মমতার স্পর্শেও মিটল না দুর্ভোগ
বিবার বিকেল। বাইপাস ধরে মিনাখাঁর দিকে যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়। পথে, পরমা আইল্যান্ড লাগোয়া পুলিশ-ফাঁড়ির সামনে বহু লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সোজা পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, অবিলম্বে বাসের ব্যবস্থা করতে। তার পরে আর বেশি সময় লাগেনি। পরিবহণ সচিবের কাছ থেকে ফোন পেয়ে সিএসটিসি-র এক বড় কর্তা ওই জায়গায় দ্রুত তিনটি বাস পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
সোমবারের বিকেল। বাইপাসের ওই একই জায়গায় বাসের অপেক্ষায় বহু যাত্রী। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ধামাখালির ইজরায়েল গাজি এবং সরবেরিয়ার মহিদুল মোল্লা। যাবেন মেটিয়াবুরুজ। বললেন, “আধ ঘণ্টা হয়ে গেল এখানে দাঁড়িয়ে। বাসের দেখা নেই।” এর ঘণ্টা খানেক পরেও দেখা গেল, ওঁরা ঠায় সেখানেই দাঁড়িয়ে! এর মধ্যেই দু’টি শাটল গাড়ি বাসস্টপে এসে দাঁড়াল। এক-একটি গাড়িতে ঠেলেঠুলে উঠে পড়লেন ১৭-১৮ জন। গাড়ি দু’টি যাবে বানতলার লেদার কমপ্লেক্স পর্যন্ত। তারও পরে হাওড়া-শিয়ালদহ-ভোজেরহাট রুটের একটি ৩৯এ/২, বারাসাত-মালঞ্চ রুটের একটি ডিএন ১৬/১ এবং একটি ২১৩ ও সিটিসি-র একটি সি২এ (টালিগঞ্জ-ঘটকপুকুর) বাস এল। প্রতিটিই ভিড়ে ঠাসা। হাল সেই একই।
কলকাতা থেকে মালঞ্চ পর্যন্ত ৭৬ কিলোমিটার পথে সিটিসি-র বাস যায়। আবার, উল্টোডাঙা থেকে বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে ধামাখালি পর্যন্ত যায় সিএসটিসি-র বাস। একটি বেসরকারি রুটের বাসও চলে ওই রাস্তায়। যাত্রীদের অভিযোগ, বছর দুই ধরে এই সব রুটে বাসের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। প্রতিকার চেয়ে মহাকরণে স্মারকলিপি দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা এ দিন বলেন, “সমস্যাটা খতিয়ে দেখতে গিয়ে প্রাথমিক ভাবে যে রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, খারাপ হয়ে অনেক বাস বসে যাওয়ার কারণেই এমন পরিস্থিতি।”
শহরতলির যাত্রীদের এই নিত্য ভোগান্তির সঙ্গে উঠে এসেছে কলকাতার নামও। অনেকটাই কমে গিয়েছে এই শহরে বেসরকারি বাসের সংখ্যাও। সরকারি বাস-পরিষেবার অবস্থাও তথৈবচ। সমস্যাটা যে বাড়ছে, তা অস্বীকার করেননি সিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রসন্নকুমার মণ্ডল। তাঁর কথায়, “আমাদের মোট ৮০০ বাসের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই চলার উপযোগী নয়। বর্ষা নামতেই ঘনঘন বাস খারাপ হচ্ছে। তার মধ্যেই যথাসাধ্য চেষ্টা করছি বাস রাস্তায় নামাতে।” সিটিসি-র ৩২৩টি বাসের মধ্যে চলছে ১৯৪টি। নিগমের এক কর্তা বলেন, “অর্থাভাবে পর্যাপ্ত বাস মেরামতি করা যাচ্ছে না।”
“আমাদের মোট ৮০০ বাসের
মধ্যে প্রায় অর্ধেকই চলার
উপযোগী নয়।”
প্রসন্নকুমার মণ্ডল,
সিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর
“বেশ কয়েক বার সরকারকে চিঠি দিয়েছি।
তার পরেও দেখছি, যাত্রীদের
ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।”
ধনঞ্জয় দত্ত, রাজ্য বাসযাত্রী
সমিতির সাধারণ সম্পাদক

“বাসের এই হাল আসলে দীর্ঘ দিনের অপরিকল্পনার মাসুল।”
মদন মিত্র পরিবহণমন্ত্রী
রাজ্য বাসযাত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ধনঞ্জয় দত্তের অভিযোগ, “এই শহর ও লাগোয়া অঞ্চলে সরকারি বাসের প্রায় ৯০ শতাংশ সিএসটিসি এবং সিটিসি চালায়। দুই সংস্থার পরিষেবাই তলানিতে এসে ঠেকেছে। প্রতিকার চেয়ে আমরা বেশ কয়েক বার সরকারকে চিঠি দিয়েছি। তার পরেও দেখছি, যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।” সিএসটিসি-র সিটু-সমর্থিত কর্মিসমিতির সাধারণ সম্পাদক রামপ্রসাদ সেনগুপ্তের অভিযোগ, “২০১১-এ প্রতিদিন গড়ে নিগমের ৫০০ বাস রাস্তায় নামত। এখন সংখ্যাটা কমে হয়েছে ৩৫০। কলকাতার সঙ্গে বিভিন্ন জেলার সংযোগকারী দূরপাল্লার বাস এই দু’বছরে ১৫০ থেকে কমে হয়েছে ৫০।”
রাস্তা থেকে সরকারি-বেসরকারি বাস উধাও হওয়ার দায় আগের বাম সরকারের উপরে চাপিয়ে খানিকটা দায় সেরেছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তাঁর বক্তব্য, “বাসের এই হাল আসলে দীর্ঘ দিনের অপরিকল্পনার মাসুল। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। নতুন কিছু বাস সরকারি নিগমগুলিকে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সেগুলি এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.