রিওর রাস্তায় চলছে উদ্দাম সাম্বা। জ্বলজ্বল করছে নেইমারকে নিয়ে লেখা ব্যানারগুলো— “ইজ হি দ্য ফিউচার?” সারা বিশ্ব জুড়ে সমস্ত ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের সমবেত টুইট ‘ব্রিং ব্যাক দ্য গোল্ডেন টাইম’। ব্রাজিলীয় সান্ধ্য দৈনিকের হেডিং, “হে ঈশ্বর, নিজের দেশে যেন মুখ থুবড়ে না পড়ি!”
যে ব্রাজিল একটা সময় ছিল ফুটবলে ইতিহাস গড়ার দেশ, আজ তাদের সামনে উঠে দাঁড়ানোর লড়াই। শ্রেষ্ঠত্বের পরীক্ষায় বসার সময়। আশার পাশাপাশি আশঙ্কা! |
নিজেদের দেশে বিশ্বকাপের ঠিক এক বছর আগে মাঠ আর মাঠের বাইরেও কতটা তৈরি সংগঠক ব্রাজিল, তার মহড়া দেখার অপেক্ষায় ফুটবল-বিশ্ব। শনিবার রাতে উঠছে পর্দা। বিশ্বকাপের ড্রেস রিহার্সাল কনফেডারেশন কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে জাপানের সামনে ব্রাজিল।
গত সাত মাসের স্কোলারি জমানায় সাত ম্যাচে মাত্র দুটো জয় পেলেও, গত রবিবার ফ্রান্সকে ৩-০ হারিয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কনফেড কাপ খেলবে ব্রাজিলের তরুণ তারকারা বলে ধারণা ফুটবল বিশেষজ্ঞদের। প্রায় এক যুগ আগে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতানো কোচ স্কোলারির ৪-৪-২ ছকে ডেভিড লুইজ ও থিয়াগো সিলভা জুটিকে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন রেখে অস্কার, নেইমার ও হাল্ক-সহ সেন্টার ফরোয়ার্ড ফ্রেডকে নিয়ে চিরকালীন বিখ্যাত ব্রাজিল অ্যাটাক লাইন তৈরি হবে। শুধু প্রশ্ন, সেই আক্রমণ থেকে ব্রাজিলীয় ট্রেডমার্ক স্কিলের বিচ্ছুরণ কতটা ঘটবে? তার উপর নেইমারের হাঁটুতে সামান্য ব্যথা রয়েছে বলে খবর। যদিও জাপানের বিরুদ্ধে শুরু থেকে বার্সেলোনার নতুন তারকা নামবেন বলে ভরসা রাখছে ব্রাজিল শিবির। |
নিজের সদ্য ছেড়ে আসা ক্লাব স্যান্টোসের জার্সির ফর্ম দেশের বিখ্যাত হলুদ-নীল জার্সিতে এখনও পুরোপুরি দেখাতে না পারলেও তা নিয়ে চিন্তিত নন ব্রাজিলের নতুন ‘পোস্টার বয়’ নেইমার। “আমি গোল করি কি না করি, ব্রাজিলের জার্সি গায়ে চাপানোটাই গর্বের ব্যাপার। ব্রাজিলের হয়ে প্রতিটা ম্যাচেই আমি নিজের সেরাটা দেব,” কনফেড কাপের প্রাক্কালে বলেছেন নেইমার। নেইমারের জাতীয় কোচ আবার মনে করছেন, এই ব্রাজিল জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় না রাখতে পারলেও আগের চেয়ে অনেক উন্নতির পথে। “ব্রাজিল আগের চেয়ে অনেক ভাল খেলছে। কনফেড কাপে ভাল করার জন্য সর্বশক্তি লাগিয়ে দেব আমরা,” বলে স্কোলারি যোগ করছেন, “এই টুর্নামেন্টেই দেখে নেব সত্যিকারের চাপের মুখে আমাদের ফুটবলাররা কে কী রকম খেলে!” |
