|
|
|
|
বেশি আক্রমণ নয়, নির্দেশ রাজনাথের |
নীতীশ-বিদায় অনিবার্য, চেষ্টা দরজা খুলে রাখার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও পটনা |
বিজেপি-র সঙ্গ ছাড়ার দিন যে ক্রমে ঘনিয়ে আসছে, নিজেই তা কার্যত স্বীকার করে নিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। আজ ‘সেবা যাত্রা’ সেরে পটনা ফেরার পরে বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “জেডিইউ-বিজেপি সম্পর্ক নিয়ে শেষ কথা আমি বলতে পারব না। তবে পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হয়ে উঠছে।” এর পরেই নীতীশের মন্তব্য, “দুয়া দেতে হ্যায় জিনে কী, দাওয়া দেতে হ্যায় মরনে কী।” (দীর্ঘায়ু কামনা করছে, অথচ এমন ওষুধ দিচ্ছে যাতে মারা যাই।) যে মন্তব্যের ব্যাখ্যা হিসেবে জেডিইউ শিবির বলছে, বিজেপি তাদের জোটে ধরে রাখতে চাইলেও মোদীকে তুলে ধরে এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে, যাতে জোটে থাকা চলে না।
জোটের ভবিষ্যৎ কী হবে তা ঠিক করতে কাল থেকে দু’দিনের বৈঠক বসছে নীতীশের বাসভবনে। তবে বিদায়ের ঘণ্টা যে বেজে গিয়েছে, তা মান নিচ্ছেন দু’পক্ষের নেতারাই। বিহার থেকে আসা বিজেপি-র এক শীর্ষস্থানীয় নেতা আজ বলেন, “খেলা শেষ। নীতীশ জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। ঘোষণাটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।” বিজেপি শীর্ষ নেতারা এ ক’দিন নীতীশকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মোদীর নাম যখন ঘোষণা করা হয়নি, তখন কেন তিনি কেন জোট ছাড়তে চাইছেন! কিন্তু সঙ্ঘের অবস্থানের বিপরীতে গিয়ে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হবে না, এমন স্পষ্ট আশ্বাস তাঁদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে তাঁরাও এখন নীতীশকে জোটে রাখার জন্য জোরাজুরি করছেন না। নীতীশের সঙ্গে যে বিজেপি নেতার সম্পর্ক সব চেয়ে ভাল, সেই অরুণ জেটলিও এখন ছুটি কাটাতে বিদেশে। |
|
সাংবাদিকদের মুখোমুখি নীতীশ কুমার। শুক্রবার পটনা বিমানবন্দরে। ছবি: পিটিআই |
রাজনাথ সিংহরা এখন চাইছেন, আপাতত জোট ছাড়লেও ভবিষ্যতে নীতীশের জন্য দরজা খুলে রাখতে। তাই বিজেপি সভাপতি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন জোট ভাঙলেও নীতীশ-বিরোধিতা এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া যাবে না, যাতে জেডিইউ বিপাকে পড়ে। যদিও বিহারের বিজেপি নেতারা নীতীশ-বিদায়ের সম্ভাবনায় যথেষ্ট খুশি। তাঁরা মনে করছেন, নীতীশ এক বার জোট ছাড়লে মোদী-ঝড়ে তাঁকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে।
নীতীশের দলের উপরে চাপ বাড়িয়ে আজ তাদের বিরুদ্ধে বিহারে বিধায়ক ভাঙানোর চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন প্রদেশ বিজেপি নেতারা। উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সুশীলকুমার মোদীর সরকারি বাসভবনে বিজেপি মন্ত্রীদের বৈঠক শেষে দলের রাজ্য সভাপতি মঙ্গল পাণ্ডে বলেন, “জেডিইউ আমাদের বিধায়ক কেনার চেষ্টা করছে। এটা অগণতান্ত্রিক।”
বিজেপি-র উপরে পাল্টা চাপ বাড়াচ্ছে জেডিইউ-ও। ২৩ জুন একটি সম্মেলনে যোগ দিতে পটনা যাবেন রাজনাথ। সে দিন পটনায় স্কুলের মাঠে তিনি সভাও করবেন। কিন্তু বিহার প্রশাসন সে সভা করার অনুমতি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন মঙ্গল।
কিন্তু নীতীশ শেষ পর্যন্ত এনডিএ ছাড়তে চাইছেন কেন? গত ক’দিন ধরে জেডিইউ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সবিস্তার কথার পরে বিজেপি নেতাদের ধারণা, লালুপ্রসাদের হাতে থাকা সংখ্যালঘু ভোট টানতে মরিয়া নীতীশ। তাই তাঁকে মোদীর বিরোধিতা করতে হচ্ছে। তা ছাড়া, মোদীকে দিয়ে বিহারে প্রচার করালে নীতীশের অনগ্রসর শ্রেণির ভোটেও ক্ষয় হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন জেডিইউ নেতারা।
এখন বিহারে নিজের শক্তি বাড়িয়ে যত সম্ভব বেশি আসন জেতার চেষ্টা বিজেপি করবেই। কিন্তু রাজনাথ চান, সেটা করতে গিয়ে নীতীশের সঙ্গে তিক্ততা যেন এমন পর্যায়ে পৌঁছে না যায়, যাতে তাঁর ফের এনডিএ-তে যোগ দেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, একার ক্ষমতায় কেন্দ্রে
ক্ষমতা দখল করা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে বিজেপি নেতাদের মধ্যেই সংশয় রয়েছে।
তাই লালকৃষ্ণ আডবাণীরা বরাবর চেয়েছেন, বিজেপি শরিকদের আস্থা অর্জন করুক। এনডিএ-র সম্প্রসারণ ঘটাক। মোদীকে তুলে ধরলে তা করা যাবে না। তুলে ধরতে হবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কোনও মুখকে। নীতীশের জোট ছাড়ার প্রস্তুতিকে সামনে রেখে দলীয় স্তরে আরও এক বার চাপ বাড়ানোর কৌশল নিচ্ছেন আডবাণী। তাঁর ঘনিষ্ঠ সুষমা স্বরাজও আজ টুইট করেন, “একমাত্র ঐক্যবদ্ধ বিরোধীরাই কংগ্রেসকে হারাতে পারে। যখনই বিরোধীরা এককাট্টা হয়েছে, তখনই কংগ্রেস হেরেছে। তাই এনডিএ-র ঐক্য ঐতিহাসিক ভাবে জরুরি। এনডিএ-কে একজোট রাখতে সব চেষ্টা করতে হবে।”
সঙ্ঘ পরিবারের যুক্তি, আগে বিজেপি-কে নিজের চেষ্টায় যতটা বেশি সম্ভব আসন পেতে হবে। তবে জোটের উপর তার নিয়ন্ত্রণ থাকবে। আর মোদীকে ছাড়া আসনবৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা তাঁকেই চাইছেন।
তাই বর্তমানের কথা ভেবে নীতীশকে বিদায় দিচ্ছেন রাজনাথরা। ভবিষ্যতের কথা ভেবে খুলে রাখছেন ফেরার দরজাও।
|
পুরনো খবর: নীতীশকে পাশে পেতে মরিয়া কংগ্রেস |
|
|
|
|
|