বর্ষাই পর্যটন মরসুম, সাজছে নবদ্বীপ
ৎসবের ঋতু মানেই বসন্ত। কিন্তু বৈষ্ণবদের কাছে প্রকৃত উৎসবের ঋতু বর্ষা। গোটা বর্ষাকাল জুড়ে উৎসবের যেন শেষ নেই। বর্ষার ঋতু উৎসবের সূচনা হয় আষাঢ়ের স্নানযাত্রা দিয়ে যা আসলে রথযাত্রারই মহড়া। এরপর রথযাত্রা, উল্টোরথ, শ্রাবণে ঝুলন, জন্মাষ্টমী, নন্দোৎসব। এই উৎসব সরণি গিয়ে মেশে আশ্বিনের দুর্গা পুজোয়।
উৎসবকেন্দ্রিক পর্যটনের নতুন মরসুম রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে গিয়েছে মায়াপুরে। উপচে পড়া ভিড় কিন্তু এবারের মরসুমকে ব্যবসায়ীদের কাছে আশাব্যঞ্জক করে তুলেছে। অনেক বছর পর মে মাসে ২০০ মিলি বৃষ্টিপাত, তারপর জুন মাসে সঠিক সময়ে বর্ষার অপ্রত্যাশিত এসে পড়া। দুইয়ে মিলে কাটতে চলেছে স্থানীয় ব্যবসা বাণিজ্যের গ্রীষ্মকালীন খরা। চিটফান্ড কেলেঙ্কারি-সহ ব্যবসা বাণিজ্যে নানা কারণে মন্দা দেখা দিয়েছিল জেলার বিভিন্ন ছোট বড় পাইকারি ও খুচরো বাজারে। চিটফান্ডের কাছে জীবনের কষ্টার্জিত সঞ্চয় খুইয়ে সহায় সম্বলহীন মানুষ মুখ ফিরিয়েছিলেন বাজার থেকে। নদিয়া জেলার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহার কথায়, ‘‘ন্যুনতম প্রয়োজন পূরণ ছাড়া ব্যয় করার মানসিকতা ধাক্কা খেয়েছে। গ্রাম ও শহরের সাধারণ মানুষের বাজারে ক্রেতা কমেছিল উল্লেখযোগ্য হারে। পর্যটন দূর অস্ত।’’
এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল গরম। দমবন্ধ করা গরমে খাঁ খাঁ পড়ে থাকছিল পর্যটনকেন্দ্রগুলো হোটেল, অতিথিআবাস থেকে মঠ, মন্দিরের ধর্মশালা সবই ছিল শুনশান। ধান বা আলুতে লাভ করতে না পারা চাষি মুখ ফিরিয়েছিল বিনোদন, বিকিকিনি কিংবা পর্যটন থেকে। ব্যবসায়ীদের কথায়, প্রায় ‘পঞ্চাশ শতাংশ’ হ্রাস ঘটেছিল বাণিজ্যে। কিন্তু জল পড়তেই ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে উঠছে সেই পরিস্থিতি। রথ-ঝুলনকে ঘিরে নবদ্বীপ, মায়াপুর, শান্তিপুরে সাজ সাজ রব।
অন্য দিকে চাষির সামনে পর্যাপ্ত বৃষ্টির কারণে পাটের আশাতিরিক্ত ফলনের সম্ভবনা। কথায় আছে ‘জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়ে জল, পাটে নামল ঢল।’। ফলে রাজ্যের প্রধান অর্থকরী ফসল পাটের ফলন ভাল হওয়ার প্রবল সম্ভবনায় বুক বাঁধছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। নদিয়ার যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা হরেন্দ্রকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর পর এবার পাট নিয়ে চাষিদের আর ভাবতে হবে না। পাটে জল তো দিতে হবেই না। উল্টে পাট পচানোর জলও ইতিমধ্যে মজুত হয়ে গিয়েছে।’’
চাষির হাতে পয়সা থাকলেই গ্রামীণ বাজার চাঙ্গা, মত ব্যবসায়ীদের। নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, ‘‘অবস্থা কিছুটা ঘুরেছে। তবে বৃষ্টির এই ধারাবাহিকতা থাকাটা জরুরি। পর্যটকরা ইতিমধ্যেই আসা শুরু করেছেন। সাময়িক হতাশা ঝেড়ে গ্রামীণ মানুষ আবার নতুন ফসলে লাভের সম্ভবনায় নড়েচড়ে বসছেন।’’ তবে নদিয়া জেলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সম্পাদক গোকুলবাবু অবশ্য এখনই আশাবাদী হতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। পাট ভাল হবে। কিন্তু চাষি দাম পাবে তো? প্রকৃতি সহায় ঠিক আছে বাণিজ্য লক্ষ্মী সহায় হবেন তো? এবারে কিন্তু ভিন রাজ্যে আম রফতানি না হওয়ায় চাষিরা দাম পাননি। পঞ্চায়েত ভোট নিয়েও অনিশ্চয়তার কারণেও থমকে আছে বাজার।’’
বাজার থমকে থাকলেও ভিড়ে উপচে পড়ছে হোটেল, ধর্মশালা, অতিথি নিবাস। ইসকনের রথযাত্রা রাজ্যের উৎসব মানচিত্রে এখন জায়াগা করে নিয়েছে। রবিবার স্নানযাত্রা দিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে সেই উৎসবের কাউন্টডাউন।
ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রমেশ দাস বলেন, ‘‘দোলের পর থেকে এপ্রিল জুড়ে পর্যটক আসা কমে গিয়েছিল। বৃষ্টি নামায় বিভিন্ন স্কুল কলেজের গরমের ছুটিতেও আমরা পর্যটক পেয়েছি যা শেষ তিন বছর আমরা একেবারেই পাইনি।’’ হোটেল মালিক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক প্রসেনজিৎ সরকার বলেন, ‘‘বর্ষাকালটা আগে আমাদের অফ সিজিন ছিল। এখন রথ, ঝুলনেও প্রচুর পর্যটক আসেন। মে মাসের শুরু থেকে বৃষ্টি ইতিমধ্যেই উসবের মেজাজটা তৈরি করে ফেলেছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.