গ্রামাঞ্চলে ডাক্তারের অভাব মেটাতে নতুন নিয়ম চালু করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ বার দেশের যে-কোনও প্রান্ত থেকে মেডিক্যালে স্নাতকোত্তর প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসার আগেই ডাক্তারদের বাধ্যতামূলক ভাবে এক বছর গ্রামে কাজ করতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ বৃহস্পতিবার এই প্রস্তাবে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর। ২০১৪-’১৫ সালের পাঠ্যক্রম থেকেই এই নিয়ম চালু হচ্ছে। মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই) এই বিষয়ে কিছু দিনের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি করবে।
এত দিন এমবিবিএস পরীক্ষায় পাশ করার পরেই চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ বেসরকারি জায়গায় প্র্যাক্টিস করতে চলে যেতেন। যাঁরা সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যুক্ত হতেন, তাঁদেরই বেশির ভাগ সময় গ্রামাঞ্চলে পাঠানো হত। তা-ও সকলকে পাঠানো যেত না। এর ফলে বহু গ্রামীণ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র, এমনকী জেলা হাসপাতালও চিকিৎসকের অভাবে ধুঁকছে। বছর দুয়েক আগে এক বার পরিকল্পনা হয়েছিল, এমবিবিএস পাঠ্যক্রমের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে দেওয়া হোক। এবং শেষের এক বছর গ্রামে পরিষেবা দেওয়ার জন্য পাঠানো হোক ছাত্রছাত্রীদের। সেই শর্ত পূরণের পরেই তাঁরা এমবিবিএস পাশের চূড়ান্ত ডিগ্রি হাতে পাবেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। শেষ পর্যন্ত গ্রামে ডাক্তার পাঠানো নিশ্চিত করতে মেডিক্যালের স্নাতকোত্তর প্রবেশিকায় বসার আগে গ্রামাঞ্চলে এক বছর পরিষেবা দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে চলেছে কেন্দ্র।
গ্রামে ডাক্তার পাঠানো নিশ্চিত করতে দিন কয়েক আগেই পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঘোষণা করেছিল, এ বার থেকে মেডিক্যালে স্নাতকোত্তর ও পোস্ট-ডক্টরাল পাশ করার পরে এক বছর গ্রামে কাজ করা বাধ্যতামূলক হবে। এই মর্মে বন্ড সই করতে হবে স্নাতকোত্তরে ও পোস্ট-ডক্টরালে পড়া শুরুর আগেই। পাশ করার পরে গ্রামে না-গেলে সরকারকে ১০ লক্ষ টাকা দিতে বাধ্য থাকবেন পড়ুয়ারা।
কেন্দ্রের নতুন বিধি চালু হলে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম কি আর কার্যকর হবে না?
রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁরা দু’টি নিয়মই চালু রাখতে চান। তাতে গ্রামীণ বাসিন্দারা বেশি উপকৃত হবেন। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে মেডিক্যালে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য কেন্দ্রের নিয়মে চিকিৎসকদের গ্রামাঞ্চলে এক বছর কাজ করতে হবে আবার স্নাতকোত্তর এবং পোস্ট-ডক্টরাল পাশ করার পরে রাজ্যের নিয়ম মেনে চিকিৎসকদের ফের এক বছর কাজ করতে হবে গ্রামে। তাই কেন্দ্রের নতুন ব্যবস্থায় রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা খুশি। সুশান্তবাবু বলেন, “আশা করছি, এর ফলে গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকের অভাব অনেকটাই মিটবে। গুলাম নবি অনেক দিন আগেই এটা করবেন বলেছিলেন। তিনি যে অনেক বাধা পেরিয়ে তা করতে পারলেন, এটা প্রশংসনীয়।”
কিন্তু ডাক্তারেরা কি দু’বার এই ভাবে বাধ্যতামূলক গ্রামে যাওয়ার ব্যবস্থাকে স্বাগত জানাচ্ছেন?
চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ)-এর সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গ শাখার রাজ্য সম্পাদক শান্তনু সেনের বক্তব্য, তাঁরা এর মধ্যে আপত্তিকর কিছু দেখছেন না। তাঁর কথায়, “প্রথম প্রথম বাধা আসতে পারে। তার পরে অধিকাংশ চিকিৎসক এটা মেনে নেবেন। এই ব্যবস্থার জন্য আমরাও সব পক্ষকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।
এতে গ্রামের মানুষ সুচিকিৎসা পাবেন। গ্রামে হাতুড়ে ডাক্তারদের রমরমা কমবে।” |