একেই নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত নেই। আর পজিটিভ গ্রুপের রক্ত যেটুকু মজুত আছে, তা দিয়ে রোগীদের পরিষেবা দিতে নাজেহাল হচ্ছে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক। একেই নিজের হাসপাতালের রোগীদের চাপ। রয়েছে সিউড়ি সদর হাসপাতালের রোগীদের একাংশের চাপও। তার উপরে বিভিন্ন নার্সিংহোমে চিকিৎসারত রোগীদের জন্য রক্ত নিতে ভিড়। সব মিলিয়ে রক্ত সঙ্কটে পড়েছে বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল। ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে রক্তদান শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে গিয়েও কপালে ভাঁজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। কারণ অসহ্য গরম ও ভোটের বাজারে আগামী ১৫ আগস্টের আগে জেলায় তেমন কোনও রক্তদান শিবিরও নেই। ফলে যে কোনও সময় বড়সড় বিপদের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট সব মহল। এই পরিস্থিতিতে এলাকার বিভিন্ন সংগঠন, স্বেছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তথা ব্লাড ব্যাঙ্কের আধিকারিক, চিকিৎসক তীর্থঙ্কর চন্দ্র। যদি কোনও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা যায়!
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক চত্বরে ভারি ভিড় দেখা গেল। মুহূর্তে মুহূর্তে রক্ত ভাণ্ডারের মজুত রক্তের গ্রুপের নাম ও পরিমাণ একটি বোর্ডে চক দিয়ে লিখে রাখছিলেন ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মী দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়। কিছু সময় যেতে না যেতেই সেই তথ্য মুছে আবার নতুন তালিকা লিখছেন। কীসের এত ব্যস্ততা? প্রশ্ন শুনে দেবব্রতবাবু বলেন, “রক্তের আকালে গত কয়েক দিন ধরে খুব চাপ যাচ্ছে। এই হাসপাতাল তো বটেই, আশেপাশের এমনকী সিউড়ি, সাঁইথিয়া থেকেও রক্তের সন্ধানে লোকজন আসছেন। ফলে যোগান দিতে সমস্যা হচ্ছে।” |
কিন্তু এত বার তালিকা প্রকাশের কী কারণ? হাসপাতাল সূত্রের খবর, দিন দু’য়েক আগে সকাল ৭টার সময় ব্লাড ব্যাঙ্কের তালিকা অনুযায়ী রক্ত না পেয়ে রোগীর পরিজনেরা ঝামেলা করেন। বাস্তবে ব্লাড ব্যাঙ্কে তখন রক্তের মজুত রেকর্ড ছিল অন্য। তাঁদের চাহিদার গ্রুপের রক্ত শেষ হয়েছিল অনেক আগেই। ফলে বড়সড় ঝামেলার আগেই অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিল হাসপাতাল। রক্তের এই আকালে যাতে ঝামেলায় না পড়তে হয়, সে দিকেই নজর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। যে কারণে বারবার রক্তের গ্রুপের তালিকা ও পরিমাণ রেকর্ড করে রাখছেন ওই কর্মী। এ দিনের তালিকায় দেখা গেল, কোনও নেগেটিভ গ্রুপের রক্তই হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে নেই। দেবব্রতবাবু বলেন, “গত ১৭ তারিখ থেকে কোনও নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত নেই। ফলে সমস্যা হচ্ছে। রক্ত দাতা দিয়ে যতটুকু চাপ মেটাতে যায়, তাই করা হচ্ছে। সমস্যা মেটানোর একমাত্র বিকল্প রক্তদান শিবির।” জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ি সদর হাসপাতালে বেশ কয়েক দিন ধরে রক্ত সংগ্রহের কিট নেই। ফলে মহকুমা হাসপাতাল থেকে কিট নিয়ে কোনও মতে কাজ চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এক রোগীর আত্মীয় মনোজিৎ মণ্ডল বলেন, “সিউড়ি হাসপাতালে রক্ত নেই। তাই আমাদের এখানে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখানে এসেও দেখছি কার্যত একই হাল! এমন সময়ে আবার নিদির্ষ্ট গ্রুপের রক্তদাতা পাওয়াও মুশকিল। কী করব বুঝতে পারছি না।” নেগেটিভ রক্তের যোগান না থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন হাসপাতালের হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার। তীর্থঙ্করবাবু বলেন, “ব্লাড ব্যাঙ্কে এই মুহূর্তে নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত নেই। পজিটিভ গ্রুপের রক্তের যোগানও সন্তোষজনক নয়। তবু তা দিয়েই কোনও মতে পরিষেবা দিচ্ছি। রক্তের আকাল কাটাতে সকল স্তর থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে।” তীর্থঙ্করবাবু আরও বলেন, “বছরে অন্তত ৫০টি রক্তদান শিবির করি। কিন্তু শেষ রক্তদান শিবির আমরা করতে পেরেছি গত ২ জুন। চলতি বছরে ইতিমধ্যেই আমরা ২৬টি শিবির করে ফেলেছি। কিন্তু এ বার রক্তের যা চাহিদা, তাতে কম করে ৬৫-৭০টি রক্তদান শিবিরের আয়োজন না করলে সঙ্কট মিটবে না।” এই পরিস্থিতিতে রক্তদান শিবির আয়োজনে সকলকে এগিয়ে আসার আবেদন করছেন তিনি।
|