অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে মামলা হওয়ায় আদালত কাজ বন্ধ রাখতে স্থগিতাদেশ দেয়। কিন্তু প্রমোটার সংস্থা তা না শুনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হল আবাসিকরা। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি সিভিল জজ সিনিয়র ডিভিশন আদালতে আবেদন জানান শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার উত্তরায়ণ উপনগরীর ‘রেসিডেন্সি’ এলাকার বাসিন্দারা। এ ব্যাপারে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় থানাকে নির্দেশ দিতে তাঁরা আবেদন জানান। ওই আবেদন জানায় তারা। অভিযোগ, আদালতের স্থগিতাদেশের পরেও মেগা বিল্ডার্স নামে যে প্রমোটার সংস্থার কাছে অবৈধ ভাবে রেসিডেন্সি এলাকার ১.৮৮ একর জমি লক্ষ্মী টাউনশিপ মিলিটেডের তরফে বিক্রি করা হয়েছে সেখানে তারা নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে।
মেগাবিল্ডার্স-এর মালিকপক্ষের তরফে আইনজীবী সমীর ঘোষ দাবি করেছেন, “আদালতের নির্দেশের পরে আপাতত সমস্ত রকম নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। তা মানা হচ্ছে অভিযোগ ওঠায় মেগাবিল্ডার্সের কর্ণধারদের কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম। তাঁরা জানিয়েছেন, আগে থেকে নির্মাণ কাজের শ্রমিকেরা সেখানে থাকতেন। তারা ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছেন। নির্মাণ বন্ধ রাখতেই ঠিকাদারের লোকদের জানানো হয়।”
তবে এ দিন দুপুরে বিতর্কিত জমিতে নির্মাণ কাজ চালাতে দেখা গিয়েছে প্রমোটার সংস্থার শ্রমিকদের। আবাসিকদের পক্ষে আইনজীবী মিলিন্দ পাল বলেন, “গত ১৮জুন আদালতের তরফে নির্মাণ কাজ আপাতত স্থগিত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ নির্মাণকারী সংস্থা মেগাবিল্ডার্সের তরফে তা মানা হচ্ছে না। তারা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ দিন তাই আদালতে আবেদন করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিতে।” তবে এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশ এখনও মেলেনি। |
শিলিগুড়ির উত্তরায়ণ উপনগরীর এই নির্মাণ ঘিরেই অভিযোগ উঠেছে।—নিজস্ব চিত্র। |
রেসিডেন্সি এলাকায় থাকা পার্ক এবং খোলা জায়গার একাংশ অবৈধ ভাবে লক্ষ্মী টাউনশিপ লিমিটেডের তরফে প্রমোটার সংস্থা মেগাবিল্ডার্সকে প্রায় ১৭ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকায় ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ পদ্ধতিতে বিক্রি করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গত নভেম্বর মাসেই ওই অংশ বিক্রি করে দেওয়া হয়। এর পরে গত মার্চ মাস নাগাদ সেখানে নির্মাণ কাজ শুরু করেন সংস্থাটি। আবাসিকদের দাবি, সে সময় তাদের কয়েক জন আপত্তি জানালে ওই জমি বিক্রি করা হয়নি বলে লক্ষ্মী টাউনশিপ কর্তৃপক্ষের তরফে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জানান, ওই জমি বিক্রি করা হয়নি। কিন্তু পার্ক খোলা জায়গা নষ্ট করে সেখানে নির্মাণ কাজ হচ্ছে দেখে আবাসিকদের সংগঠন উত্তরায়ণ রেসিডেন্সি অ্যাপার্টমেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি আদালতে মামলা করা হয়। লক্ষ্মী টাউনশিপের তরফে উত্তরায়ণের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক দীপঙ্কর ধর এ ব্যাপারে কোনও কিছু বলতে চাননি।
প্রমোটার সংস্থার তরফে অবশ্য দাবি করা হয় তারা নিয়ম মেনে জমি কিনে নকশা পাশ করে তবেই নির্মাণ কাজ করছেন। ওই অংশে নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদনের বিষয়টি শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে। তা ছাড়া জমি বিক্রি করতে গেলে রাজ সরকারের ভূমি এবং ভূমি সংস্কার দফতরের অনুমোদন প্রয়োজন। আবাসিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক অনিল সাহু, দেবমাল্য মৈত্রের মতো বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে রেসিডেন্সি এলাকার যে নকশা এসজেডিএ অনুমোদন করেছিলেন তা পরিবর্তন করে কী করে ওই প্রমোটার সংস্থাকে নির্মাণ কাজ চালাতে নকশা অনুমোদন করেছে? ভূমি ও ভূমি রাজস্থ দফতর রেসিডেন্সি এলাকার জমি অপর সংস্থাকে বিক্রির বিষয়টি অনুমোদন করেছে জানিয়ে তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
|