প্রয়োজনের তুলনায় রক্ত সংগ্রহ করার ব্যাগ না থাকায় সমস্যায় পড়েছেন রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মী-সহ রক্তদাতারা। এর ফলে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের সঙ্গে যে কোনও সময় রোগীর আত্মীয়-পরিজন থেকে অন্যদের ঝামেলা হতে পারে বলে আশঙ্কায় ভুগছেন কর্মীরা। ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্মীদের বক্তব্য, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে জানানো সত্ত্বেও তাদের কাছ থেকে কবে ব্যাগ পাওয়া যাবে তা সঠিক ভাবে জানা যাচ্ছে না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন পর্যন্ত মাত্র দুটো ব্যাগ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে মজুত রয়েছে। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মাসের ১৭ তারিখ ব্লাড ব্যাঙ্কের বর্ধমান রিজিওন্যাল অফিস থেকে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালকে রক্ত সংগ্রহ করার জন্য ২০০টি ব্যাগ দেওয়া হয়। রামপুরহাট হাসপাতাল থেকে ৭০০টি ব্যাগের প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছিল। ওই সময় ব্লাড ব্যাঙ্কে ১৫০টি ব্যাগ মজুত ছিল। ১৭ নভেম্বর হুগলি জেলার শিবাইচন্ডিতে ১৩২ ব্যাগ রক্ত রক্তদান শিবির থেকে সংগ্রহ করা হয়। ১৮ নভেম্বর মহম্মদবাজার থানার গণপুর এলাকার বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৫০ জনের রক্ত সংগ্রহ করা হয় রক্তদান শিবির থেকে। ২০ নভেম্বর মুরারই থানার ভীমপুর গ্রামে ৪৭টি বোতল রক্ত রক্তদান শিবির থেকে সংগ্রহ করা হয়।
২৭ নভেম্বর নলহাটির হীরালাল ভকত কলেজ থেকে৩৫ বোতল রক্ত সংগ্রহ করা হয়। চলতি মাসের ৭ তারিখ রামপুরহাটের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অনুষ্ঠানে রক্তদান শিবির থেকে ৯ বোতল রক্ত সংগ্রহ করা হয়।
ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে ১৭৮ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীকে মাসে কমপক্ষে দু’বার রক্ত দিতে হয়। এ ছাড়াও এলাকার পাথর শিল্পাঞ্চলে এবং জাতীয় সড়কে প্রায় রোজের ছোটখাট দুর্ঘটনায় রক্তের প্রয়োজন হয়। সেই জন্য রামপুরহাট ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত সংগ্রহ করে রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে গড়ে অন্তত প্রতি মাসে ২০ বোতল রক্ত দুর্ঘটনার জন্য সংগ্রহ করে রাখতে হয়। বর্তমানে রক্তের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাগের জোগান দিতে না পারার জন্য রক্তের বিভিন্ন গ্রুপ অনুযায়ী রক্ত মজুত রাখা যাচ্ছে না। এর ফলে যেমন প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীকে রক্ত দেওয়া যাচ্ছে না, সেরকম রক্তদাতাদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করাও যাচ্ছে না। রক্ত এক্সচেঞ্জ করা যাচ্ছে না। আবার রক্তদান শিবিরের কার্ড দেখিয়েও প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত সংগ্রহ না থাকার জন্য অসুবিধে হচ্ছে।
রামপুরহাটের স্থানীয় বাসিন্দা কৌশিক আইচের অভিযোগ, “ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রক্তের ব্যাগের যোগান না থাকার জন্য রক্ত দিতে গিয়ে অনেককে ঘুরে আসতে হচ্ছে। ফলে জীবন সঙ্কটে পড়া রোগীদের প্রয়োজনে রক্ত দেওয়া যাচ্ছে না।” রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতাল সুপার হিমাদ্রি হালদার বলেন, “শুধু মাত্র রক্তের ব্যাগের যোগান নয়, প্রয়োজন মত রক্ত পরীক্ষার জন্য কিটের যোগানও অপ্রতুল। এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ব্লাড ব্যাঙ্কের বর্ধমান রিজিওন্যাল সেন্টারের আধিকারিক সোমা দত্তের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মী জানান, যা বলার আধিকারিক বলবেন।
শুধু রামপুরহাট নয়, সিউড়ি সদর হাসপাতালেও রক্ত সংগ্রহ করার ব্যাগের ঘাটতি রয়েছে। হাসপাতাল সুপার মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “সিউড়ি সদর হাসপাতালে ঘাটতি আছে। ঘাটতি পূরণ করার জন্য ব্লাড ব্যাঙ্কের বর্ধমান রিজিওন্যাল অফিসে খোঁজ নিয়ে সদুত্তর পাওয়া যায়নি। শেষমেষ স্বাস্থ্য ভবনে যোগাযোগ করার পর তারা আগামী সোমবারের মধ্যে অভাব পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।” বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুদীপ মণ্ডল বলেন, “যা আছে তাতে কয়েক দিন কাজ চালানো যাবে।”
স্বাস্থ্য ভবনের ব্লাড সেফটি বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর এন সি বালা বলেন, “সিউড়িতে একটু বেশি ঘাটতি আছে। ওদের বলেছি সোমবারের মধ্যে ব্লাড ব্যাগ পাঠানো হবে।” রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতাল ও সিউড়ি সদর হাসপাতালে ব্লাড সংগ্রহ করার ব্যাগ জোগান দেওয়ার কথা ব্লাড ব্যাঙ্কের বর্ধমান রিজিওন্যাল সেন্টারের। এন সি বালা বলেন, “ওদের আজকেও বলেছি প্রয়োজনীয় ব্যাগ নিয়ে যেতে। কিন্তু গাড়ি নিয়ে যাওয়ার কোনও সমস্যা থাকার জন্য ওরা নিয়ে যেতে পারেননি। তবে খুব শীঘ্রই সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |