|
|
|
|
এক বামকে ফেরালেন জয়ললিতা, করুণাকে অন্য বাম
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেডেরাল ফ্রন্টের ডাকে যখন পুবে তৎপরতা, দক্ষিণে সে সময়েই অন্য টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়েছে বামেরা! সেই ঘটনাপ্রবাহকেও দেখা হচ্ছে লোকসভা নির্বাচনের সম্ভাব্য সমীকরণের দৃষ্টিকোণেই।
তামিলনাড়ুতে ৬টি রাজ্যসভা আসনে নির্বাচন আগামী জুলাইয়ে। যে ৬ জনের মেয়াদ ফুরোচ্ছে, তার মধ্যে ডিএমকে এবং এডিএমকে-র দু’জন করে এবং কংগ্রেস ও সিপিআইয়ের এক জন করে সাংসদ আছেন। দলের জাতীয় সম্পাদক ডি রাজাকে যাতে আবার রাজ্যসভায় পাঠানো যায়, তার জন্য জয়ললিতার সাহায্য চেয়েছিলেন সিপিআই নেতৃত্ব। তাঁদের ফিরিয়ে দিয়েছেন জয়ললিতা। ডিএমকে-র পুরোধা এম করুণানিধি আবার তাঁর মেয়ে কানিমোঝিকে ফের রাজ্যসভার সাংসদ দেখতে চান। কিন্তু হাতে পর্যাপ্ত সংখ্যা নেই। তাই তিনি সাহায্য চান সিপিএমের! এই টানাটানির বাজারে সিপিএম-সিপিআই নিজেদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনায় ঠিক করেছে, তামিলনাড়ুর দুই প্রধান যুযুধান দলকে ছেড়ে তারা অন্য রাস্তার সন্ধান করবে! কারণ, মাথায় রয়েছে লোকসভা ভোট।
তামিলনাড়ুর বিধানসভার এখন যা বিন্যাস, তাতে জয়ার এডিএমকে ১৫১ জন বিধায়ক নিয়ে চার জন সাংসদকে সরাসরি জেতাতে পারবে। সহযোগী কিছু দলকে নিয়ে পঞ্চম আসনও বার করে নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব। ডিএমকে-র ঝুলিতে রয়েছে ২৩ বিধায়কের ভোট। কিন্তু রাজ্যসভার সাংসদ হতে গেলে সে রাজ্যে অন্তত ৩৪টি প্রথম পছন্দের ভোট দরকার। তাই সিপিএমের ১০ বিধায়কের সমর্থন পেলে ষষ্ঠ আসনে মেয়েকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারেন করুণানিধি। অন্য কোনও দলের কাছ থেকে শুধু একটি ভোট জোগাড় করতে হবে। তাই তামিলনাড়ুর সিপিএম নেতৃত্বকে বার্তা দেন তিনি।
সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব ডিএমকে-র প্রতি করুণা দেখাতে উৎসাহী নন! দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের রসিকতা, “দেখা গেল সমর্থন নিয়ে জিতে ডিএমকে সাংসদ তিহাড় জেলে বসলেন!” টু জি কেলেঙ্কারি মাথায় রেখেই দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ডিএমকে-কে লোকসভা ভোটের আগে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে নারাজ সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতারা। পলিটব্যুরো সূত্রের ইঙ্গিত, তার চেয়ে সিপিআই প্রার্থী দিলে (সে রাজা বা অন্য কেউ) তাঁকেই সমর্থন করা ভাল।
সিপিএমের ১০, সিপিআইয়ের ৮ এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের এক বিধায়ক মিলে সিপিআই প্রার্থীকে জেতানো সম্ভব নয়। কিন্তু বাম নেতারা মনে করছেন, পাটিগণিত দিয়ে নয়, ‘রাজনীতি’ দিয়ে পরিস্থিতি বিচার করতে হবে। বাম সূত্রেই ইঙ্গিত, তিনটি সম্ভাবনা ভাবনাচিন্তায় রয়েছে। এক, কাউকেই সমর্থন না-করে ভোটদানে বিরত থাকা। দুই, সিপিআই নিজেরাই প্রার্থী দিল, সিপিএম তাদের সমর্থন করল। প্রার্থী না-জিতলেও নিজেদের স্বতন্ত্র অবস্থান বুঝিয়ে দেওয়া গেল। আর তিন, ‘আম্মা’র এডিএমকে-কেই সমর্থন করা! কিন্তু যে আম্মা সিপিআইয়ের আর্জি না-শুনে ৫টি আসনেই নিজের প্রার্থী ঘোষণা করে দিলেন, তাঁকেই সমর্থনের প্রশ্ন আসছে কেন? সিপিআইয়ের এক কেন্দ্রীয় নেতার জবাব, “রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু হয় না। আর এখনই চূড়ান্ত কিছু বলার পরিস্থিতি আসেনি!” বামেদের মধ্যেই কেউ কেউ অবশ্য তামিলনাড়ুর প্রধান বিরোধী দল বিজয়কান্তের ডিএমডিকে-কে বাজিয়ে দেখার পক্ষপাতী। তবে ডিএমডিকে-র কয়েক জন বিধায়ক ইতিমধ্যেই জয়ার সঙ্গে দেখা করে বিভ্রান্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন! ফব-ও এখন তাদের একমাত্র বিধায়কের করণীয় ঠিক করার জন্য পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে।
ডি রাজা গত বার সাংসদ হন ডিএমকে-র সমর্থনে। কিন্তু দু’বছর আগের ভোটের সময় থেকে জয়ার সঙ্গে সখ্য হয়েছে বামেদের। আবার সেই জয়াই এখন সিপিআইকে খালি হাতে ফিরিয়েছেন! মোদীর সঙ্গে যে হেতু তাঁর সম্পর্ক ভাল, তাই ভবিষ্যতে এনডিএ-র দরজা খুলে রাখতে চেয়েই আম্মার যাবতীয় পদক্ষেপ, ধারণা রাজনৈতিক শিবিরের। এই অবস্থায় করুণানিধি সিপিএমকে বোঝাতে চেয়েছেন, কানিমোঝিকে এখন তারা সমর্থন করুক। ২০১৪-য় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য টি কে রঙ্গরাজনের রাজ্যসভার মেয়াদ যখন ফুরোবে, তখন ডিএমকে ‘কৃতজ্ঞতা’ ফিরিয়ে দেবে। তৃতীয় ফ্রন্টের স্বপ্ন দেখে হাত-পোড়ানো প্রকাশ কারাটেরা অবশ্য এত সহজে ভোলার পাত্র নন! |
|
|
|
|
|