অন্য দিকে, জাপান আবার বেশ কয়েকটা ম্যাচের পর পুরোশক্তি নিয়ে শনিবার নামছে। দলে কোনও চোট সমস্যা না থাকায় ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেদের তরুণ শক্তি শিনজি কাগাওয়ার পাশে হন্ডা, মাইদা, ইন্টার মিলান তারকা ইউকি নাগাতোমো-রা থাকবেন। প্রথম দেশ হিসাবে ২০১৪ বিশ্বকাপের টিকিট পাওয়া জাপান দলের কোচ আলবার্তো জাকারোনি প্রথম বার ব্রাজিলকে হারাতে মরিয়া। তাঁর সেরা বাজি কাগাওয়া-ও বলছেন, “গ্রুপে ব্রাজিল, ইতালির মতো সুপারপাওয়ার থাকলেও আমরাও ভাল করব। বিশ্বকাপের এক বছর আগে আমরা কতটা তৈরি তার প্রমাণও দেব।”
|
সাম্বার তালে |
পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল নিজের দেশে কনফেড কাপে হ্যাটট্রিকের সামনে। গত দু’টো কনফেড কাপে (২০০৫ ও ২০০৯) পেলের দেশই চ্যাম্পিয়ন। |
হেড কোচ স্কোলারির ‘দ্বিতীয় ইনিংসে’ (২০১২ নভেম্বর থেকে) সাফল্য ২৮.৫৭%। যেখানে প্রথম বারে (২০০১-’০২) সাফল্য ছিল ৭৫%। আর মেনেজেসের ৪-২-৩-১ পাল্টে স্কোলারির ব্রাজিল খেলছে ৪-৪-২ ছকে। |
|
চেলসির লুইজ |
জাপানের বিরুদ্ধে ব্রাজিলের সম্ভাব্য প্রথম একাদশের ন’জন ফুটবলার বায়ার্ন মিউনিখ, বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসি, প্যারিস সাঁ জাঁ-র মতো হেভিওয়েট ইউরোপিয়ান ক্লাবের প্লেয়ার। শুধু পউলিনহো ও ফ্রেড খেলেন স্বদেশীয় ক্লাবে। |
দু’দেশের শেষ ম্যাচে (অক্টোবর ২০১২) ব্রাজিল নেইমারের জোড়া গোলে ৪-০ জিতেছে। জাপানের সঙ্গে ১১ সাক্ষাতে ব্রাজিল অপরাজিত। জয় ৯। ড্র ২। |
|
শক্তি |
এ বছর ৬ ম্যাচে ব্রাজিলের জয় মাত্র ১ হলেও তারা হেরেছেও মাত্র ১টি। মাঝমাঠে অত্যাধুনিক ‘ডাবল পিভট’ সিস্টেমে পউলিনহো-গুস্তাভো জুটি অ্যাটাকিং থার্ডে ফ্রেড-নেইমার জোড়া স্ট্রাইকারকে মুহুর্মুহু বল বাড়ানোর পাশাপাশি দুই সেন্ট্রাল ব্যাক থিয়াগো সিলভা-ডেভিড লুইজের সামনে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন হয়েও ওঠেন বিপক্ষের যে কোনও কাউন্টার অ্যাটাকের সময়। |
সফল পউলিনহো |
|
দুর্বলতা |
আলভেজ ফর্মে নেই |
অস্কারকে প্লে-মেকারের ভূমিকা থেকে সরিয়ে রাইট উইংয়ে খেলানোয় মাঝমাঠে ব্লকিং তেমন দেখা যাচ্ছে না। দানি আলভেজ বরাবরের মতো ডান দিক দিয়ে ঘনঘন ওভারল্যাপ করার সময় সেন্ট্রাল ব্যাকেদের কভারিং ঠিকঠাক হচ্ছে না। দাতের অভাব বোধ হলেও তিনি আবার স্কোলারির প্রথম পছন্দ নন। |
|
|
|
আজ কনফেডারেশন কাপে
গ্রুপ-এ ব্রাজিল বনাম জাপান
(ব্রাসিলিয়া, রাত ১২-৩০টা)
|