সঙ্কট খাবার-পানীয় জলের
ফিরলেন জনা কয়েক, এখনও আটকে অন্তত ৫০০ বাঙালি
বিপর্যন্ত ভিন্ রাজ্য থেকে নিজের শহরে ফিরেও আতঙ্ক কাটেনি বড়বাজারের নবরতন দেবসারিয়ার। তীর্থে বেরিয়ে টানা চার দিন স্ত্রী, দুই শিশুপুত্র ও শ্যালিকাকে নিয়ে বদ্রীনাথের কাছে আটকে ছিলেন তাঁরা। গত ১৯ জুন প্রশাসন তাঁদের উদ্ধার করে। শনিবার দুন এক্সপ্রেসে হাওড়া পৌঁছনোর পরেও সেই চার দিনের স্মৃতি ভুলতে পারছেন না তাঁরা। একই অবস্থা উত্তরাখণ্ড থেকে ফেরা নন্দিতা ওঝা কিংবা নরেন্দ্র কুমারেরও।
তবু তো তাঁঁরা ফিরেছেন। কিন্তু এখনও এ রাজ্যের বহু পর্যটকই আটকে রয়েছেন উত্তরাখণ্ড-হিমাচল প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায়। মহাকরণ সূত্রের খবর, তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ্যের দুই মন্ত্রী স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এ দিনও কয়েক জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় আনা হয়েছে বলে খবর।
শনিবার বাঁকুড়ার খাতড়ায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উত্তরাখণ্ডে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। পাঁচশো-ছ’শো পরিবারকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তিনশো-সাড়ে তিনশো মানুষ এখনও সেখানে রয়ে গিয়েছেন। মদন আর রচপালকে বলেছি, সকলকে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন।” পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র জানান, উত্তরাখণ্ডে বদ্রীনাথ, গৌরীকুণ্ড, অগস্ত্য বা হিমাচল প্রদেশের কিন্নরের সাংলার মতো বেশ কয়েকটি জায়গায় এখনও এ রাজ্যের অনেকে আটকে আছেন। এঁদের সংখ্যা প্রায় ৫০০ হবে বলে তাঁর ধারণা।

