বাম জমানায় আবাসন দফতরের ২০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে সিআইডি জেরা করতে চলেছে রাজ্যের প্রাক্তন আবাসন মন্ত্রী গৌতম দেবকে। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে গৌতমবাবুকে সিআইডি ডেকে পাঠানোয় স্বাভাবিক ভাবেই রাজনীতি উত্তপ্ত হতে চলেছে।
সিআইডি-র পক্ষ থেকে শুক্রবার গৌতমবাবুর সল্টলেকের বাড়িতে সমন নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ বাড়িতে না থাকায় পুলিশ সমন ধরাতে পারেনি। রাজ্য পুলিশের এডিজি (সিআইডি) শিবাজী ঘোষ বলেন, “আগামী শুক্রবার, ২১ জুন গৌতমবাবুকে ভবানীভবনে ডেকে পাঠানো হয়েছে।” সিআইডি সূত্রে খবর, ওই দুর্নীতির মামলায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর পুত্র চন্দন বসুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কারণ, চন্দনবাবুর আবাসন নির্মাণ সংস্থা গ্রিন ফিল্ডকে কম দামে জমি দেওয়ার ফলেই আবাসন দফতরের ২০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে অভিযোগ। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব বিষয়টিকে চক্রান্ত হিসাবে দেখছেন। যদিও দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বা গৌতমবাবু কেউই ‘চক্রান্ত’ শব্দটি এখনই ব্যবহার করতে রাজি নন। বিমানবাবু বলেন, “শুনলাম গৌতমকে সিআইডি চিঠি পাঠিয়েছে। কী বিষয় জানি না। ” এ দিন গৌতমবাবু দলের কাজে উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে ছিলেন। তিনি বলেন, “চিঠির বিষয় না জেনে চক্রান্ত কি না বলা সম্ভব নয়।” বিষয়টি তিনি যে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে চান, তা গৌতমবাবুর কথায় স্পষ্ট।
আবাসন দফতরের দুর্নীতির প্রসঙ্গ কার্যত উড়িয়ে দিয়ে গৌতমবাবু বলেন, “আমার মনে হয়, সিআইডি তিনটি বিষয়ে জানতে চাইতে পারে। এক, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে দলের এক নেতা ও মন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। সে ব্যাপারে আমি কিছু জানি কি না। দুই, মমতা ও তাঁর পরিবারের বিষয় সম্পত্তি যে ভাবে বেড়েছে, সে ব্যাপারে আমি কিছু জানি কি না। তিন, মুকুল রায় কোথায় টাকা রাখেন, কার কাছে রাখেন, সে ব্যাপারে আমি কিছু জানি কি না।” গৌতমবাবুর কথায় স্পষ্ট তিনি সরাসরি মমতা ও মুকুলকে পাল্টা আক্রণের পথে যেতে চান। চন্দনবাবুর সঙ্গে সিপিএমের কোনও সম্পর্ক না থাকলেও তিনি জ্যোতিবাবুর ছেলে। স্বাভাবিক ভাবেই জ্যোতিবাবুর নাম জড়িয়ে পড়লে সিপিএমের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে, এ বিষয়টিও সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব মাথায় রাখছেন।
মমতা-সহ তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা প্রায়ই গৌতমবাবুর সমালোচনা করে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন। গৌতমবাবু পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে তাঁকে গ্রেফতার করা হোক। এর আগে সিপিএমের প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও সিআইডি দুর্নীতির দায়ে তদন্ত শুরু করেছিল। কিন্তু কিছু না-পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তদন্ত বন্ধ করে দিতে হয়। গৌতমবাবু মন্ত্রী থাকাকালীন আবাসন দফতর বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যৌথ অংশীদারিতে নিউটাউনে আবাসন প্রকল্প তৈরি করেছিল। তার মধ্যে চন্দনবাবুর সংস্থা গ্রিন ফিল্ডও ছিল।
গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০০৪ সালে আবাসন দফতর বিনা টেন্ডারে চন্দনবাবুর সংস্থাকে দু’টি আবাসন প্রকল্পর জন্য জমি দিয়েছে। এর ফলে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ২০ কোটি টাকা। সম্প্রতি আবাসন দফতরের বিশেষ অডিটে ওই বেনিয়ম ধরা পরে। তার পরেই এপ্রিল মাসে আবাসন দফতরের সচিবের পক্ষ থেকে গৌতম দেব-সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের তালতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ দায়ের করার কয়েক দিনের মধ্যেই আবাসন দফতর তদন্তভার তুলে দেয় সিআইডির হাতে।
গ্রিন ফিল্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওই আবাসনে মধ্য ও উচ্চবিত্তদের জন্য ফ্ল্যাট তৈরির পাশাপাশি নিম্নবিত্তদের জন্যও ফ্ল্যাট তৈরির কথা ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গ্রিন ফিল্ডের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল, নির্দিষ্ট সময়ে আবাসন তৈরি না হলে জরিমানা-সহ আবাসন দফতরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু তা না দেওয়ায় সরকারের আরও ১১ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
এ দিন গৌতমবাবুর সল্টলেকের বাড়িতে কেয়ারটেকার ছাড়া অন্য কেউ ছিলেন না। বাড়ির কেয়ারটেকার তরুণ চট্টোপাধ্যায় সিআইডির সমন নিতে অস্বীকার করেন। এর পরে সিআইডির অফিসারেরা জানতে চান, কখন গৌতমবাবুকে পাওয়া যেতে পারে। কেয়ারটেকার জানান, সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে বাড়ির সবাই বাইরে বেরিয়ে যান। এর পরে সিআইডি অফিসারেরা দক্ষিণ বিধাননগর থানায় সমন রেখে আসেন। থানার পুলিশ ওই সমন গৌতমবাবুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেবে। |