নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
মাটিগাড়ার উত্তরায়ণ উপনগরীর প্রায় ১১ একরে গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকার একাংশ অবৈধ ভাবে প্রমোটার সংস্থার কাছে বিক্রি করে নির্মাণ কাজের অভিযোগ তুললেন বাসিন্দারা। সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা অভিযোগ করেন, উপনগরী এলাকায় ‘হাই ইনকাম গ্রুপ’(এইচআইজি)-এর জন্য আবাসিক এলাকা চিহ্নিত করে ৮ টি আ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হয়। সেখানে ৩৪০ টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই অংশের নকশায় পার্ক এবং খোলা জায়গা ছিল। অথচ তা অবৈধ ভাবে উপনগরীর নির্মাতা লক্ষ্মী টাউনশিপের পক্ষে প্রমোটার সংস্থাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
গত মার্চ মাস থেকে ওই প্রমোটার সংস্থা নির্মাণ কাজ শুরু করে। ফ্ল্যাট মালিকদের সংগঠন উত্তরায়ন রেসিডেন্সি অ্যাপার্টমেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে উপনগরী কর্তৃপক্ষ তথা লক্ষ্মী টাউনশিপ, নির্মাণকারী সংস্থা ‘মেগা বিল্ডার্স’-এর বিরুদ্ধে শিলিগুড়ি আদালতে মামলা করা হয়েছে। মার্চ মাসের শেষের দিকে করা ওই মামলায় শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজ্য সরকার ও জেলা ভূমিসংস্কার দফতরের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়েছে। আদালতের তরফে ১৮ জুন সেখানে আপাতত ১ মাসের জন্য নির্মাণ কাজ স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। সেই নির্দেশ মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
লক্ষ্মী টাউনশিপের তরফে উত্তরায়ণ উপনগরীর দায়িত্বে থাকা আধিকারিক দীপঙ্কর ধর বলেন, “ফ্ল্যাট মালিকের আদালতে মামলা করেছেন। বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন বলে কিছু বলতে পারব না। যা বলার আইনজীবী বলবেন। মেগা বিল্ডার্স এবং লক্ষ্মী টাউনশিপের আইনজীবী সমীর ঘোষ বলেন, “রেসিডেন্সি’ এলাকার অ্যাপার্টমেন্টের সামনে অংশে থাকা জমিতে অবৈধ নির্মাণ কাজের অভিযোগ ঠিক নয়। ফ্ল্যাট মালিকেরা যে অংশের দাবিদার বলছেন সেখানে পরে রাস্তা হয়েছে। তা রেসিডেন্সি এলাকার বাসিন্দারা ব্যবহার করছেন। তা ছাড়া আদালতের নির্দেশে নির্মাণ কাজও বন্ধ রাখা হয়েছে।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিয়মমতো উপনগরী গড়তে রাজ্য সরকারের তরফে ওই এলাকা লক্ষ্মী টাউনশিপকে লিজ দেওয়া হয়েছিল। তারা কাউকে সেখানকার জমি দিতে গেলে সরকারের অনুমতি প্রয়োজন হয়। রেসিডেন্সি অংশের জমির একাংশ (প্রায় ১.৮৮ একর) ‘অ্যাসাইনমেন্ট’-এর মাধ্যমে মেগা বিল্ডার্স সংস্থার কাছে বিক্রি করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন রয়েছে কি না এবং থাকলে কী ভাবে সরকারের তরফে সেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদী বলেন, “উত্তরায়ণ উপনগরীর বিষয়ে সামগ্রিক ভাবে একটি তদন্ত হচ্ছে। রেসিডেন্সি এলাকার ব্যাপারে ঠিক কী হয়েছে তা দেখব।” জেলা ভূমিসংস্কার আধিকারিক গোপাল লামা জানান, বাসিন্দাদের কী অভিযোগ রয়েছে সে ব্যাপারে তিনি খোঁজ নেবেন। মামলায় সরকার এবং এসজেডিএ’র পক্ষে সরকারি আইনজীবী চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রেসিডেন্সি এলাকার যে অংশ বিক্রি করা হয়েছে বলা হচ্ছে তা করার ক্ষেত্রে সরকারের তথা ভূমিসংস্কার দফতরের অনুমতি লাগে। তা দেওয়া হয়েছিল কি না সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানতে চাওয়া হয়েছে।”
উত্তরায়ণ রেসিডেন্সি অ্যাপার্টমেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য তথা ফ্ল্যাট মালিক অঞ্জন দেবনাথ, অনিল সাউদের অভিযোগ, রেসিডেন্সি এলাকার মধ্যে থাকা ওই জমি কী করে প্রমোটার সংস্থাকে বিক্রি করে দেওয়া হল তা বুঝতে পারছি না। নির্মাণকাজ করতে এসজেডিএ’র অনুমতি প্রয়োজন। তারা অনুমতি কী করে দিয়েছেন তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। |