতা করব।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রায় ৫০ হাজারের কাছাকাছি স্ব-সহায়ক দল রয়েছে। প্রতিটি দলেই রয়েছেন ১০-১২ জন সদস্য। তাঁদের কেউ মাদুর তৈরি করেন, কেউবা বাঁশ, পাট প্রভৃতি দিয়ে নানা ধরনের ঘর সাজানোর সামগ্রী তৈরি করেন। আবার কেউ সাধারণ শাড়িকে জরির নক্সায় অসাধারণ করে তোলেন। প্রথমে এই সব শিল্পকর্ম ছিল অতি সাধারণ। সে ভাবে কোনও পরিকল্পনাও ছিল না। তাতে কাজ হত গড়পড়তা। এর ফলে তা ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। এই ক্রেতাদের অধিকাংশই আবার শহরের শৌখিন মানুষ। এর প্রমাণও মিলেছে বিভিন্ন মেলাতে। রাজ্য বা রাজ্যের বাইরেও বিভিন্ন মেলায় স্ব-সহায়ক দলের সদস্যদের পাঠানো হয়েছে বারেবারেই। সেই মেলায় একদম বিক্রি হয়নি তা নয়, কিন্তু যে ভাবে এই ধরনের কাজের কদর থাকা উচিত ছিল তা হয়নি। এমনকী বছর তিনেক আগে মেদিনীপুর শহরে ‘উদিতা’ নামে এক স্থায়ী দোকানও তৈরি করা হয়েছিল জেলা পরিষদ চত্বরে। কিন্তু ক্রেতাদের কাছ থেকে তেমন সাড়া না মেলায় সেটিও বন্ধ হয়েছে বেশ কিছু দিন। এ সব অভিজ্ঞতা থেকেই প্রশাসনিক কর্তারা বুঝেছেন, স্ব-সহায়ক দল তখনই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে যখন তাঁদের শিল্পকর্মকে একটি শৌখিন রূপ দেওয়া যাবে। যা ক্রেতাকে সহজেই আকর্ষণ করবে। বর্তমানে সেই প্রশিক্ষণও শুরু হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকাতে ‘ন্যাশনাল ফাইবার মিশন’ প্রকল্পে সেই প্রশিক্ষণের কাজ চলছে। তাতে কাজের গুণগত মান অনেকটাই বেড়েছে বলে মত প্রশাসনের। এ বার তাই নতুন করে ক্রেতার কাছে ওই সব সামগ্রী পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন।
কী ভাবে এই কাজ করা হবে?
প্রশাসন জানিয়েছে, একটি বিশেষ ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে যে কোনও সংস্থা নিজেদের শিল্পকর্ম বা ব্যবসার খবর জানাতে পারেন। সেখানে উৎপাদন সামগ্রীর ছবি, তার মূল্যসবই থাকে। ওই ওয়েবসাইট থেকে যে কেউ, যে কোনও উৎপাদন সামগ্রী কেনার অর্ডার দিলে তা ক্যুরিয়ারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে তা পৌঁছে গেলেই নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে টাকা ঢুকে যাবে জেলার শিল্পীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। প্রশাসনিক এক কর্তার কথায়, “আমরা দেখেছি ওই ওয়েবসাইটটি প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ দেখেন। তার মধ্যে যদি ১০ শতাংশ মানুষও আগ্রহ দেখান তা হলেই তা ৫০ হাজার! তার মধ্যে যদি ০.০১ শতাংশ মানুষ কেনেন তা হলে সংখ্যাটা হবে ৫১! শুরুতে এটা কম কিসের।”
কিন্তু ওয়েবসাইটে বিপণনের কাজটি দেখভাল করবে কে?
প্রশাসন জানিয়েছে, একটি সক্রিয় স্ব-সহায়ক দলকে এই দায়িত্ব দেওয়া হবে। প্রয়োজনে একাধিক দল থেকে বেছে বেছে ৮-১০ জনের একটি দল তৈরি করা হবে। তাঁদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে, কী ভাবে ওয়েবসাইটে অর্ডার দেখতে হয়, কী ভাবে তা ক্যুরিয়ারে পাঠানো হয় সব শিখিয়ে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে প্রায় জনা পঞ্চাশেক শিল্পীকে চিহ্নিত করেছে। তাঁদের শিল্পকর্মের ছবিও আনানো হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ততার জন্য কাজ ততটা না এগোলেও নির্বাচন শেষ হওয়ার মাস খানেকের মধ্যেই তা করে দেওয়া হবে।
এমন উদ্যোগকে স্বভাবতই স্বাগত জানিয়েছেন স্ব-সহায়ক দলের সদস্যরা। ডেবরার শিরজন স্ব-স্বহায়ক দলের সদস্য শান্তি টুডুর কথায়, “বিপণনই আমাদের আসল সমস্যা। এ জন্যই আমরা এত দিন তেমন সাফল্য পাইনি। তাই এর ফলে সব স্ব-সহায়ক দলই উপকৃত হবে।”
|