বাড়ল রাজনীতির কাজিয়া
দেশে ফিরেই দুর্গত দেবভূমিতে রাহুল
ত্তরাখণ্ডে বিপর্যয়ের পর গত সাত দিনেও তাঁর দেখা না মেলায় লাগাতার প্রশ্ন তুলছিলেন বিরোধীরা। গত কাল রাতে দিল্লি ফিরেই আজ দেরাদুন ছুটলেন রাহুল গাঁধী। তার আগে কংগ্রেস ও যুব কংগ্রেসের সদর দফতর থেকে সনিয়া-রাহুলের উপস্থিতিতে শতাধিক ট্রাক বোঝাই ত্রাণসামগ্রীও পাঠানো হল উত্তরাখণ্ডে।
কিন্তু এতেও কি মুখ বন্ধ করা গেল বিরোধীদের? বরং আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে আরও তীব্র হয়ে উঠল কংগ্রেস-বিজেপির তরজা। রাহুলের উত্তরাখণ্ড যাওয়া নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, মোদী-জ্বরে আক্রান্ত কংগ্রেস। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর চাপেই উত্তরাখণ্ড সফরে গেলেন রাহুল। কংগ্রেসও এ দিন তেড়েফুঁড়ে নামল বিজেপি-র প্রচারের জবাব দিতে।
হড়পা বান ও ধসে বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ডকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস-বিজেপি-র এই চাপানউতোর প্রত্যাশিতই। কারণ, হিমালয়ের কোলে এই শৈল রাজ্যের সঙ্গে হিন্দু আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে পর্যটনের সুবাদে আগ্রহ রয়েছে গোটা দেশের মানুষের। সেই আবেগ ও আগ্রহকে বিজেপি যে ব্যবহার করতে চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক। লোকসভা ভোটে দলের প্রচার কমিটির দায়িত্ব পেয়ে মোদী সেটাই করতে চেয়েছেন। এক দিকে তাঁর অনুগামী, বিজেপি-র মুখপাত্ররা রাহুলের অনুপস্থিতি এবং ত্রাণ বিলি ও উদ্ধারকাজে অব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অন্য দিকে মোদী নিজে দেরাদুনে পৌঁছে আটকে পড়া গুজরাতি পর্যটকদের বাড়ি ফেরাতে তৎপরতা দেখাতে চেয়েছেন।
উত্তরাখণ্ডে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর অনুষ্ঠানে সনিয়া-রাহুল। ছবি: পিটিআই
এই অবস্থায় রাহুলের অনুপস্থিতি নিয়ে কিছুটা চাপেই ছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু দেশে ফিরে সেই ক্ষত মেরামতে আজ সক্রিয় হন তিনি। দেরাদুনে পৌঁছেই উদ্ধারকাজের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য প্রশাসন ও সেনাকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, দেশে না থাকলেও তিনি বিদেশ থেকেই ত্রাণ ও উদ্ধারের ব্যাপারে নজর রাখছিলেন। এবং তাঁর নির্দেশেই আজ ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়, উত্তরাখণ্ড সফরে যান মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ।
রাহুলের অনুপস্থিতি নিয়ে গত ক’দিন সমানে কটাক্ষ করে গিয়েছে বিজেপি। রাহুল উত্তরাখণ্ডে পৌঁছনোর পর কংগ্রেস এ বার পাল্টা আক্রমণে। বিজেপি-র তরফে প্রচার করা হয়েছিল যে, গত শনিবার এক দিনেই নাকি ১৫ হাজার পর্যটককে উদ্ধার করে আমদাবাদে ফেরত পাঠিয়েছেন মোদী। এই প্রচার কংগ্রেসের মতে ফানুস-মাত্র। এবং তা চুপসে দিতেই কংগ্রেস মুখপাত্র রেণুকা চৌধুরি আজ বলেন, “বিজেপি দাবি করছে, মোদী নাকি এক দিনে ১৫ হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছেন। কিন্তু মোদী উদ্ধার করলেন কোথায়? উদ্ধার তো করল সেনাবাহিনী! আর এক দিনে ১৫ হাজার মানুষকে ফেরত পাঠানোর গল্পও একেবারে বানানো। কিছু মানুষ রয়েছেন যাঁরা সবেতেই কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেন।” মোদীর অতীত নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি রেণুকা। তাঁর কথায়, “গোধরা দাঙ্গার সময়েও মোদী কিছু মানুষকে বাঁচাতে পারতেন। কেন তা করেননি তখন?”
গত কাল বিজেপি সূত্র থেকে এমনও বলা হচ্ছিল যে, কেদারনাথ মন্দিরে সংস্কারের ভার নিতে চান মোদী। জবাবে আজ কংগ্রেস সূত্রে বলা হয়, উত্তরাখণ্ডের জন্য অন্য রাজ্য কিছু করতে চাইলে তা কেন্দ্রের মাধ্যমেই করতে হবে। কংগ্রেসের তরফে এই অভিযোগও তোলা হচ্ছে যে, উত্তরাখণ্ডে আগে বিজেপি সরকার ছিল। তখন পরিবেশ সংক্রান্ত বিধি মানার জন্য রাজ্য সরকারকে বারবার সতর্ক করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু বিজেপি সরকার তা শোনেনি।
কংগ্রেসের এই আক্রমণের মধ্যেইবিজেপি আজ রাজনৈতিক ভাবে রাহুলের মোকাবিলায় মাঠে নামিয়েছে, গাঁধী পরিবারের আর এক তরুণ নেতা বরুণকে। লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারকে একটি চিঠি দিয়ে বরুণ আজ বলেন, “সব সাংসদের তিন মাসের বেতন দিয়ে একটি ত্রাণ তহবিল গড়া যায় কিনা, তা বিবেচনা করা হোক। তা ছাড়া সাংসদদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকাও উত্তরাখণ্ডের পুনর্গঠনে ব্যবহার করা যায় কিনা তা-ও বিবেচনা করা যেতে পারে। অতীতে এ রকম হয়নি ঠিকই, তবে এ বার একজোট হয়ে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলায় নামা যেতেই পারে।”
এ দিন বিজেপি মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকরের নিশানায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, নরেন্দ্র মোদী যখন উত্তরাখণ্ড সফরে গিয়েছিলেন তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ভিভিআইপি-রা এলে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ ব্যাহত হয়। তবে রাহুলকে কেন আজ সেখানে যেতে দেওয়া হল? প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে আক্রমণ করে জাভড়েকরের মন্তব্য, “পশ্চিমের কোনও দেশে, সামান্য দুর্ঘটনা ঘটলেও দেশবাসীকে সম্বোধন করে রাষ্ট্রনেতারা বক্তৃতা দেন, আবেদন রাখেন জাতির উদ্দেশে। প্রধানমন্ত্রী এখনও তেমন কিছুই করলেন না। আসলে কংগ্রেস এতটাই মোদী জ্বরে আক্রান্ত যে আর কিছুই তারা ভাবতে পারছে না।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.