জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যেই মারা গেল একটি শিশুপুত্র। সেই নিয়ে ক্ষোভ জানাতে গেলে উল্টে হাসপাতালের সুপার চড় কষিয়ে দিলেন ওই শিশুপুত্রের এক আত্মীয়কেই। রবিবার বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার দেবাশিস রায়ের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এমনই অভিযোগ করেছেন ওই শিশুর আত্মীয়েরা।
ওই শিশুর পরিবার পরিজনেরা রবিবার সেই ঘটনার পরে ক্ষোভ দেখিয়েছেন হাসপাতালে। সেই সঙ্গে তাঁরা বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তথা রাজ্যের শিশু-কল্যাণ মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কেও ঘটনার কথা জানিয়েছেন। শ্যামাপ্রসাদবাবু বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। সুপারের এই ব্যবহার কাম্য নয়। অভিযোগ উঠলে, তা খতিয়ে দেখাই তাঁর কাজ।”
ওই শিশুর বাবার ইবাদত শেখের বাড়ি বাঁকুড়ার পাত্রসায়র থানার বরোজপতা গ্রামে। তিনি পেশায় কৃষিজীবী। ইবাদত জানান, তাঁর স্ত্রী সামিমা বিবিকে শনিবার হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “সেই সময়ে যথোচিত যত্ন নেওয়া হয়নি। আমার স্ত্রী যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন, তবু কিছুতেই অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থাও হচ্ছিল না। আমরা তখন বারবার করে ডাক্তারবাবুকে বলেছিলাম, তবু তিনি কর্ণপাত করেননি।” শেষ পর্যন্ত ভর্তির প্রায় ১২ ঘণ্টা পরে সামিমা বিবির স্বাভাবিক ভাবেই সন্তান হয়। কিন্তু সেই সন্তানকে বাঁচানো যায়নি। |
বিষ্ণুপুর হাসপাতালে সুপারকে ঘিরে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র |
সামিমা বিবি ও ইবাদতের দাবি, যদি অস্ত্রোপচার করে আগেই সন্তানের জন্ম দেওয়া হত, তা হলে এই সমস্যা হত না। সন্তানের মৃত্যুর পরে সুপার দেবাশিসবাবুকে সে কথাই বলতে গিয়েছিলেন ইবাদত ও তাঁর আত্মীয়েরা। ইবাদতের আত্মীয় শেখ নজরুল বলেন, “আমরা কয়েকজন হাসপাতালে গাফিলতির অভিযোগ তুলে সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলাম। তিনি তখন লেবার রুমে বসে সিগারেট টানছিলেন। আমাদের অভিযোগ না শুনেই চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমি সরকারের চাকরি করি, এই মৃত্যু নিয়ে তোমাদের কৈফিয়ত দেব না।”’ শেখ নজরুল বলেন, “এই সময়ে সিগারেট নিভিয়ে কথা বলতে বলায় তিনি আমার হাত মুচড়ে মুখে চড় কষিয়ে দেন। আমি বিষ্ণুপুর থানায় সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছি।”
তবে আগেই অস্ত্রোপচার করে প্রসব করালে সামিমা বিবির সন্তান সত্যিই বাঁচত কি না, সে প্রশ্নের জবাব দিতে চাননি সুপার দেবাশিসবাবু। যে চিকিৎসক সামিমার প্রসব করিয়েছেন, তিনিও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে এর আগেও হাসপাতালে নিজের চেম্বারে সিগারেট খাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ দিনও দেবাশিসবাবু বলেন, “বেশ করেছি সিগারেট খেয়েছি। সংবাদ মাধ্যমকে কিছু বলতে আমি বাধ্য নই।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ দিন্দা অবশ্য বলেন, “ওই প্রসূতির ঠিক কী অবস্থা ছিল, অস্ত্রোপচার সত্যিই প্রয়োজনীয় ছিল কি না, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।” |