জল দূষণ নিয়ে কোর্টে তলব পুরকর্তাদের
ল দূষণ নিয়ে একাধিক বার নির্দেশের পরেও তাতে আমল দেয়নি কলকাতা পুরসভা। এ বার সেই দূষণের ব্যাখ্যা দিতে পুর-অফিসারদের আদালতে হাজিরা দিতে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
কলকাতা মহানগর এলাকার জল দূষণ নিয়ে হাইকোর্টে একটি মামলা করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি জানান, তার পরিপ্রেক্ষিতেই বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ দু’সপ্তাহ পর পুর-অফিসারদের আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, শহরের কয়েকটি নলকূপের জলে সহনমাত্রার উপরে আর্সেনিক মিলেছে বলে গত বছর জুন মাসে পুরসভাকে একটি রিপোর্ট দিয়েছিল যাদবপুর স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ। সেই রিপোর্ট পেয়েই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন পুরসভার তৎকালীন মেয়র পারিষদ (নলকূপ) তারক সিংহ। তার পরেই রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতর সুইড, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, রাজ্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে দিয়ে যাদবপুর-টালিগঞ্জ এলাকার কয়েকটি নলকূপের জল পরীক্ষা করায় পুরসভা। সেখানেও ধরা পড়ে ওই দুই এলাকার কয়েকটি নলকূপের জলে বিপজ্জনক মাত্রার বেশি আর্সেনিক রয়েছে। সে সময় মেয়র পারিষদ তারক সিংহ জানিয়েছিলেন, রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতরের দেওয়া রিপোর্টে ৩৪টি নলকূপের মধ্যে পাঁচটিতে আর্সেনিক মিলেছে। এর মধ্যে চারটি পুরসভার নিজস্ব নলকূপ।
বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয় পুরসভার অন্দরমহলে। জলে দূষণ রোধে ১৪ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে পুর প্রশাসন। রাজ্য আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান কুমারজ্যোতি নাথকেই পুরসভার টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান করা হয়। টাস্কফোর্সের নির্দেশে যে সব নলকূপ থেকে বেশিমাত্রায় আর্সেনিক মিলেছে, সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়, নতুন বাড়ি বানানোর অনুমোদন দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট এলাকার জলে আর্সেনিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করাতে হবে বাধ্যতামূলক ভাবে। মহানগরের জলে দূষণ রোধে কী পদক্ষেপ করছে পুর-প্রশাসন, তা নিয়ে তখনই হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা হয়।
বৃহস্পতিবার সুভাষবাবু জানান, কলকাতা পুর-এলাকায় প্রতি দিন প্রায় ১০০ কোটি লিটার জল ভূগর্ভ থেকে তুলে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে ভূগর্ভের জলস্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে ফাঁক। সুভাষবাবুর অভিযোগ, সেই ফাঁক পূরণের জন্য ভূগর্ভে যথেষ্ট পরিমাণে জল ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। বর্ষার জলও সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। আদালতের বাইরে তিনি বলেন, “কলকাতা পুরসভা এ বিষয়ে নিয়ম-আইনের কথা মেনে নিলেও কাজে করছে না।” আর্সেনিক রোধে কাজ যে তেমন হচ্ছে না, তা স্বীকার করছে পুর-প্রশাসনও। পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের এক অফিসারের কথায়, টাস্কফোর্স গঠন হওয়ার পরে নলকূপ দফতরের মেয়র পারিষদও বদল হয়েছে। তারকবাবু জায়গায় এসেছেন সামসুজ্জমান আনসারি। তারকবাবুর সময়ে মাসে দু’বার করেও টাস্কফোর্সের বৈঠক হয়েছিল। গত ৬ মাসে একটাই বৈঠক হয়েছে।
টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুমারজ্যোতি নাথ এ দিন বলেন, “নতুন মেয়র পারিষদ আসার পরে একটাই বৈঠক হয়েছে। সেখানে ঠিক হয়েছিল পরবর্তী বৈঠকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু সেই বৈঠক এখনও ডাকেনি পুরসভা।”
কী সেই সিদ্ধান্ত?
কুমারজ্যোতিবাবু জানান, প্রথমত ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার কমাতে হবে। গঙ্গার জলের ব্যবহার বাড়াতে হবে। নলকূপের ব্যবহার দ্রুত কমানো দরকার। এ সবই অবিলম্বে কার্যকর হলে আর্সেনিক দূষণের হাত থেকে রেহাই পাবেন শহরবাসী।
এর বাইরেও পানীয় জলে দূষণ পরীক্ষা করতে পুরসভার ল্যাবরেটরি উন্নত করার দাবিও জানিয়েছেন সুভাষবাবু। তাঁর বক্তব্য, শহরের বস্তি এলাকা, রেল স্টেশন, স্কুল-কলেজে পানীয় জলের অবস্থা খুব খারাপ। সেই সব এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে বলেও তিনি জানান।
যদিও পুরসভার আইনজীবী অলোককুমার ঘোষ জানিয়েছেন, সুভাষবাবুর সব প্রশ্নেরই উত্তর আদালতকে জানানো হয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চ পরের শুনানির দিনে অফিসারদের হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.