|
|
|
|
তৃতীয় ফ্রন্টের তোড়জোড় |
আসরে বামেরাও, কথা শরদ-মুলায়মদের সঙ্গে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
এ বার আর তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার চেষ্টা করা হবে না বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে বাম দলগুলি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে ‘ফেডেরাল ফ্রন্ট’-এর ডাক দিয়েছেন, তখন বাম-নেতারা হাত গুটিয়ে বসে থাকেন কী করে? বিশেষ করে সে ক্ষেত্রে যখন তাঁরা কংগ্রেসকে সমর্থন দিতে মুখিয়ে এমন বার্তা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে বামেদের নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্কে ভাঙন ধরতে পারে।
তাই ফের দিল্লির ময়দানে নেমে পড়েছেন সিপিএম-সিপিআই নেতারা। দুপুরে সীতারাম ইয়েচুরি জেডিইউ নেতা শরদ যাদবের বাড়িতে গিয়ে বৈঠক করছেন। তো সন্ধ্যায় এ বি বর্ধন যাচ্ছেন সমাজবাদী নেতা মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গে দেখা করতে। টেলিফোনেও নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে কথা হচ্ছে বাম নেতাদের। তবে এত সব করলেও তাঁরা যে মমতার পাল্টা তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন, তা প্রকাশ্যে অন্তত স্বীকার করতে রাজি নন কেউই।
এমনিতেই তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়ে অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে বামেদের অন্দরে যথেষ্ট দ্বিধা ছিল। মমতা ‘ফেডেরাল ফ্রন্ট’ গঠনের ডাক দিয়ে সেই দ্বিধা যে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন, তা বাম-নেতারা মানছেন। কেন এই দ্বিধা? গত লোকসভা নির্বাচনের আগে ইউপিএ-সরকারের থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের পর মায়াবতীকে সামনে রেখে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠন করেছিলেন প্রকাশ কারাট। কিন্তু শুধু জাতীয় স্তরে নয়, পশ্চিমবঙ্গেও তাঁর এই চাল ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছিল। দলেরও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল কারাটকে। |
|
তাই এ বার আর কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক। আগেভাগেই ঘোষণা করে দিয়েছেন, জাতীয় স্তরে কোনও তৃতীয় বিকল্প এখনই সম্ভব নয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেরলে এক অনুষ্ঠানেও সে কথা বলতে শোনা গিয়েছে কারাটকে। তিনি বলছেন, যদি কোনও তৃতীয় ফ্রন্টের সম্ভাবনা তৈরি হয়, তা ভোটের পরেই হবে। অথচ তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আজ পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি দিল্লিতে শরদ যাদবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বিজেপি-র সঙ্গে জেডিইউ-র সম্পর্ক এখন ভাঙনের মুখে। নীতীশ কুমারের সঙ্গে মমতার নিয়মিত কথা হচ্ছে। দু’দিন আগেই মহাকরণে গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করেছেন জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগী। দিল্লিতে শরদ যাদবের সঙ্গে ইয়েচুরির বৈঠক কি আসলে মমতার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে ওঠার চেষ্টা? ইয়েচুরির দাবি, বৈঠকে তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়ে কোনও কথা হয়নি। তাঁর যুক্তি, “আমরা বিকল্প ফ্রন্ট নয়, বিকল্প নীতি চাই।” তাঁরা কোনও তৃতীয় ফ্রন্টে যোগ দেবেন কি না, তা-ও এই বিকল্প নীতির উপরেই নির্ভর করছে বলে ইয়েচুরির মন্তব্য।
এ বি বর্ধন-মুলায়ম সিংহ যাদবের বৈঠকের সঙ্গেও তৃতীয় ফ্রন্টের কোনও সম্পর্ক রয়েছে বলে সিপিআই নেতারা মানতে রাজি হননি। নবীনের সঙ্গেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বর্ধনের আলোচনা হয়েছে সিপিআই সূত্রের দাবি। তবে, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজই মুলায়ম-পুত্র, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব মন্তব্য করেছেন, অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এবং প্রকাশ্যে মানতে রাজি না হলেও, ঘরোয়া আলোচনায় মমতার সঙ্গেই প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন বাম নেতারা। তাঁদের দাবি, মমতা যা-ই বলুন, নীতীশ বা নবীন কেউই তাঁর উপরে খুব বেশি ভরসা রাখছেন না। কারণ মমতা আগামী দিনে বিজেপি-র সঙ্গে হাত মেলাবেন কিনা, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। সেই তুলনায় আঞ্চলিক দলগুলির কাছে বামেরা অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য।
ইয়েচুরি মনে করছেন, বামেদের ছাড়া কোনও তৃতীয় ফ্রন্ট সম্ভব নয়। আর বর্ধন সরাসরিই মমতার ‘ফেডেরাল ফ্রন্ট’-এর ভাবনা
খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “ভোটারদের মধ্যে এটা কোনও
বিশ্বাস জাগাবে না। এখন প্রয়োজন এমন একটি অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি জোট, যারা বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প নীতি নিয়ে চলবে।”
সেই বিকল্প নীতি তৈরির জন্য ১ জুলাই দিল্লিতে চার বাম দলের জাতীয় কনভেনশনের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেখানেই একটি ‘অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি’ তৈরি হবে। তার ভিত্তিতেই লোকসভা ভোটে ময়দানে নামবেন বামেরা। আঞ্চলিক দলগুলির হাতেও এই কর্মসূচি তুলে দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী রাজ্যে রাজ্যে বামেদের সঙ্গে অন্য দলগুলির আসন সমঝোতা হবে। সিপিএম সূত্রে বলা হচ্ছে, বামেদের নিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠন হলে এই কর্মসূচির উপর ভিত্তি করেই হবে।
সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, দলের নেতাদের এই মাঠে নামা শুধু যে জাতীয় স্তরে নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব জাহিরের চেষ্টা, তা নয়। রাজ্য রাজনীতিতেও এর তাৎপর্য রয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বলেন, “মমতা যদি কেন্দ্রে তৃণমূলকে নিয়ে বিকল্প সরকার গঠনের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে পারেন, তা হলে সেই ঢেউতে তিনি লোকসভা নির্বাচনেও ফায়দা তুলবেন। সেখানে বামেরা যদি কোনও লড়াইতেই না থাকে, তা হলে রাজ্যেও ভোট কমতে পারে। সেই কারণে পশ্চিমবঙ্গ ও জাতীয় রাজনীতি, দু’ক্ষেত্রেই আমাদের ময়দানে নামাটা জরুরি। তাতে যদি ফল মেলে ভাল। না-হলে নতুন করে হারানোর কিছু নেই।”
|
পুরনো খবর: এক বামকে ফেরালেন জয়ললিতা, করুণাকে অন্য বাম |
|
|
|
|
|