অনুমতি ছাড়াই চিকিৎসা এবং ওষুধ বিলি করায় উদ্বিগ্ন জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক
বন্ধ ঢেকলাপাড়া বাগানে স্বেচ্ছাসেবীরা
গাম না জানিয়ে বন্ধ চা বাগানে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা ওষুধ বিলি করছেন বলে অভিযোগ তুললেন জলপাইগুড়ি জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা। রবিবার ঢেকলাপাড়া চা বাগানে শিলিগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন -এর সদস্যরা শ্রমিক পরিবারগুলিকে শীত বস্ত্র এবং মশারি বিলি করেন। তাঁদের দলে থাকা তিন চিকিৎসক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ওষুধও বিলিও করেন। ত্রাণ বিলি নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা না হলেও স্বাস্থ্য দফতরের বিনা অনুমতিতে চিকিৎসা এবং ওষুধ বিলি করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার। তিনি বলেন, “অতীতে রাজ্যের এক জেলায় শিশুদের টিকা দেয় এক বেসরকারি সংস্থা। ওই টিকা নেওয়ার পরে বেশ কয়েকটি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। এই ধরনের স্বাস্থ্যশিবির এবং ওষুধ বিতরণ করার পর কোনও অঘটন ঘটলে তার দায় সরকারের ঘড়ে এসে পড়বে।”
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এ দিন জানিয়েছেন, যাঁরা বাগানে চিকিৎসা করছেন, তাঁরা আদৌও চিকিৎসক কি না তা আমাদের জানা নেই। কারও কিছু হয়ে গেলে তার দায় স্বাস্থ্য দফতর নেবে না। এর আগে ওই বাগানে বিলি করা ওষুধের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধও মিলেছিন। তবে এতে কোনও রকম অন্যায় দেখছেন না ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক জয়দীপ দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, “এতে অন্যায়ের কী আছে তা বুঝতে পারছি না। এর আগে আমরা চিকিৎসা করে চা বাগানে ওষুধ বিলি করেছি। আগে তো কোনও দিন অনুমতির কথা বলা হয়নি। এই ভাবে আপত্তি জানালে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে কোউ বিপন্নদের পাশে দাঁড়াবে না।”
বন্ধ ঢেকলাপাড়া চা বাগানে চিকিৎসা শিবির। রবিবার ছবিটি তুলেছেন রাজকুমার মোদক।
সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ২০০৫-২০০৬ সালে বাগানে ত্রাণ ও চিকিসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছিল। মাঝে অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটায় তাঁরা আর আসেননি। সম্প্রতি বাগানের শ্রমিকেরা ফের চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। শ্রমিকেরা ঠিকমত স্বাস্থ্য পরিষেবা পাচ্ছে না। ছয় মাসে কয়েক জন মারা গিয়েছেন। সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত ১৫ জন স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পর্যন্ত দিয়েছেন। তাই এ দিন তিন চিকিৎসক ও ওষুধ নিয়ে সদস্যরা বাগানে যান। ৩০০ কম্বল ও মশারি দেওয়া হয়।
চিকিৎসক সঞ্জয় সরকার এবং সুধীন দাস এবং অনিতা মজুমদার বাগানের নেপানিয়া ডিভিশনে ২৫০ জনেক চিকিৎসা করেন। তাঁরা এ দিন জানান, অপুষ্টিতে ভুগে শিশু ও বৃদ্ধদের রাতকানা রোগ হচ্ছে। পরিস্রুত জলের অভাবে পেটের রোগ হচ্ছে। অনিতাদেবী বলেন, “এরা মনে হচ্ছে ঠিকমত চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না। সরকারি চিকিৎসকেরা ঠিকঠাক আসেন বলেও মনে হচ্ছে না।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপুষ্টিজনিত কারণে অসুখ বিসুখ হওয়ার ঘটনা অস্বীকার করেছেন। এই প্রসঙ্গে আরএসপি-র শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, “রাষ্ট্র যদি নির্মম হয় তা হলে যে কোনও মানুষের অধিকার রয়েছে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর। স্বাস্থ্য দফতরের ব্যর্থতা প্রকাশ্যে আসার ভয়ে অনুমতির কথা বলা হচ্ছে। বাম সরকার আপত্তি করেনি।” এ দিনই ঢেকলাপাড়া বাগানে আলাদাভাবে চাল, লবণ, শীতবস্ত্র বিলি করেন আলিপুরদুয়ারের ১০ জন বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কয়েক জন ব্যবসায়ী ও খাদ্য দফতরের আধিকারিক, রেল ও মহকুমা শাসকের দফতরের অফিসার। তাঁরাও বাগানের শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, খাদ্য দফতর যে পরিমাণ অনুদান দিচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। ঢেকলাপাড়ার পাশাপাশি বন্ধ দলমোড় চা বাগান এদিন ঘুরে দেখেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিনিধি এসকে রবিচন্দ্রন। বাগানটি পাঁচ মাস ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে। রবিচন্দ্রনকে বাগানের বাসিন্দারা জানান, বাগানে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা পরিষেবা, পানীয় জল, খাবারের সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাগানের এক মৃত শ্রমিকের পরিবারের সঙ্গেও তিনি এ দিন কথা বলেন। পরে রবিচন্দ্রন বলেন, “এখানকার মানুষজনের পরিস্থিতি একেবারেই ভাল নয়। আমরা দফতরকে একটি রিপোর্ট দেব। খুব দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসার প্রয়োজন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.