বর্ষায় পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ দিতে উদ্যোগ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বর্ষা এলেই লাফিয়ে বাড়ে পেঁয়াজের দাম। দামের নিরিখে কখনও হার মানিয়ে দেয় আপেলকেও! তা-ও চাষিরা পেঁয়াজের পরিবর্তে ধান চাষেই গুরুত্ব দেন বেশি। এই মানসিকতা বদলাতে উদ্যোগী হচ্ছে কৃষি ও উদ্যান পালন দফতর। সিদ্ধান্ত হয়েছে, হাতেকলমে উন্নততর পেঁয়াজ চাষের পদ্ধতি শেখানো হবে। ভাল চাষ হলে খরচের ৫০ শতাংশ ছাড়ও পাবেন চাষিরা।
প্রাথমিক ভাবে রাজ্যের ৮টি জেলায় বিকল্প চাষ হিসেবে পেঁয়াজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও হুগলি জেলায় চলতি বছরে মোট ৮০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হবে। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে চাষ হবে ৮৮ হেক্টর জমিতে। উদ্যান পালন দফতর চাষ করাবে ১০ হেক্টরে ও কৃষি দফতর করাবে ৭৮ হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্যেই দুই দফতর মিলে প্রায় ৯০০ জন চাষির তালিকা তৈরি করেছে। প্রাথমিক ভাবে শালবনি, গড়বেতা-২, খড়্গপুর-১, ২, দাঁতন-১, ২, ডেবরা, কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়, নয়াগ্রাম, পিংলা ও সবং এই ১১টি ব্লকে পেঁয়াজ চাষ করা হবে। জেলার উদ্যান পালন আধিকারিক রণজয় দত্ত ও কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর নিমাইচন্দ্র রায় বলেনন, “চাষিদের বীজ দিয়ে দেওয়া হবে। তারপর চাষিরাই চাষ করবেন। প্রযুক্তি দেব আমরা। নিয়ম মেনে চাষ করলে খরচের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়েরও ব্যবস্থা রয়েছে।” |
এ রাজ্যে সাধারণত শীতকালেই পেঁয়াজ চাষ হয়। তবে সামগ্রিক ভাবে পেঁয়াজ চাষে ঝোঁক কম। বেশিরভাগ চাষি ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটাতে পেঁয়াজ চাষ করেন। কিছু চাষি ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চাষ করেন। যেহেতু শীতেই বেশিরভাগ চাষি পেঁয়াজ চাষ করেন, তাই দামও বেশি পাওয়া যায় না। পাইকারি দরে ২-৩ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হয়। বাজারে ক্রেতার কাছে তা পৌঁছয় ৪-৫ টাকা কেজি দরে। অথচ, সেই পেঁয়াজই বর্ষায় কেজি প্রতি ২০ টাকায় বিকোয়। কখনও মহার্ঘ হয়ে দাঁড়ায় কেজি প্রতি ৩৫-৪০ টাকাতেও। ভিন্ রাজ্য থেকে আমদানি করতে হয় বলেই দাম বাড়ে। রাজ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ চাষ হলে দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকত। চাষিদের হাতেও পয়সা আসত। কারণ, বর্ষায় পেয়াজ চাষের খরচ নেহাতই কম। কৃষি দফতর জানিয়েছে, বর্ষাকালে এক বিঘে জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে বড় জোর ১২-১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। বিঘা প্রতি পেঁয়াজের ফলন হবে ন্যূনতম ৪০ কুইন্টাল। তা বিক্রি করতে বিশেষ সমস্যা হবে না। কারণ, গ্রাম থেকে শহর, নিম্নবিত্ত থেকে ধনী, সর্বত্র পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। সরকারি সহায়তায় চাষ করিয়ে এই লাভের অঙ্কটাই চাষিদের বোঝাতে চাইছে সরকার।
তবে বর্ষার শুরুতেই এই চাষ করা যাবে না। জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে বীজ বুনতে হবে। পেঁয়াজ গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধির জন্য ১২.৮ থেকে ২১ ডিগ্রি তাপমাত্রা প্রয়োজন। কন্দ বৃদ্ধির জন্য তাপমাত্রা লাগে ১৫.৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি। এই সময় চাষ হলে যে সব চাষি আউস ধানের চাষ করেন তাঁরাও ধান কেটে পেঁয়াজ চাষ করতে পারবেন। উদ্যান পালন দফতর জানিয়েছে, ঠিকমতো বোঝাতে পারলে বর্ষায় পেঁয়াজ চাষের জনপ্রিয়তা বাড়বে। যেমন, এসআরআই পদ্ধতিতে ধানচাষের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে কৃষি দফতরকে অনেক ঝক্কি পোয়াতে হয়েছিল। এখন অবশ্য অনেক চাষিই উৎসাহিত হয়েছেন।
কী ভাবে পেঁয়াজ চাষ করতে হবে, কোন ধরনের বীজ উপযুক্ত (উপযুক্ত বীজ হল এগ্রিফাউন্ড ডার্ক রেড), কত পরিমাণ সার বা অনুখাদ্য দিতে হয়, কী ভাবে বীজ শোধন করতে হয় চাষিদের এই সব তথ্য জানাতে লিফলেট প্রকাশ করবে উদ্যানপালন দফতর। দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, “বর্ষার পেঁয়াজ চাষকে কৃষকদের কাছে আকষর্ণীয় করে তুলতে সব ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
|