বিশ্বভারতীর ‘আনসাং হিরো’। বর্তমান উপাচার্য মাত্র কয়েকদিন আগেই যাঁর উদ্দেশ্যে খেদ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘প্রাপ্য সম্মান পাননি’। যাবতীয় বিতর্ককে দূরে রেখে সেই রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানাতে উদ্যোগী হল বিশ্বভারতী। একটি আন্তর্জাতিক আলোচনাসভা আয়োজন করার পরে এ বার কবিপুত্রকে নিয়ে একটি বড় মাপের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চলেছেন তাঁরা। আগামী ২৮ জুন সেই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে শান্তিনিকেতনে আসছেন মাননীয় রাজ্যপাল তথা বিশ্বভারতীর প্রধান এম কে নারায়ণন।
কী থাকছে সেই অনুষ্ঠানে?
বিশ্বভারতীর মুখপাত্র অধ্যাপক অমৃত সেন বলেন, “রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি ‘গুহাঘর’কে ঢেলে সাজিয়ে ‘রথীন্দ্র প্রদর্শশালা’ করার উদ্যোগ নিয়েছেন রবীন্দ্রভবন কর্তৃপক্ষ। তাঁর ব্যবহার করা নানা জিনিস, তাঁর হাতে তৈরি নানা শিল্পকর্ম থাকবে ওই প্রদর্শশালায়। ওই দিন প্রদর্শশালা উদ্বোধনের পাশাপাশি বিশেষ প্রদর্শনীও থাকছে। এ ছাড়া ‘রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর: দ্য আনসাং হিরো’ নামে একটি বইও প্রকাশিত হতে চলেছে।” রবীন্দ্রভবন ও সঙ্গীতভবনের যৌথ উদ্যোগে লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। গোটা অনুষ্ঠানকে ঘিরে এখন বিশ্বভারতীতে কার্যত সাজো সাজো রব। |
উদ্বোধন হবে এই প্রদর্শনী। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। |
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন সকাল ১১টা নাগাদ রবীন্দ্রভবনে পৌঁছবেন রাজ্যপাল। বিচিত্রাকক্ষে তিনিই মূল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠান উপলক্ষে দিনভর থাকছে একটি বিশেষ প্রদর্শশালা। রথীন্দ্রনাথের হাতে আঁকা স্কেচ, দুষ্প্রাপ্য চিত্রকলা এবং রবীন্দ্র ভবনের আর্কাইভ থেকে নানা বিরল ও দুষ্প্রাপ্য আলোকচিত্র নিয়ে প্রায় ৫৩টি জিনিস স্থান পেয়েছে ওই প্রদর্শনীতে। এ ছাড়া প্রকাশিত হবে রবীন্দ্রভবনের অধিকর্তা তপতী মুখোপাধ্যায় ও অধ্যাপক অমৃত সেন সম্পাদিত ‘রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর: দ্য আনসাং হিরো’ শিরোনামে একটি দ্বিভাষিক বই। বইটি তাঁরা তিনটি বিভাগে সাজিয়েছেন। প্রথম ভাগে থাকছে রথীন্দ্রনাথের আত্মজীবনী, অনুবাদ চর্চা, বিজ্ঞান ভাবনা, কারু ও চিত্রশিল্প ভাবনা এবং পরিবেশ ভাবনা নিয়ে লেখা। যেখানে লিখেছেন উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত-সহ প্রমুখ বিশিষ্ট জন। দ্বিতীয় ভাগ মূলত রথীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানাজনের স্মৃতিচারণ। স্মৃতিচারণ করেছেন কালীমোহন ঘোষ, স্ট্রেলা ক্যামরিশ, রথীন্দ্রনাথের নাতি সুনন্দন লালা, ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুপ্রিয় ঠাকুরের মতো বিশিষ্টজন। তৃতীয় ভাগ মূলত রথীন্দ্র-সাহিত্য-সৃষ্টি। কবিপুত্রের লেখা কবিতা, গল্পের পাশাপাশি সেখানে পাঠক পাবেন বিশ্বভারতীর প্রথম উপাচার্য হিসেবে তাঁর ইংরাজি ভাষণ, চারটি পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপি ও বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য আলোকচিত্রও। |
প্রকাশিত হবে এই বইটিও। রবীন্দ্র ভবনের সৌজন্যে প্রাপ্ত |
মূল অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের জন্যও থাকছে চমক। ওই দিন বিকেলে তাঁরা অডিও ট্র্যাকে শুনবেন রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেতার বাজানো এবং মায়ের মৃত্যুতে তাঁর স্মৃতিচারণ।
উদ্যোগটা কিন্তু শুরু হয়েছিল কবিপুত্রের বেশ কিছু জিনিসপত্র ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে বিশ্বভারতীতে ফেরানোর দিন থেকেই। এরপরেই রথীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক আলোচনায়সভার আয়োজন করা হয়। যেখানে প্রকাশ্যে খোদ সুশান্তবাবুই মন্তব্য করেন, “রথীন্দ্রনাথ মনের দুঃখে শান্তিনিকেতন থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে চলে যাওয়ার পরে বিশ্বভারতী আর তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি। বিশ্বভারতীর প্রতি যে মানুষটার এত বড় অবদান, তাঁর প্রতি আক্ষরিক অর্থে অবিচারই করা হয়েছিল।” বিশ্বভারতীর বর্তমান উদ্যোগ সেই ক্ষতেই খানিকটা মলম লাগাতে সক্ষম হবে বলে বিশ্বভারতীর বিভিন্ন মহলের মত। আর এই ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ শুধু বিশ্বভারতীই নয়, বাইরের জগতের কাছেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন রবীন্দ্রভবনের অধিকর্তা তপতীদেবীও।
|