ক্যানসারে চাই সুষম খাবার, কিছু রূপটানও
কেমোথেরাপি নিতে হয়েছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মাথার প্রায় সব চুলই যে উঠে গেল।
• ডাক্তারবাবু বললেন, “আগে প্রাণটা বাঁচুক। তার পরে তো চুল!”
ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় মুখে অজস্র ব্রণ কিংবা আঁচিল উঠল।
• ডাক্তারের মৃদু ধমক, “আপনি এখন চেহারা নিয়ে ভাবছেন!”
কী করবেন ওই সব রোগী? যাঁরা ক্যানসারের সঙ্গে লড়তে লড়তে শুধু জান-প্রাণ নয়, জীবন ও জীবনধারণের মানটাও ধরে রাখতে চান?
ক্যানসারের মতো রোগের আক্রমণ মানেই চার পাশের বেশির ভাগ লোক, এমনকী চিকিৎসকদেরও একটা বড় অংশ রোগীকে ‘খরচের খাতা’য় ফেলতে শুরু করেন। লক্ষ্য একটাই, যেনতেন উপায়ে আয়ুটুকু ধরে রাখা। কিন্তু শুধু বেঁচে থাকা নয়। বেঁচে থাকার মান ধরে রাখা যায় কী ভাবে, সেটা অবহেলিতই থেকে যায়।
রবিবার ‘তৃতীয় অঙ্ক অতএব’ নাটকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র
রবিবার সকালে এই জরুরি বিষয়টিকেই সামনে আনল শহরের একটি বেসরকারি ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্র। ওখানকার ডাক্তারদের বক্তব্য, প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ক্যানসার সারানো সম্ভব। কিন্তু এই রোগ যাতে শরীরে কোনও স্থায়ী ছাপ ফেলে যেতে না-পারে, সেই জন্যই প্রয়োজন কিছু সতর্কতা। দরকার মানসিক সমস্যা এড়ানোর জন্য আগাম কিছু ব্যবস্থা নেওয়া। খাদ্যাভ্যাসে প্রয়োজনীয় কিছু বদল তো চাই-ই। সেই সঙ্গে শরীরের স্বাভাবিক রূপ ও প্রবণতা অটুট রাখার জন্য সহৃদয় পরামর্শ নিয়ে রোগীর পাশে দাঁড়াতে হবে চিকিৎসকদেরই। সুষম খাবার চাই। চাই চুল বাঁচানোর বা বিকল্প চুলের মতো রূপটানও। সেটা কেমন হবে, কী ভাবে সহজে তা মিলবে, বলবেন ডাক্তারবাবুরাই।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় মেনে নিচ্ছেন, চিকিৎসকদের আরও সংবেদনশীল হওয়া দরকার। তাঁর কথায়, “শুধু নির্দিষ্ট রোগটির চিকিৎসা নয়। দরকার সামগ্রিক সুস্থতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা।” সেই সামগ্রিক সুস্থতার প্রসঙ্গ ধরেই এল চুল পড়ে যাওয়ার কথা। কারণ দেহসৌষ্ঠবের ক্ষেত্রে চুলের ভূমিকা খুব বড়। ক্যানসার শল্যচিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বললেন, “চুল উঠে যাওয়ার পরে অনেকে পরচুলা পরেন। কিন্তু কোথায় তা পাবেন, কত দাম, কত আগে বরাত দিতে হয় এ-সব জানা থাকে না। তাই সমস্যায় পড়েন বহু রোগীই। এই বিষয়ে রোগীকে পরামর্শ দেওয়ার দায় ডাক্তারেরা অনুভব করেন না।”
চর্মরোগের চিকিৎসক সন্দীপন ধর জানালেন, বছর কয়েক আগে লিম্ফ নোড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চুল, এমনকী চোখের পাতাও পড়ে গিয়েছিল। তখন তিনি কী করলেন? সন্দীপনবাবু বলেন, “আমি পরচুলা পরিনি। কিন্তু যাঁরা ওই চাপটা নিতে পারবেন না, তাঁরা অবশ্যই তা পরতে পারেন। সে-ক্ষেত্রে কেমো শুরু হওয়ার আগে আসল চুলের অংশ নিয়ে গিয়ে সেটা ম্যাচ করিয়ে পরচুলার বরাত দেওয়া উচিত। নইলে নকল চুল বিসদৃশ ঠেকতে পারে।” কেমোর পরে চুল পড়া কমাতে মাথায় ‘আইসপ্যাক’ বা বরফ-সেঁক দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তিনি।
কেমোর পরে অনেক ক্যানসার রোগীরই মিউকাস মেমব্রেন শুকিয়ে যায়। এর প্রতিক্রিয়ায় মুখ শুকিয়ে যাওয়া, জ্বালা করা তো থাকেই। এমনকী ‘ভ্যাজাইনাল মিউকাস’ শুকিয়ে গিয়ে বহু মহিলার দাম্পত্য জীবনেও সমস্যা হয়। সন্দীপনবাবু জানান, এই সমস্যা ঠেকাতে গরম এবং ঝাল-মশলাদার খাবার পুরোপুরি বাদ দেওয়া উচিত। খাবারের তালিকায় থাকা দরকার ঠান্ডা ফল এবং পানীয়। যোনিদ্বারের শুষ্কতা ঠেকাতে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। ক্যানসার রোগীর সুষম খাদ্যতালিকা কেমন হওয়া উচিত, সেই পরামর্শ দিলেন ডায়েটিশিয়ান হেনা নাফিজ।
আলোচনার শেষে অভিনীত হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাটক ‘তৃতীয় অঙ্ক অতএব’। যার মূল উপজীব্য ক্যানসারের সঙ্গে এক শিল্পীর লড়াই। কয়েকশো ক্যানসার রোগী এ দিন চিকিৎসকদের পাশে বসে এই নাটকটি দেখলেন। সঙ্গে নিয়ে ফিরলেন ওই মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই চালানোর কিছু শক্তি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.