নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
দু’দিন ধরে হেঁটে, হামাগুড়ি দিয়ে প্রায় ২৫ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে কী ভাবে প্রাণে বেঁচেছেন তা বর্ণনা করতে গিয়ে বারে বারেই কেঁপে উঠছেন নিখিল আর সন্ধ্যা সাহা। কোনও সাহায্য ছাড়াই চার দিন রাস্তায় আটকে ছুলেন। অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত হরিদ্বারে ফিরতে পেরে এখন ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন তাঁরা।
অভিশপ্ত কেদারনাথ যাত্রা শেষ করে মঙ্গলবারই শিলিগুড়ির চয়নপাড়ার বাড়িতে পৌঁছেছেন নিখিল সাহা ও তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যাদেবী। জল, খাবার, যোগাযোগ ছাড়াই কী ভাবে এই ক’টা দিন-রাত কাটিয়েছেন তাঁরা। তিন দিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পরে ফের যখন ১৯ জুন রাতে মোবাইলে ছেলে নবেন্দুর গলা ভেসে এসেছিল, তখন প্রথমে নিজের কানকে বিশ্বাসই করতে পারেননি। নবেন্দুবাবুর কথায়, “তিন দিন ধরে মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে আমরা প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবু যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। ১৯ জুন রাত ১২টা নাগাদ প্রথম লাইন পাই। তখনই শুনি, মা-বাবা দু’জনেই দুন এক্সপ্রেসে চেপে হাওড়ার পথে রওনা দিয়েছেন।” |
স্বস্তির ফেরা। শিলিগুড়ির বাড়িতে সস্ত্রীক নিখিল সাহা।—নিজস্ব চিত্র। |
কলকাতা থেকে হরিদ্বার। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ৯ জুন বেরিয়েছিলেন চার জন। ১০ তারিখ পৌঁছান জান কি চটি। সেখান থেকে ১১ তারিখ বেরিয়ে যান যমুনোত্রী দর্শনে। ১২ তারিখ যান উত্তর কাশী। সেখান থেকে ১৩ জুন যাওয়ার কথা ছিল গঙ্গোত্রী দর্শনে। পথে বেরিয়ে শুনলেন ধ্বসে রাস্তা বন্ধ। আর যাওয়া যাবে না। অগত্যা ফিরে যান উত্তরকাশীতে। এর পরে ১৪ জুন চলে যান গৌরীকুণ্ডে। সেখানে থেকে ১৫ জুন ঘোড়া নিয়ে যান কেদারনাথে। দর্শন সেরে রাতে ওখানেই থাকবেন বলে ঠিক ছিল। রাস্তা তখন বন্ধ ধসের কারণে। সঙ্গী ভাইপো বরুণের পরামর্শ মেনে নেমে যান গৌরীকুণ্ডে। সেখানে রাতে থেকে যান। পর দিন সকালে উঠে দেখেন হোটেলে জল নেই, মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই। প্রমাদ গুণে তখনই বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর তার জেরেই প্রাণে বেঁচে যান। তবে সেখান থেকেই তাঁদের লড়াইয়ের শুরু।
এর পরে কী ভাবে কেটেছে? সাহা-দম্পতি জানালেন, দু’দিন কেটেছে গাড়িতে। বাকি দু’দিন কখনও হেঁটে আবার কখনও প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে রাস্তা পার হতে হয়েছে। নদীর জল উঠে আসছে রাস্তায়। সমানে বৃষ্টি। কখনও কানের পাশ দিয়ে গড়িয়ে গিয়েছে বড় পাথরের চাঁই। কখনও আস্ত ঘোড়া ভেসে যাচ্ছে জলের তোড়ে। দু’দিন আগেই তো কেদারনাথে দাঁড়িয়ে মন্দাকিনীর পবিত্র জল বোতলে ভরে এনেছেন। এখন সেই মন্দাকিনীর অন্য রূপ দেখে তাঁরা ভয়ে কাঁটা। সঙ্গে ভাইপো বরুণ এবং তাঁর স্ত্রী বন্দনাকে নিয়ে একটার পর একটা গাড়িতে শুধু হাত দেখিয়ে যাচ্ছেন ফেরার জন্য। গাড়ি খালি থাকলেও কেউ দাঁড়ায়নি। নিখিলবাবুর অভিযোগ, সাহায্যের জন্য পুলিশ চৌকিতে গেলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত হঠাৎ তাঁদের নিজেদের গাড়ির চালককে পেয়ে যান তাঁরা। আর এ যাত্রা বেঁচে ফিরতে পারেন সকলে।
|
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
• সুযোগ পেলেই ফের কেদার যেতে চাই |