|
|
|
|
তুমুল ব্যস্ত এটিসি কর্মীরা |
বিমান দাঁড়ানোর জায়গা নেই শান্ত জলি গ্রান্টে |
সুনন্দ ঘোষ • কলকাতা |
মাত্র পাঁচটি পার্কিং বে।
যার অর্থ, রানওয়েতে নামার পরে মাত্র পাঁচটি বিমান সেখানে দাঁড়াতে পারে।
আর দশটা স্বাভাবিক দিনে সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দেহরাদূন বিমানবন্দরে নামা-ওঠা করে মেরে কেটে পঁচিশ থেকে তিরিশটি উড়ান। দিল্লি থেকে নিয়মিত যাতায়াত করে জেট, এয়ার ইন্ডিয়া এবং স্পাইসজেটের উড়ান। এ ছাড়া পর্যটকদের নিয়ে ভাড়া করা কিছু বিমান বা হেলিকপ্টার।কিন্তু আচমকাই বদলে গিয়েছে গাড়োয়াল পর্বতমালার কোলে নিশ্চিন্তে পড়ে থাকা জলি গ্রান্ট (এটাই দেহরাদূন বিমানবন্দরের নাম)-এর দৈনন্দিন ছবি। প্রতি দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হেলিকপ্টারের যাতায়াত। ভয়ানক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পাহাড়ের কোনায় কোনায় আটকে পড়া যাত্রীদের ভিড়। তার উপরে শুরু হয়েছে মন্ত্রী-সান্ত্রীদের যাতায়াত।
কয়েক দিন আগে বিমানবন্দরে বিশেষ বিমান নিয়ে নেমেছেন নরেন্দ্র মোদী। তা ছাড়াও প্রায় প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর প্রতিনিধি, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদরা উড়ে উড়ে আসছেন। মাথার উপর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সনিয়া গাঁধী উড়ে গেলেও তাঁরা বিমানবন্দরে নামেননি। কিন্তু, যাঁরা আসছেন তাঁদের বেশির ভাগই সঙ্গে নিয়ে আসছেন ব্যক্তিগত বিমান। ফলে, বিমান দাঁড় করানোর জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। দেহরাদূন বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৃষ্ণ মোহন নেহরা-র কথায়, “রাতারাতি তো পার্কিং বে বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।” এক পলকে তিন থেকে চার গুণ বেড়ে গিয়েছে বিমান ও হেলিকপ্টারের যাতায়াত।
গত তিন দিন ধরে কোনও ব্যক্তিগত বিমানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না বিমানবন্দরে। কোনও ভিআইপি ব্যক্তিগত বিমান নিয়ে এলে সেই বিমানের পাইলটকে বলা হচ্ছে, ভিআইপি-কে নামিয়ে দিয়ে হয় দিল্লি ফিরে যান, নয় তো যেখান থেকে এসেছেন সেখানে ফিরে যান। ভিআইপি যখন ফিরবেন, তখন আবার উড়ে এসে তাঁকে তুলে নিয়ে চলে যাবেন। নির্ধারিত বিমান ছাড়াও এখন পার্কিং বে-তে রাখতে হচ্ছে সেনাবাহিনীর বিমান। বড় মালবাহী সেই বিমানে কখনও আনা হচ্ছে সেতু তৈরির মালপত্র। কখনও রাস্তা তৈরির যন্ত্রপাতি। এ ছাড়াও আটকে পড়া যাত্রীদের কথা ভেবেই এয়ার ইন্ডিয়া এবং জেট বিমানসংস্থার পক্ষ থেকে চালানো হচ্ছে বিশেষ বিমান। ফলে, তাকেও দাঁড় করানোর জায়গা দিতে হচ্ছে।
সারা দিনে যখন-তখন হেলিকপ্টার নামা-ওঠা করছে। ফলে, বিমান নামতে চাইলেও অনেক সময়ে তাকে নামার অনুমতি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বেশির ভাগ সময়ে বিমান দিল্লি থেকে দেহরাদূনের দিকে ওড়ার আগেই দেহরাদূন এটিসি থেকে পাইলটকে বলা হচ্ছে, “অপেক্ষা করুন। বিমানবন্দরের আকাশ এবং পার্কিং বে, কোনওটাই খালি নেই।” এতে অবশ্য আপত্তি করছেন না কোনও পাইলটই।
আর প্রতিনিয়ত যাঁদের এই বিমান ও হেলিকপ্টারের উপরে নজর রাখতে হচ্ছে, পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হচ্ছে, কার্যত রাতের ঘুম ছুটে গিয়েছে বিমানবন্দরের সেই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) অফিসারদের। এতটাই যে, এটিসি-র দায়িত্বে থাকা অফিসার কার্তিক চন্দ্র ম্রিধা ৪০ কিলোমিটার দূরের বাড়ি ছেড়ে বিমানবন্দর লাগোয়া হোটেলে এসে থাকছেন। দিল্লি থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে ১২ জন এটিসি অফিসারকে। কৃষ্ণমোহন বলেন, “এখন সকাল পাঁচটা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চালু রাখা হচ্ছে বিমানবন্দর।”
এমনিতে সূর্যাস্তের পরে বিমান ওঠানামা করে না দেহরাদূন থেকে। যদিও রাতে নামাওঠার সুবিধা রয়েছে। কৃষ্ণমোহনের কথায়, “আমাদের প্রয়োজন হয় না। কখনওসখনও বিশেষ বিমান বা জরুরি অবস্থায় রাতে নামাওঠা করে।”
কিন্তু, এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। সোমবারের আবহাওয়া না হয় খারাপ ছিল। তাই ৬০ থেকে ৬৫ বার হেলিকপ্টার নামা-ওঠা করেছে বিমানবন্দরে। কিন্তু, তার আগের দিন রবিবার বা মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার প্রায় ১২০ বার নামা-ওঠা করেছে। আর সেটা করা হচ্ছে সূর্য ডোবার আগেই। কার্তিকবাবুর কথায়, “এই পাহাড়ি এলাকায় সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে হেলিকপ্টার নিয়ে ওড়া যায় না। সেটা ঝুঁকির হয়ে যায়।” |
|
|
|
|
|