চার মাসে প্রেসিডেন্সি থেকে সাত জন শিক্ষকের চলে যাওয়া নিয়ে তেমন ভাবিত নয় রাজ্য সরকার। তাদের মতে, এক বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে অধ্যাপকদের অন্যত্র চলে যাওয়ার ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। তবে প্রেসিডেন্সির পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের দাবি মেনে আপাতত চার কোটি ১০ লক্ষ টাকা দিচ্ছে রাজ্য। সোমবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মালবিকা সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পরে এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আর্থিক দিক থেকে সুরাহার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষামান উজ্জ্বলতর করার অঙ্গীকারও মিলেছে। যে-সব কৃতী অধ্যাপক মেন্টর গ্রুপের সদস্য, তাঁরা প্রেসিডেন্সিতে ক্লাস নিতে রাজি হয়েছেন।
বাংলা, পদার্থবিদ্যা, রাশিবিজ্ঞান, শারীরবিদ্যা ইত্যাদি বিভিন্ন বিভাগের সাত শিক্ষক প্রেসিডেন্সি ছেড়েছেন নানা কারণে। কেউ ব্যক্তিগত কারণে, কেউ বা বেতন নিয়ে গোলমালের জেরে, কেউ যথাযথ পরিকাঠামো ও গবেষণার সুযোগ না-পাওয়ায় ইস্তফা দিয়েছেন। শিক্ষক-ইস্তফার বিষয়ে উপাচার্য মালবিকা সরকারের কাছে খোঁজখবর নেন আচার্য-রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। উপাচার্যও বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন, বাড়তি বেতন, আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার সুযোগ না-দিলে ভাল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে রাখা যাবে না। |
বিকাশ ভবনে ব্রাত্য বসু ও মালবিকা সরকার। —নিজস্ব চিত্র |
সোমবার বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যবাবুর সঙ্গে দেখা করেন মালবিকাদেবী। সঙ্গে ছিলেন উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিৎ। পরে মালবিকাদেবী বলেন, “খুব ভাল বৈঠক হয়েছে। সরকার চার কোটি ১০ লক্ষ টাকা অনুদান দেবে। ওই টাকায় বেকার ল্যাবরেটরির উন্নয়ন, জীববিদ্যা বিভাগের জন্য পরিকাঠামো তৈরি, শিক্ষকদের বসার জায়গার উন্নতি করা যাবে।” কিন্তু রাজ্যের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তুলনায় প্রেসিডেন্সির শিক্ষকদের বাড়তি বেতনের ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হয়নি। ব্রাত্যবাবু অবশ্য বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্সির শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতনহার সম্ভব নয়।
সুগতবাবু জানান, গত ১০ বছরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক অন্যত্র গিয়েছেন। কত শিক্ষক চলে গিয়েছেন, তার তালিকা তৈরি হচ্ছে। তাঁর কথায়, “এটা ধারাবাহিক ঘটনা। কোনও বিশেষ পরিস্থিতি এর জন্য দায়ী নয়।” একই সুরে ব্রাত্যবাবু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপকদের ইস্তফার ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। প্রেসিডেন্সি থেকে যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের চার জন চাকরি ছেড়েছেন ব্যক্তিগত কারণে। দু’জন আশানুরূপ বেতন না-পাওয়ায়। এর সঙ্গে পরিকাঠামোর সম্পর্ক নেই।”
সরকার পর্যায়ক্রমে আরও অনুদান দেবে বলেই আশা করছেন প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য বলেন, “আস্তে আস্তে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হবে।” শিক্ষামন্ত্রী পরে বলেন, “উপাচার্য বৈঠকে জানান, দরকার ছ’কোটি। আপাতত চার কোটি ১০ লক্ষ টাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।”
পঠনপাঠনের মান বাড়াতে মেন্টর গ্রুপের সদস্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছেন প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ। ব্রাত্যবাবু বলেন, “ওঁরা তো সবাই কৃতী অধ্যাপক। ওঁরা পড়ালে ভাল হবে।” মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “উপাচার্যকে জানিয়েছি, সানন্দে ক্লাস নেব। হার্ভার্ডে অমর্ত্য সেন আর আমি কিছু যৌথ ক্লাস নিই। প্রযুক্তির সাহায্যে সেই ক্লাস যাতে সরাসরি প্রেসিডেন্সিতে দেখানো যায়, সেই চেষ্টাও করা হবে।”
|