লড়াইয়ের ময়দান ধ্বস্ত উত্তরাখণ্ড
কমন ম্যানের বেশেই সুপারম্যান মোদীর মোকাবিলায় রাহুল
রেফারি কখন বাঁশি বাজালেন, তা আর জরুরি নয়! রাজনীতিকরাই বলছেন, খেলাটা এ বার সত্যিই শুরু হয়েছে! নরেন্দ্র মোদী বনাম রাহুল গাঁধী। কখনও মুখোমুখি, কখনও বা মেঘের আড়াল থেকে দেওয়া চাল ও পাল্টা চাল। হড়পা বানের ধ্বংসলীলা, মৃত্যু, ক্ষোভ, কান্নায় ভরা উত্তরাখণ্ডই আপাতত সেই খেলার ময়দান।
১২ নম্বর তুঘলক লেনের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, টিম সাজিয়ে নেওয়ার পর মাঠে নামার আগে ক’দিনের ছুটি কাটাচ্ছিলেন রাহুল। প্রথমে বিলেত, তার পর স্পেনে। আচমকা এই বিপর্যয় ঘটবে কে জানত?
মাঠ ফাঁকা পেয়ে তাই প্রথম সুযোগেই বল গোলে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন মোদী। আমদাবাদ থেকে সোজা চার্টার্ড বিমানে পৌঁছে গিয়েছিলেন দেহরাদূন। হেলিকপ্টারে বিপর্যস্ত এলাকা ঘুরেও দেখেন। মোদীর ভাড়া করা জনসংযোগ সংস্থা এর পরই রটিয়ে দেয় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী যেন কতকটা ‘র্যাম্বো’র মতো হয়ে উঠেছিলেন সে দিন। ১৫ হাজার গুজরাতিকে উদ্ধার করে চারটি বিমান ও আশিটি বাসে চড়িয়ে মোদী ওই দিনই আমদাবাদ পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করে তারা।
মঙ্গলবার গুপ্তকাশীতে রাহুল।
সেনাপতি দেশে না থাকলেও খবরের কাগজে ‘র্যাম্বো-কাহিনি’ দেখেই মাঠে নেমে পড়েন রাহুলের সেনারা। অনেকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘এ যেন সুপারম্যান! আসলে নীতীশ কুমার ঠিকই বলেছেন। সবটাই মোদীর ভাড়া করা জনসংযোগ সংস্থার কারসাজি। তারাই মোদীকে বলে দিচ্ছে, কোনটা বাজারে খাবে।’ এঁরা উদাহরণ দিচ্ছেন, গোয়ায় বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে মোদী গেরুয়া কুর্তা-সাদা পাজামা পরলেও দেহরাদূনে এসেছেন ‘র্যাম্বো’ রাজনীতিকের’ সঙ্গে মানানসই পোশাকে। পুরোহাতা লাল-নীল স্ট্রাইপ টি শার্ট। তার সঙ্গে কাট স্লিভ জ্যাকেট!
তুলনায় দেরিতে মাঠে নামা রাহুল নিজেকে একেবারে মোদীর বিপরীত চেহারায় তুলে ধরতে তৎপর। সুপারম্যান নয়, ‘কমন ম্যান’। দল অন্তত তেমনই বলছে। সম্ভবত সেই কারণেই সাদা কুর্তা-জিন্স পরা তিনি হেলিকপ্টারে ওঠেননি, রাজ্যের প্রোটোকল চাননি। আগাগোড়া সড়কপথের সফরে কংগ্রেস সহ-সভাপতির ছায়াসঙ্গী কনিষ্ক সিংহ এবং ৬ জন এসপিজি রক্ষী। দেহরাদূনে দলের কন্ট্রোল রুম থেকেই মোটামুটি একটা ছক কষে নিয়ে গাড়িতে বেরিয়ে পড়েছেন তাঁরা।
কংগ্রেসের দাবি, ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েও কোনও প্রচার চাইছেন না রাহুল। তবু অনেকে বলছেন, রাহুলের ভূমিকা নিয়ে তা হলে অহোরাত্র কেন বলে বেড়াচ্ছেন কংগ্রেসের তাবড় নেতা? এটা মোদীর সঙ্গে পাল্লা দেওয়া নয়?
