মরলে দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে মরব, বলত ছেলে। সেই কাজ ওরা (মাওবাদী) এক বছরও করতে দিল না! পুত্রশোকে কাতর বীণা দেবনাথের চোখের জল শুকিয়ে গিয়েছে। বারবার বলছিলেন ওই কথা। সেই সুরে মিশে ছিল তীব্র ঘৃণাও, “ছেলেটা তো দেশরক্ষার কাজই করত। ওরা গুলি চালিয়ে ওর সব স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা শেষ করে দিল!”
ছেলেবেলা থেকেই ‘দেশরক্ষা’র স্বপ্ন দেখতেন গোপালনগরের চক-চৌবেড়িয়া গ্রামের সুকান্ত দেবনাথ। যোগ দেন আরপিএফে। জীবিত থাকলে আজ, শনিবার চাকরির এক বছর পূর্ণ হত বছর সাতাশের ওই যুবকের। বৃহস্পতিবার পটনাগামী ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে মাওবাদীদের গুলিতে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হন তিনি। শুক্রবার রাত পৌনে দশটায় পূর্বা এক্সপ্রেসে তাঁর দেহ আসে হাওড়া স্টেশনে। সিআরপিএফ জওয়ানরা দেহ পৌঁছে দেন গ্রামের বাড়িতে।
গ্রামের প্রান্তে ইটের দেওয়ালের উপরে টিনের ছাউনি দেওয়া একচিলতে ঘর সুকান্তদের। |
বাবা রতনবাবু এক ফালি জমিতে চাষাবাদ করে সুকান্তকে পড়াশোনা শিখিয়েছিলেন। ইদানীং আর কাজ করতে পারতেন না প্রৌঢ়। সুকান্তের আয়েই সংসার চলত। এত দিন টিভি বা খবরের কাগজ থেকে মাওবাদী হানায় নেতা বা পুলিশের মৃত্যুর খবর জেনেছেন রতনবাবু। একই ভাবে যে ছেলের মৃত্যুসংবাদও শুনতে হবে তা ভাবতেই পারেননি।ওই বাড়িতে শুক্রবার ভেঙে পড়েছিল গ্রাম। তখনও সুকান্তের দেহ আসেনি। মা বীণাদেবী ঘন ঘন জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। তাঁর ক্ষোভ, “সরকার কী ওদের (মাওবাদী) বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে? আর কত মায়ের কোল খালি হবে?” পরক্ষণেই তাঁর মনে পড়ে যাচ্ছিল, “একুশ দিন আগে ছুটি কাটিয়ে ফেরে। বুধবার সন্ধ্যাতেও ওর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি।” |
ভাল ফুটবল খেলতেন সুকান্ত। আরপিএফের চাকরিতে তাঁর প্রথম কর্মস্থল ছিল মহারাষ্ট্র। মাস দুয়েক কাজ করছিলেন বিহারে। বাবা রতনবাবুর আক্ষেপ, “ভেবেছিলাম, বিয়ে দেব। সব শেষ হয়ে গেল।” সুকান্তের ছেলেবেলার বন্ধু পিন্টু দেবনাথ বলেন, “এক সঙ্গে কত ফুটবল খেলেছি।” প্রতিবেশী শশধর দেবনাথের কথায়, “বলত, মরলে দেশের জন্য কাজ করতে করতেই মরব। তাই-ই হল।”
সকলেরই প্রশ্ন, মাওবাদীরা আর কত রক্ত ঝরাবে?
|