অবশেষে ঘরে ফিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস। শনিবার হাওড়া স্টেশনে।—নিজস্ব চিত্র
এঁদের অনেকেই আপাতত ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন উদ্ধারকারী কপ্টারের আশায়। এমনই এক জন, কলকাতার বিশ্বরূপ রায়। তাঁর আত্মীয়া এবং হরিদ্বারের বাসিন্দা জয়িতা দত্তমিত্র জানিয়েছেন, বিশ্বরূপবাবু টানা তিন দিন লাইনে দাঁড়িয়েও হেলিকপ্টার পাননি। লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করতে করতেই হেলিকপ্টার ভর্তি হয়ে যায়। আটকে পড়া পর্যটকদের খাবার-পানীয় জল ফুরিয়ে আসছে। উত্তরাখণ্ড প্রশাসনের মুখপাত্রের অবশ্য দাবি, বদ্রীনাথ থেকে পর্যটকদের উদ্ধারের কাজ দ্রুত গতিতে শুরু হয়েছে। অসুস্থ ও বৃদ্ধদের-ই আগে উদ্ধার করা হচ্ছে।
বিপন্নরা অনেকেই কিন্তু প্রশাসনের ভরসায় পড়ে থাকতে নারাজ। ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই হেঁটে দুর্গম এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন। কেউ কেউ ১২-১৪ ঘণ্টা হেঁটে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছতে পেরেছেন। ট্রেকিংয়ে গিয়ে গৌরীকুণ্ডের কাছে আটকে পড়েন রাজ্যের অর্থ দফতরের অফিসার অনীক চট্টোপাধ্যায়-সহ ১৪ জনের একটি দল। তাঁরা নিজেরাই গঙ্গোত্রীর কাছে নেমে এসেছেন। যোগাযোগ করেছেন প্রশাসন-পরিজনদের সঙ্গেও। ওই দলের সদস্য সব্যসাচী প্রামাণিকের এক আত্মীয় জানিয়েছেন, আজ, রবিবার সরকারি হেলিকপ্টারে তাঁদের উদ্ধার করার কথা।
কিন্তু সবার পরিস্থিতি অনীকবাবুদের মতো নয়। আটকে পড়া বহু পর্যটকের সঙ্গেই তাঁদের পরিজনেরা যোগাযোগ করতে পারছেন না। যেমনটা হয়েছে খড়দহের চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের ক্ষেত্রে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী বিশ্বজিৎবাবু, স্ত্রী চন্দনা এবং ছেলে বার্ণিককে নিয়ে উত্তরাখণ্ডে গিয়েছিলেন। গৌরীকুণ্ডে পৌঁছনোর পর বিশ্বজিৎবাবু তাঁর দিদি বরুণা ভট্টাচার্যকে ফোন করে খবর দেন। কিন্তু তার পর থেকে মোবাইলগুলি সুইচড অফ পাচ্ছেন বরুণাদেবী। তিনি বলেন, “কী অবস্থায় ওরা রয়েছে, তাও জানতে পারছি না।”
তবে আটকে পড়া পর্যটকদের কী অবস্থায় পড়তে হয়েছে, তার কিছুটা বোঝা গিয়েছে কোনও কোনও উদ্ধার হওয়া ভাগ্যবানের কথা শুনেই। হাওড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে নবরতনবাবুর স্ত্রী নাসেমণি বলছিলেন, “চোখের সামনে যাত্রীসুদ্ধ ছ’টা গাড়ি ভেসে গেল। ভেঙে পড়ল আস্ত একটা হোটেল।” উত্তরাখণ্ড সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন আর এক পর্যটক নন্দিতা ওঝা। তিনি বলেন, “আটকে পড়ার পরে দু’দিন আমরা বেঁচে আছি, না মরেছি কেউ খোঁজটুকু নেয়নি।”
যদিও মদন মিত্রের দাবি, সামগ্রিক ভাবে দুর্গতদের অবস্থা একটু ভাল। এত দিন চার ধামের সংযোগে টিহরিই ছিল একমাত্র জায়গা যেখান থেকে নিরাপদ এলাকায় বেরিয়ে আসা সম্ভব ছিল। এখন বেশ কয়েকটি রাস্তা খুলে গিয়েছে। জোশীমঠ থেকে শ্রীনগর, গুপ্তকাশী থেকে দেবপ্রয়াগ বা গৌরীকুণ্ড থেকে সীতাপুর অবধি সড়কে এগোনো যাচ্ছে। রাজ্যের দুই মন্ত্রী মদনবাবু ও রচপাল সিংহ-ও টিহরি থেকে হরিদ্বার নেমে এসেছেন। হরিদ্বার স্টেশনে বসে উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের ফেরার তদারকি করছেন দুই মন্ত্রী।
মদনবাবু এ দিন জানান, আজ, রবিবার সকালের মধ্যে হরিদ্বার থেকে লখনউ হয়ে এ রাজ্যে ফেরার কথা বেশ কয়েক জনের। রাজ্য সরকারের তরফে তাঁদের জন্য ট্রেনের তিনটি কামরা ‘বুক’ করা হয়েছে। যদিও অন্য যাত্রীরা ওই কামরায় উঠে পড়ায় যাত্রীদের প্রথম দিকে কিছুটা ভুগতে হয়েছে বলে তিনি জানান। এ দিন রাতে আরও দু’টি ট্রেনে কয়েক জন যাত্রীকে পাঠানো হয়েছে বলে জানান মদনবাবু। জোশীমঠ থেকে বাসে করেও অনেককে দিল্লিতে পাঠানো হচ্ছে। দিল্লিতে যাত্রীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকার। বিমানেও যাত্রীদের ফেরানো হচ্ছে।
তবে মদনবাবুর বক্তব্য, “সব যাত্রীকে উদ্ধার করতে আরও দিন দশেক লাগবে। জল, খাবার, ওষুধের সমস্যাও রয়েছে। বিষয়গুলি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গেও সব সময়ে যোগাযোগ রেখে চলছি।”

এই সংক্রান্ত আরও খবর...


পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.