বদ্রীনাথে বাঙালিরা
ভোগেও টান, খিদে নিয়ে দিন গুজরান
ছোট্ট একটি জনপদে আটকে ৯-১০ হাজার তীর্থযাত্রী। আর সেই দুর্গতদের খাবার বলতে মন্দিরের ভোগ। দুপুর-রাতে সেই ভোগের ভাগ নিতেই বেপরোয়া হয়ে উঠছেন ক্ষুধার্ত মানুষগুলো।
ছবিটা বদ্রীনাথের। এবং আটকে পড়া তীর্থযাত্রীদের অনেকেই এ রাজ্যের বাসিন্দা। বদ্রীনাথ থেকে শহরে ফেরার পর কয়েক জন জানিয়েছেন, ভোগ নেওয়ার কাড়াকাড়িতে না পেরে উঠে কার্যত খালি পেটেই দিন কাটাচ্ছেন অনেক বাঙালি পর্যটক।
আটকে পড়া পর্যটকদের এক জন শহরের একটি পর্যটন সংস্থার কর্মী অজয় ঘোষ। গত এগারো দিন ধরে বদ্রীনাথেই রয়েছেন তিনি। সোমবার সেখান থেকেই ফোনে জানান, এ দিন বিকেল থেকেই কনকনে ঠান্ডা, কুয়াশায় ঢেকেছে আশপাশের এলাকা। বৃষ্টির নামার আশঙ্কাও রয়েছে। তার মধ্যেই খোলা আকাশের থাকতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।
অজয়বাবু বলেন, “হেঁটে নীচে নামার রাস্তা উধাও। হেলিকপ্টারের সংখ্যাও খুব কম। কবে যে সবাই বাড়ি ফিরতে পারব জানি না।” তিনি জানান, খাবারের সমস্যাটাই সবচেয়ে বেশি। মন্দিরের লাইনে দাঁড়ানোই যাচ্ছে না। চাল, টুকটাক সব্জি রয়েছে। অনেক অপেক্ষার পর রবিবারই অজয়বাবুদের দলের ৯ জন হেলিকপ্টারে নীচে নামার সুযোগ পেয়েছেন।
অনেকে ফিরেও এসেছেন। যেমন এক জন হিন্দমোটরের বাসিন্দা বিনোদকুমার মন্ত্রী। তিনি ফিরলেও হিমালয়ের ‘তাণ্ডবে’ তাঁর চোখের সামনেই ভেসে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী ও আরও ১৬ জন আত্মীয়।
কেদারনাথে মন্দিরের কাছেই একটি ধর্মশালায় উঠেছিলেন বিনোদবাবুরা। ১৬ জুন দুপুরেই নেমে যাওয়ার কথা। কিন্তু বৃষ্টিতে আটকে পড়েন তাঁরা। বিনোদবাবু বলেন, “রাতের খাবার খেয়ে সবাই মিলে একটা ঘরের বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে একটা আওয়াজ হল। ধর্মশালাটা কেঁপে উঠল। বুঝতে পারিনি কয়েকটা জায়গা তত ক্ষণে ধুলিসাৎ!” রাতটা কোনও মতে কাটিয়ে ভোরেই কেদারনাথ ছাড়বেন বলে ঠিক করেন বিনোদবাবুররা। “পরদিন ভোর সাড়ে ৬টা নাগাদ চায়ের দোকানের একটা লোককে ঘরে চা দিয়ে যেতে বললাম। হঠাৎ দেখি ও দৌড়ে পালাচ্ছে। প্রচণ্ড আওয়াজ পেয়ে জানালা দিয়ে দেখি, বড় বড় পাথর নিয়ে পাহাড় দিয়ে মন্দিরের দিকে জলস্রোত নেমে আসছে।”
চোখের সামনেই আদি শঙ্করাচার্যের সমাধি, ভারত সেবাশ্রম গুড়িয়ে যেতে দেখেন বিনোদবাবু। আতঙ্কে ধর্মশালার দোতলার ওই ঘরের দরজা চৌকাঠ ধরে রেখেছিলেন তিনি। অন্যরা আতঙ্কে বিছানার উপরে উঠে যান। ততক্ষণে ১৫ ফুট উঁচু ওই জলস্রোত ঘরে ঢুকে পড়েছে। বিনোদবাবু বলেন, “পাথরের আঘাতে নিমেষে ওই ঘরের একটা অংশ ভেঙে বিছানা-সমেত ভেসে চলে গেল। কানে এল পরিজনদের আর্তনাদ।”
বাড়ি ফিরেও সেই আওয়াজটা বিনোদবাবুর কানে ভাসছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.