|
|
|
|
লালুও থাকুন, প্রস্তাব সনিয়ার |
কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার পথে নীতীশ
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
এনডিএ ছাড়ার পরে ২০১৪-র লোকসভা ভোটে ইউপিএ-র সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে চলেছেন নীতীশ কুমার। প্রকাশ্যে ঘোষণা করা না-হলেও তলায় তলায় কংগ্রেসের সঙ্গে সন্ধিস্থাপনের কাজটি সেরে ফেলেছে জেডিইউ। আসন সমঝোতার ব্যাপারে দূত মারফত কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে আশ্বাস দিয়েছেন নীতীশ কুমার নিজেই।
বিজেপি-তে নরেন্দ্র মোদীর উত্থানের পরে এনডিএ ছেড়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। এর পর তিনি কী করেন, তা নিয়ে কৌতূহল দেশ জুড়ে। বিজেপি এবং আরএসএসের শীর্ষ নেতৃত্বের একটা অংশ নীতীশকে পুরোপুরি দূরে ঠেলে দিতে চান না। অরুণ জেটলির মতো নেতারা তাঁকে এনডিএ-তে ফিরিয়ে আনার পক্ষপাতী। এখনই না-হলেও লোকসভা ভোটের পরে। কিন্তু গত কয়েক দিনে দু’পক্ষের মধ্যে তিক্ততা ক্রমেই বেড়েছে। নীতীশকে আক্রমণ করেছেন খোদ বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। নীতীশ আজ পাল্টা বলেছেন, “অনেকে আমার নামে অনেক কিছু বলছেন। আমি কিন্তু এখনও মুখ খুলিনি। আমি মুখ খুললে অনেকেই অসুবিধায় পড়বেন।”
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকেছেন নীতীশ। আস্থা ভোটে আগ বাড়িয়ে তাঁকে সমর্থন করে বার্তা দিয়েছে কংগ্রেসও। প্রকাশ্যে অবশ্য এই সমঝোতার কথা স্বীকার করছেন না জেডিইউ-এর কোনও নেতাই। দলের সভাপতি শারদ যাদব বলেছেন, “আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে নেই। ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে আছি। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা হয়নি।” নীতীশও বলেছেন, “কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া নিয়ে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি।” কংগ্রেস নেতাদের মতে, ভবিষ্যতে এক সঙ্গে চলার পথ যে খোলা রয়েছে, সেটা এই ‘এখনও’ শব্দটির মধ্যে দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন নীতীশ।
নীতীশের তরফে ইতিবাচক বার্তা পাওয়ার পরে আহমেদ পটেল-সহ কংগ্রেসের কিছু নেতার মাধ্যমে তাঁকে একটি প্রস্তাব দিয়েছেন সনিয়া। সেটা হল, কংগ্রেসের পাশাপাশি ইউপিএ-র দুই সমর্থক লালু প্রসাদ ও রামবিলাস পাসোয়ানের সঙ্গেও পরোক্ষে আসন সমঝোতা করুন নীতীশ। কিন্তু বিহারে জেডিইউ-এর অন্যতম প্রতিপক্ষ লালুর দল আরজেডি। বিহারের মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে লালুকে সঙ্গে রাখা ভাল। কারণ, বিহারে ব্রাহ্মণ, রাজপুত, কায়স্থ মিলিয়ে ১৫ শতাংশ ভোট দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি-র দখলে। লালুর হাতে যে যাদব ভোট রয়েছে, তাতে নীতীশের পক্ষে ভাগ বসানো কঠিন। আবার সংখ্যালঘু ভোট বিজেপি ছাড়া অন্য সব দলের মধ্যেই ভাগাভাগি হবে। ফলে শুধু কুর্মি এবং পিছড়ে বর্গের ভোটের ভরসায় এত বড় ভোটে লড়াটা নীতীশের পক্ষে ঝুঁকির হয়ে যাবে। লালুকে সঙ্গে রাখলে সামগ্রিক ভাবে বিস্তৃত হবে ভোটব্যাঙ্কের ভিত্তি।
লালু-প্রশ্নে এখনও মতৈক্য না-হলেও কংগ্রেসের সঙ্গে চলার ব্যাপারে নীতীশের অঙ্কটা কী? বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, মোদীকে সামনে রেখেই যে বিজেপি এ বারের নির্বাচনে লড়বে, সেটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। কোনও আপত্তি, বিদ্রোহের মুখেই তারা পিছিয়ে আসবে না। এ দিকে নীতীশ তাঁর মোদী-বিরোধিতা এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন যে, তাঁর পক্ষেও আর পিছিয়ে এসে বিজেপি-র সঙ্গে সমঝোতা করা সম্ভব নয়।
কিন্তু বিহারের রাজনীতিতে জাতপাতের সমীকরণ বলছে, একলা চলার নীতি নিলে জেডিইউ-এর অবস্থা কাহিল হতে পারে। সেই কারণেই কংগ্রেসকে বাছছেন নীতীশ। মূলত দু’টি লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে।
প্রথম লক্ষ্য সম্পর্কে নীতীশের ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা তাঁর ষোলো আনা রয়েছে। নীতীশের হিসেব, মোদীকে সামনে রেখে বিজেপি যদি বিহার ও উত্তরপ্রদেশে আসন বাড়াতে সক্ষম হয়ও, তবু সব মিলিয়ে তাদের পক্ষে ১৫০-র বেশি সাংসদ পাওয়া কঠিন। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসের আসন যদি কমে, তা হলে ইউপিএ এবং আঞ্চলিক দলগুলির সমর্থন নিয়ে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
নীতীশের দ্বিতীয় লক্ষ্য, কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে বিহারের জন্য বাড়তি কিছু আর্থিক সুবিধা আদায় করা। আজ রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্রের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নীতীশ বলেন, “ইউপিএ সরকারের কথামতো রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। ওই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে আমাদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার কথা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম এই আশ্বাস দিয়েছেন। আমার দাবি, দ্রুত ওই কমিটি রিপোর্ট দিক এবং কেন্দ্র দ্রুত সিদ্ধান্ত নিক।” জেডিইউ-এর তরফে দলীয় সাংসদ নন্দকিশোর সিংহকে চিদম্বরমের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
কিন্তু নীতীশ যদি কংগ্রেসের সঙ্গে যান, তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত ফেডেরাল ফ্রন্টের কী হবে? মমতা চাইছেন, কংগ্রেস এবং বিজেপি দুই প্রধান দলের সঙ্গে দূরত্ব রেখে আঞ্চলিক দলগুলির জোট গড়ার কথা এখনই ঘোষণা করা হোক। ভোটের ফল বেরানোর পরে জোট গড়ে লাভ হবে না বলেই তাঁর মত। নীতীশ ফেডেরাল ফ্রন্টের ব্যাপারে ইতিবাচক হলেও কংগ্রেসকে ছাড়া ভোটে লড়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। কেউ কেউ তাঁকে বলছেন, এক দিকে ফেডেরাল ফ্রন্ট গড়ে অন্য দিকে কংগ্রেসের সঙ্গে পরোক্ষে সমঝোতা করতে। নীতীশ নিজে অবশ্য আজ বলেন, “আস্থা ভোটে জেতার পরে মমতাজি আমায় ফোন করেছিলেন। তাঁকে আমি বলেছি, রাজনৈতিক জোট অনেক পরের বিষয়। এখন আমরা রাজ্যের দাবিগুলি নিয়ে একসঙ্গে লড়াই করতেই পারি।” |
পুরনো খবর: কংগ্রেস হইতে সাবধান,
নীতীশকে বার্তা রাজনাথের |
|
|
|
|
|