অস্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা
নীতীশকে পাশে পেতে মরিয়া কংগ্রেস
বিজেপি-সংযুক্ত জনতা দল (জেডিইউ) বিচ্ছেদ সুনিশ্চিত করে লোকসভা ভোটের আগে নীতীশ কুমারকে পাশ পেতে জোরালো চেষ্টা শুরু করে দিলেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।
লোকসভা নির্বাচনে দলের প্রচারের মুখ হিসেবে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে তুলে ধরায় নীতীশ কুমারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ইতিমধ্যেই খাদের কিনারায় এসে পৌঁছেছে। এই অবস্থায় লালকৃষ্ণ আডবাণীকে সামনে রেখে নীতীশকে এনডিএ জোটে ধরে রাখার ব্যাপারেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রাজনাথ সিংহরা। কিন্তু বিজেপি-র সেই তৎপরতা দেখেই আজ নীতীশকে পাল্টা চাপে ফেলতে নেমে পড়ে কংগ্রেস। কংগ্রেসের বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদী সাম্প্রদায়িক, আর আডবাণী ধর্মনিরপেক্ষ এই যুক্তি খাটবে না। আডবাণী যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ পুঁতেছিলেন, মোদী সেই গাছেরই ফল। সুতরাং মোদীর পরিবর্তে আডবাণীকে সমর্থন জানিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজা তোলা যায় না।
কংগ্রেসের অন্দরমহলের অনেকেই মনে করছেন, এ কথা বলে আসলে বিজেপি-নীতীশ বিচ্ছেদ সুনিশ্চিত করতে চাইছেন দলীয় নেতৃত্ব। কারণ, কংগ্রেস নেতারাও বুঝতে পারছেন, মোদী বিরোধিতায় নীতীশ যতটা এগিয়ে গিয়েছেন, তার পর পিছু হটলে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে আডবাণীকে সামনে রেখে যাতে কোনও সমঝোতা না হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে চান কংগ্রেস নেতারা। সেই সঙ্গে লোকসভা ভোটের আগে নীতীশের সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষে জোট সম্পর্ক তৈরি করতেও কংগ্রেসের রাজনৈতিক ম্যানেজাররা সক্রিয়।
এ ব্যাপারে কংগ্রেসের যুক্তি অত্যন্ত সরল। দলের শীর্ষ নেতাদের কথায়, লোকসভা ভোটে যদি নীতীশের সঙ্গে জোট হয় এবং সেই জোটে যদি রামবিলাস পাসোয়ানকে সামিল করা যায়, তা হলে জোটের ভাল ফল করার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, সে ক্ষেত্রে বিহারে বিজেপি-র আসন কমে একটি বা দু’টিতে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু তার থেকেও বড় বিষয় হল, ভোটের পর লালু প্রসাদেরও কংগ্রেস ছাড়া যাওয়ার জায়গা থাকবে না। কারণ, লালু কোনও অবস্থাতেই বিজেপি-র হাত ধরতে পারবেন না। ফলে ঠিক যে ভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারে উত্তরপ্রদেশের দুই প্রতিপক্ষ সপা এবং বিএসপি একই সঙ্গে বাইরে থেকে সমর্থন জুগিয়েছে, এ ক্ষেত্রেও তেমন পরিস্থিতি গড়ে তোলা সম্ভব।
কিন্তু এ সবই কংগ্রেসের আগাম অঙ্ক। আসল প্রশ্নটা থেকেই গিয়েছে। তা হল, নীতীশ কুমার কী করবেন?