মোদী-শিবির কিন্তু ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছে, বিজেপির প্রচার কমিটির প্রধানকে ভয় পাচ্ছে কংগ্রেস। তাই দেহরাদূনে মোদী পৌঁছতেই জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনও ভিআইপি-কে বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে যেতে দেওয়া হবে না। তা হলে রাহুল কী করে সেই অনুমতি পেলেন? প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। বলছেন, মোদীকে এক বার ছেড়ে দিয়ে দেখত কংগ্রেস। ভুজের মতোই উদ্ধার, ত্রাণ এবং পুনর্গঠন করে দেখাতেন তিনি।
গত শনিবার দেহরাদূনে মোদী।
কেউ কেউ যদিও বলছেন, মোদী নিয়ে চোখ-কান বুজে প্রচার চালাতে গিয়ে একটু হিসেবের গড়বড় হয়ে গিয়েছে। তাই কিছুটা অ্যাডভান্টেজ কংগ্রেস। কেননা, মাত্র চারটি বিমান ও আশিটি বাসে কী ভাবে ১৫ হাজার মানুষকে মোদী বসালেন, তার হিসেব কোনও অঙ্কেই মিলছে না। এই প্রশ্নও উঠছে, যে মোদী গুজরাত বিধানসভা ভোটে জেতার পর বলেছিলেন, ‘এ বার ভারত মায়ের ঋণ শোধ করতে হবে’, তিনি কি না শুধু গুজরাতিদের উদ্ধার করলেন। এই কি সেই ঋণ শোধের নমুনা! জেডিইউয়ের এক নেতার কটাক্ষ, “আসলে আত্মজীবনী লিখছেন নরেন্দ্র মোদী আই, মি অ্যান্ড মাইসেল্ফ।”
বিজেপি নেতারা অবশ্য বলছেন, ১৫ হাজার তীর্থযাত্রীকে উদ্ধার করে আমদাবাদে ফেরত পাঠানোর কথা দলীয় তরফে কখনওই বলা হয়নি। এটা সংবাদমাধ্যমের প্রচার। তবে কংগ্রেসের উল্লসিত হওয়ার কারণ নেই। নেতিবাচক পরিস্থিতিকে ইতিবাচক করে তুলতে মোদী খুব ভাল জানেন। প্রসঙ্গত, আজই উত্তরাখণ্ডের জন্য আরও ৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে গুজরাত সরকার।
আসলে কংগ্রেস নেতারাও বুঝছেন, খেলাটা আসলে কম জটিল নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে মোদীকে কড়া আক্রমণ করলে তিনি সহানুভূতি পেতে পারেন। আবার চুপ থাকলে সংবাদমাধ্যমই বলবে কংগ্রেস ভয় পাচ্ছে। বস্তুত, মোদীর মোকাবিলার কৌশল স্থির করতে নিয়ে আজই অজয় মাকেনের নেতৃত্বে বৈঠকে বসেন কংগ্রেস মুখপাত্ররা।
কৌশল যা-ই হোক, মোটের উপর সকলেই জানেন, সর্বভারতীয় রাজনীতির মঞ্চটা আপাতত রাহুল-মোদী যুদ্ধের বক্সিং রিং। উত্তরাখণ্ডের ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ নিয়ে রাজনীতি হয়তো কাম্য নয়, কিন্তু ভারতীয় রাজনীতিতে এটাই দস্তুর। লোকসভা ভোট পর্যন্ত এই যুদ্ধ ক্রমশ তীব্রতর হবে। সে দিক থেকে বলা যায়, আপাতত সবে প্রথম রাউন্ডের লড়াই চলছে।

ছবি: পিটিআই

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.