রাজনীতিতেও ঘোলা গঙ্গার জল
মোদীর সফর আটকে দিলেন শিন্দে
ত্তরাখণ্ডে বন্যা বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে দেখতে নরেন্দ্র মোদীকে অনুমতি দিলেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে।
বিজেপি প্রশ্ন তুলল, এই জাতীয় বিপর্যয়ের পরে কোথায় গেলেন কংগ্রেসের ভবিষ্যতের নেতা রাহুল গাঁধী? বিপর্যয়ের তীব্রতা বুঝতে কেন দেরি করল কংগ্রেস সরকার?
কংগ্রেসের পাল্টা প্রশ্ন, উত্তরপ্রদেশ যেখানে ত্রাণের জন্য দিয়েছে ২৫ কোটি, হরিয়ানা-মহারাষ্ট্র ১০ কোটি, এমনকী গোয়ার মতো ছোট রাজ্যও দিয়েছে ৫ কোটি, সেখানে গুজরাতের দান সাকুল্যে ২ কোটি টাকা কেন?
এত বড় বিপর্যয়ের পরে রাজনীতিতে তৈরি হওয়া এই ঘোলা জল নিয়ে আজ প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মহল। বলা হচ্ছে, এটা কি পরস্পরের দোষারোপের সময়, নাকি একসঙ্গে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসার সময়?
কিন্তু এই প্রশ্ন আদৌ হালে জল পাবে কি না সন্দেহ। কারণ, কংগ্রেস-বিজেপির মধ্যে এই তরজা আগামী দিনে তীব্রতর হবে বলেই ইঙ্গিত মিলেছে এর মধ্যে।
দেরাদুনে মোদী। যেতে পারলেন না বিপর্যস্ত এলাকায়। ছবি: পিটিআই
উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয়ের পর থেকেই স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রশ্ন উঠছে। বিপর্যয়কে ‘ম্যান মেড’ বলেও কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। তা থেকেই অশনিসঙ্কেত দেখতে শুরু করেছে কংগ্রেস। কেন না, বিজেপি এর মধ্যেই নরেন্দ্র মোদীকে লোকসভা ভোটে তাদের প্রচারের মুখ হিসেবে তুলে ধরেছে। তাতে ধর্মীয় মেরুকরণের আশঙ্কা রয়েছে। তার ওপর উত্তরাখণ্ডে চার ধাম যাত্রা হিন্দু আবেগের সঙ্গে জড়িত। কংগ্রেসের আশঙ্কা, ত্রাণ ও উদ্ধারকাজের ত্রুটি নিয়ে কোনও নেতিবাচক প্রচার হলে তাদের রাজনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। বিজেপি-র তথাকথিত ‘হিন্দুত্বের পোস্টারবয়’ মোদী তা নিয়ে ধর্মীয় অসন্তোষ জাগিয়ে তুলতে পারেন। তাই, বিপর্যয়ের পরপরই কপ্টারে করে বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন সনিয়া-মনমোহন। সেনা নামিয়ে দ্রুত ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজ তদারকিতেও নেমে পড়েন। মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক ডেকে এক হাজার কোটি টাকার সাহায্য ঘোষণা করা হয়। এবং কেন্দ্রের এই তৎপরতা দেশের সামনে তুলে ধরতে দু’বেলা দফায় দফায় সাংবাদিক বৈঠকও করা হচ্ছে।
একে কংগ্রেসের ‘পারসেপশন ম্যানেজমেন্ট’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন অনেকে। শুধু তাই নয়, কাল সকালে ১০ জনপথের সামনে থেকে বেশ কিছু ট্রাক বোঝাই ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে উত্তরাখণ্ড যাচ্ছেন অম্বিকা সোনি ও মোতিলাল ভোরা। আবার কংগ্রেসের একটি সূত্র বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বিজয় বহুগুণাকে সরানোও হতে পারে।
কিন্তু কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলেছে রাহুলের অনুপস্থিতি। যে রাহুল ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হামলায় কংগ্রেসের ২৫ জন নেতা খুন হওয়ার খবর পেয়ে মাঝরাতেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন, পাকিস্তানের জেলে সর্বজিৎ সিংহের মৃত্যুর পর তাঁর শেষকৃত্যে যোগ দিতে পঞ্জাবে চলে গিয়েছিলেন, তাঁকে উত্তরাখণ্ডে কেন এক বারও দেখা গেল না, এই সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে কংগ্রেসকে। যদিও কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, রাহুল বিলেতে রয়েছেন। তাই আসতে পারেননি। কিন্তু সেখান থেকেই ফোনে এবং ই-মেলে প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর নজর রাখছেন তিনি। তবু এই সুযোগ হাতছাড়া করছে না বিজেপি। দলের মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখি বলেন, “রাহুলের দেখা নেই কেন, জবাব দিক কংগ্রেস।”
শুধু তাই নয়, বিপর্যয়ের পর উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা তিন দিন ধরে দিল্লিতে বসে কী করছিলেন, তা নিয়েও বিজেপি প্রশ্ন তুলছে। কংগ্রেসের অস্বস্তি বাড়িয়ে এর মধ্যে আবার টিম রাহুলের দুই নেতা, প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর পি সিংহও দেশের বাইরে ছুটি কাটাচ্ছেন।
নীচে খরস্রোতা নদী। তার উপর দিয়ে বালককে এ পারে নিয়ে আসছে সেনাবাহিনী। ছবি: রয়টার্স
এই যখন পরিস্থিতি, তখন গত রাতেই দেরাদুনে পৌঁছে যান নরেন্দ্র মোদী। আজ গুজরাতের প্রায় ১৩৫ জন তীর্থযাত্রীকে সরকারি খরচে বেসরকারি বিমানে দেরাদুন থেকে আমদাবাদে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তিনি। সেই সঙ্গে উত্তরাখণ্ডে কবলিত এলাকা ঘুরে দেখারও প্রস্তুতি নেন।
এর পরেই সুশীলকুমার শিন্দে আজ দুপুরে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর নাম না করে জানিয়ে দেন, “উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া কোনও ভিআইপিকেই বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে দেখার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, তাতে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ ব্যাহত হতে পারে।” সুশীল নিজেও এ দিন দেরাদুন গিয়েছিলেন। তাঁর এই ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই চটেছে বিজেপি। যদিও মোদী হেলিকপ্টারে চেপে বিধ্বস্ত এলাকা দেখে এসেছেন। কংগ্রেসও আবার রাজ বব্বরের মতো মুখপাত্রদের দিয়ে ত্রাণের জন্য গুজরাতের দেওয়া ২ কোটি টাকা নিয়ে প্রশ্ন ছেড়ে দিয়েছে বাজারে।
কংগ্রেসের এই আক্রমণে বিজেপি আবার কিছুটা অস্বস্তিতে। তা হলে কি মোদী চুপ করে যাবেন? কংগ্রেস কিন্তু তা মনে করছে না। বরং তাঁর মোকাবিলার জন্য সজাগ থাকতে চাইছে ২৪ আকবর রোড।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.