বৃষ্টি-ধসে থমকে উদ্ধার, আতঙ্কে সেনাবাহিনী
ক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে আবহবিদদের গণনা। বৃষ্টি নেমেছিল কালই। পূর্বাভাস মেনে তীব্রতাও বাড়ল আজ। তাই প্রলয়ের আশঙ্কায় বুক কাঁপছে আটকে পড়া পর্যটকদের। প্রিয়জনদের খোঁজে আসা মানুষগুলোর জন্য সেনাবাহিনীর ভয়ার্ত ঘোষণা, দয়া করে ফিরে যান।
এখনও অন্তত দশ হাজার মানুষ আটকে রয়েছেন বানভাসি উত্তরাখণ্ডে। গত কাল থেকেই বৃষ্টি অগ্রাহ্য করে চলার উপযোগী একটা রাস্তা তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছিল আইটিবিপি। দৃশ্যমানতা কম থাকলে কপ্টারে উদ্ধারকাজ অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। তাই এই উদ্যোগ। কিন্তু ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। থমকে গেল কাজ। ফের ধস নামল রুদ্রপ্রয়াগ-বদ্রীনাথের পথে।
স্বস্তির ফেরা। আমদাবাদে। ছবি: রয়টার্স
কত লোক আটকে, কতই বা মৃত, এক সপ্তাহ পেরিয়েও সে ছবিটা স্পষ্ট নয়। আজ দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে বলেন, মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়াতে পারে। অথচ, গত কালই উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল, “অন্তত ৫০০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।” ধন্দের এখানেই শেষ নয়। গত কালই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, উদ্ধার কাজ শেষ করতে দিন পনেরো লেগে যাবে। আজ মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা বললেন, “২-৩ দিনেই হয়ে যাবে।”
মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বললেন, “কেদারনাথে আটকে পড়া প্রায় সব পর্যটককেই সরিয়ে আনা গিয়েছে।” যদিও স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, জঙ্গলচটিতে এখনও আটকে রয়েছে বহু লোক। জঙ্গলে মোড়া পাহাড়ি এলাকাটায় হেলিকপ্টার নামা এক রকম অসম্ভব। তাই উদ্ধারকাজেও গতি আসছে না। আজ সেনা, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা এবং আইটিবিপি একসঙ্গে চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে জঙ্গলগুলোয়।
হাঁটাপথ বন্ধ ধসে, আর আকাশপথ মেঘে! গত ক’দিন ধরে ৩০-৪০টা কপ্টার টানা কাজ করে যাচ্ছিল। আজ পুরোপুরি থমকে। হেলিপ্যাডের ত্রাণশিবিরে অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল বড় বড় চপাড়গুলোকে। ধস নেমে ফাটা ও সোনপ্রয়াগ হেলিপ্যাডদু’টো কার্যত বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। যেটুকু কাজ করছে, তা ওই ছ’আসনের ছোট চপারগুলো। বদ্রীনাথে অন্তত পাঁচ হাজার পর্যটক আটকে ছিলেন। মাত্র ১৬৪ জনকে জোশীমঠে সরিয়ে আনা গিয়েছে। এ ছাড়া সেনাদের দিনভর পরিশ্রমের পর চামোলি-গঙ্গোত্রী মিলিয়ে মাত্র হাজার জনকে উদ্ধার করা গিয়েছে।
তুলনায় রুদ্রপ্রয়াগের এসপি বীরেন্দ্রজিৎ সিংহের মুখে শোনা গেল খানিক স্বস্তির কথা। তিনি বললেন, “আমার লোকেরা আজ দারুণ কাজ করেছেন। ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষকে রক্ষা করাই না, তাঁদের নিরাপদে বাঁচিয়েও রেখেছে ওঁরা।” তবে পর মুহূর্তে ঝরে পড়ল আশঙ্কা “প্রিয়জনকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে কত লোক এসেছেন। গত ক’দিন ধরে পাগলের মতো এ দরজায়-সে দরজায় হত্যে দিয়ে পড়ে রয়েছেন। দয়া করে ফিরে যান।” বীরেন্দ্রজিতের একটাই ভয় ফের যদি বাঁধভাঙা বৃষ্টি নামে, ফুলে ওঠে অলকানন্দার জল। কী হবে ওই লোকগুলোর?
মৌসম ভবনের আশঙ্কা আগামী তিন দিন উত্তরাখণ্ডের কিছু অংশে ভারী বৃষ্টি হবে। তবে আবহবিদদের এই ভূমিকায় মোটেই সন্তুষ্ট নয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর। তাদের বক্তব্য, “আবহবিজ্ঞানীরা যদি ঠিকঠাক কাজ করতেন, তা হলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিটা এড়ানো যেত। ওদের আরও দায়িত্ব নেওয়া উচিত। এ কাজে আর লাভ কী?”
প্রতিদিনের মতো আজও লোকের মুখে ঘুরছে নানা কাহিনি। কেদারের মন্দিরের চাতালে মিলেছে দু’টো দেহ। জড়াজড়ি করে পড়ে ছিল। এক জন মাঝবয়সী, আর একটি শিশু। কেদারনাথ-বদ্রীনাথ মন্দির কমিটির চেয়ারম্যান গনেশ গোড়িয়াল বলেন, “ছেলেকে বাঁচাতে হয়তো দু’হাতে জাপটে ধরেছিলেন শেষ মুহূর্তে।” দু’হাত দূরে পড়েছিল এক মহিলার নিথর দেহ। “হয়তো ওঁর স্ত্রী”, অস্ফুটে বলে উঠলেন গোড়িয়াল।
মন্দিরের চাতালে যখন মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন বাবা-ছেলে, গর্ভগৃহে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন বছর ছত্রিশের বিজেন্দ্র সিংহ নেগি। মন্দিরের ঘণ্টা ধরে ঝুলে থেকেছেন টানা ন’ঘণ্টা। গলা জল, পায়ের তলায় মৃতের সারি। এখন আর কথা বলার মতো অবস্থায় নেই বিজেন্দ্র। হাতে ঘা হয়ে গিয়েছে। তাঁর আত্মীয়ের মুখে শোনা গেল সে দিনের জীবন-মৃত্যুর যুদ্ধ-বর্ণনা। বললেন, “সকাল সাতটা থেকে বিকেল চারটে, মন্দিরের ঘণ্টা ধরে ঝুলছিলেন বিজেন্দ্র। গায়ের উপর আছড়ে পড়ছিল বন্যার জল। পরনের জামাটা জলের তোড়ে ছিন্নভিন্ন। চারপাশে ভেসে যাচ্ছিল একের পর এক দেহ। ক্লান্ত শরীরটাকে ধরে রাখতে পা রেখেছিলেন মৃতদেহগুলোর উপর।”
কী ভাবে পারলেন? উত্তর জানা নেই বিজেন্দ্রর।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.