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী গত কালই কলকাতায় তাঁর দূত হিসেবে দলের মহাসচিব কে সি ত্যাগীকে পাঠিয়েছিলেন। ত্যাগী মহাকরণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শুধু বৈঠকই করেননি, ফোনে নীতীশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কথাও বলিয়ে দিয়েছেন। এর পরেই ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠন নিয়ে জল্পনা নতুন মাত্রা পায়। জাতীয় স্তরেও এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
এ দিন ‘সেবা যাত্রা’য় রওনা হওয়ার আগে পটনায় নীতীশকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছিল, আমি এই ফ্রন্টের নেতৃত্ব দিতে চাই না। তবে উন্নয়নের জন্য এই রাজ্যগুলির ঐক্যের প্রয়োজন আছে।”
এই ফ্রন্টের মূল কারণ হিসেবে তিনি অর্থনীতিকেই ভিত্তি ধরছেন। নীতীশ বলেন, “পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সমস্যা আমরা বুঝতে পারছি। সেই কারণে এই রাজ্যগুলির ঐক্যের প্রয়োজন। এই রাজ্যগুলি একজোট হলে অর্থনৈতিক ব্লক তৈরি করা যাবে।” তবে ফ্রন্ট যে এখনও আলোচনাস্তরে আছে, তা বুঝিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “এই ফ্রন্ট এখন সবে মাত্র একটা ধারণার জায়গায় আছে। পরিণত হতে সময় লাগবে।” প্রসঙ্গত, এ দিন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও ফেডেরাল ফ্রন্ট তথা নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের পক্ষেই কথা বলেছেন।
বিজেপি কিন্তু এত সহজে নীতীশকে ছাড়তে নারাজ বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ থেকে শুরু করে দলের প্রাক্তন সভাপতি নিতিন গডকড়ীর মতো নেতারা আজ বারবার নীতীশ ও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু তার পরেও সংযুক্ত জনতা দলের তরফে ভবিষ্যৎ কৌশল সম্পর্কে একটা ধোঁয়াশা রেখে দেওয়া হয়েছে। শুধু স্পষ্ট করে একটা কথাই নীতীশ শিবির বলছেন। তা হল, গুজরাত দাঙ্গায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে যদি বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে তুলে ধরে, তা হলে তাদের সঙ্গে জোটে থাকা জেডিইউয়ের পক্ষে কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।
বিহার রাজনীতির সম্পর্কে ওয়াকিবহালরা বলছেন, নীতীশের সামনে তিনটি বিকল্প রয়েছে। এক, বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়ে লোকসভা ভোটে একলা চলা। সে ক্ষেত্রে কিন্তু নীতীশের ভাল ফল হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা নেই। কারণ, মোদী বিরোধিতায় সুর চড়িয়েও জাতীয় স্তরে কোনও বিকল্প দেখাতে পারবেন না নীতীশ। তাই এর পরেও বিহারে সংখ্যালঘু ভোটের সবটাই যে তিনি পাবেন, তার নিশ্চয়তা নেই। উপরন্তু বিজেপি-র সঙ্গ ছাড়লে উচ্চবর্ণের হিন্দু ভোটও তিনি হারাতে পারেন। দুই, কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন নীতীশ। সে ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু ভোট যেমন পাবেন, তেমনই কিছু শতাংশ হলেও উচ্চবর্ণ, দলিত এবং পিছিড়ে বর্গের ভোটও যেতে পারে তাঁর ঝুলিতে। জাতপাতের সমীকরণে তাতে ফল বিশেষ খারাপ হওয়ার আশঙ্কা নেই। তা ছাড়া কংগ্রেস হাত ধরলে কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার যদি বিহারকে বিশেষ অর্থনৈতিক মর্যাদা দিতে সম্মত হয়, তাকেও ভোটে অস্ত্র করতে পারবেন নীতীশ। তৃতীয় বিকল্প হল, বিজেপি-র সঙ্গে প্রকাশ্যে সম্পর্ক না রেখেও তলে তলে সমঝোতা করে চলা। যেখানে বিজেপি-র শক্তি রয়েছে, সেখানে জেডিইউ দুর্বল প্রার্থী দেবে। উল্টো দিকে আবার জেডিইউয়ের এলাকায় বিজেপি বিশেষ শক্তিক্ষয় করবে না। কিন্তু এই বিকল্পও খুব একটা সুবিধাজনক হবে বলে কেউ মনে করছেন না।
কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, পরে নীতীশ যা-ই করুন না কেন, এখন তাঁর পক্ষে এতটা এগিয়ে এসে তার পরে মোদীর সঙ্গ নেওয়া সম্ভব নয়। তাতে শুধু যে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, তা-ই নয়, জেডিইউয়ের রাজনৈতিক অস্তিত্বই বিপন্ন হতে পারে। কারণ, সে ক্ষেত্রে এক দিকে সংখ্যালঘু ভোট হারাবেন নীতীশ। অন্য দিকে উচ্চবর্ণের ভোটের জন্য বিজেপি-র মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা ছাড়া পথ থাকবে না।
এই অবস্থায় নীতীশ ঘনিষ্ঠ এক জেডিইউ নেতা অবশ্য আজ বলেন, বিজেপি-র সঙ্গ ছাড়লেও পরের কৌশল এখনই না-ও প্রকাশ করতে পারেন নীতীশ। লোহিয়াপন্থী এই কুর্মী নেতা সে জন্য হয়তো আরও কিছুটা সময় নেবেন।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.