|
|
|
|
সংগ্রহে রাখা হচ্ছে ছবি, ডিএনএ নমুনা |
সেজেছে গণচিতা, আগামিকাল শেষকৃত্য কেদারনাথে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
শেষ হয়েছে প্রাণের সন্ধান। এ বার তাই কেদারনাথ মন্দির চত্বরের সামনে সাজছে গণচিতা! আগামিকাল সে চিতা আঁকড়ে জ্বলবে আগুন। সাক্ষী বলতে থাকবেন অবশ্য উদ্ধারকারী দলের গুটিকয়েক লোকজন। দশ দিন ধরে এই এলাকাতেই প্রাণের খোঁজ চালিয়ে এসেছেন তাঁরা। তাঁদের হাতেই এ বার প্রায় কয়েকশো মানুষের শেষযাত্রার ভার।
কেদারনাথে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের সেখানেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল রবিবার। সোমবার থেকে শুরু হয়েছিল অন্ত্যেষ্টির আয়োজন। কিন্তু তাতে বাদ সাধল বৃষ্টি আর চরম প্রতিকূল আবহাওয়া। বদলাল প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, শেষকৃত্য হবে মঙ্গলবার। কিন্তু মঙ্গলবারও খলনায়িকা হয়ে রইলেন সেই প্রকৃতি। আয়োজন অবশ্য শেষ। এখন খালি আবহাওয়া ভোল পাল্টালেই শেষকৃত্য সেরে ফেলা যায়। আর তা যতক্ষণ না হচ্ছে, ততক্ষণ কপালে ভাঁজ বাড়ছে প্রশাসনের।
আচমকা মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানের জেরে কার্যত ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল কেদারনাথ। তার পর থেকেই প্রতিকূল আবহাওয়ার রেশ চলছে সেখানে। তা সত্ত্বেও অভিযান চালিয়েছে উদ্ধারকারী দল। প্রাণে বাঁচিয়েছে বহু মানুষকে। তবে বহু মানুষের নিথর দেহও দেখেছেন তাঁরা। মঙ্গলবারও ১২৭ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে কেদারনাথ থেকে। তার পরেই প্রশাসন ঘোষণা করেছে, শেষ হবে কেদারনাথের উদ্ধারকাজ।
কিন্তু দশ দিনে ভয়ানক পচন ধরতে শুরু করেছে নিথর দেহগুলিতে। কেদারনাথের বাতাসে এখন শুধুই দুর্গন্ধ। তার থেকেও বড় আশঙ্কা, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেহগুলির থেকে ছড়াতে পারে নানা রকম রোগ। এমনকী তৈরি হতে পারে মহামারীও। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে, নিশ্চিত উদ্ধারকারী দলের একাংশ। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে তাই তড়িঘড়ি শেষকৃত্য সেরে ফেলতে চাইছেন তাঁরা। |
|
গণচিতার প্রস্তুতি। গোচর হেলিপ্যাড থেকে পাঠানো হচ্ছে কাঠ। ছবি: রয়টার্স। |
তবে শেষকৃত্যের আগে কিছু নিয়মবিধি পালন করবে প্রশাসন। নিথর দেহগুলিকে শনাক্ত করতে পারেন এমন কাউকে এখন হাতের নাগালে না পাওয়ায় আপাতত প্রত্যেকটি দেহের ছবি তুলে রাখা হবে। সংগ্রহ করে রাখা হবে ডিএনএ নমুনাও। আঙুলের ছাপও সংগ্রহ করা হতে পারে। প্রাথমিক ভাবে শোনা গিয়েছিল ময়না-তদন্ত করা হবে। কিন্তু আইজি আর এস মিনা মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও মৃতদেহেরই ময়না-তদন্ত করা হচ্ছে না। প্রসঙ্গত, প্রায় ৬০০ মানুষের শেষকৃত্য হওয়ার কথা আগামিকাল। মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা জানান, পরবর্তী কালে সম্মিলিত চিতাভস্ম থেকেই ভস্ম তুলে দেওয়া হবে মৃতদের আত্মীয়দের হাতে।
মঙ্গলবার অবশ্য সকাল থেকেই শেষকৃত্যের তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। ঘি এবং সুগন্ধী কাঠ চপার বোঝাই করে পাঠানো হয় কেদারনাথে। শাস্ত্রীয় রীতিনীতি পালনে যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে, সে জন্য বারো জন পুরোহিতের একটি দলকে পাঠানোর কথা সেখানে। একই সঙ্গে, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক এবং ৩০-৪০ জন পুলিশকর্মীও এসে পৌঁছেছেন কেদারনাথে।
অথচ মাত্র দশ দিন আগেও এমন ছিল না কেদারনাথ। ফি-বছরের মতো এ বছরও সেখানে ভিড় জমিয়েছিলেন হাজার হাজার পুণ্যার্থী। ছিল তাঁদের লম্বা লাইন, মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি, আরতির আলো। মূল মন্দিরকে ঘিরে গড়ে ওঠা অজস্র ছোট-বড় রুজির রোজনামচাও ছিল। তার পর হঠাৎ এল সে। ভাঙল, মুছল, শেষ করল। যখন থামল সব কিছু, তখন একলা পড়ে কেদারনাথ। আর তার চারপাশে ছড়িয়ে অগুনতি মানুষের নিথর দেহ।
শ্মশানস্তব্ধতা সে দিন থেকেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শিব-পুরীতে। আগামিকাল খালি চলবে চিতা।
প্রায় ছ’শো মানুষের চিতা, বিশ্বাসের চিতা। |
|
|
|
|
|