বিয়ে করলেই চাকরি, জমি পাকা জামাইপাড়ার জামাইদের
বিয়ের পর বাপের বাড়ির পাশেই সংসার পাতেন ওই গ্রামের মেয়েরা। শ্বশুরবাড়ির কাছে থাকতে আপত্তি করেন না জামাইরাও!
রাজকন্যার সঙ্গে কার্যত অর্ধেক রাজত্বও যে হাতে পেয়ে যান তাঁরা।
একচিলতে জমি, সঙ্গে কারখানায় চাকরি— জামাইদের জন্য এমনই ব্যবস্থা করে দেন জামশেদপুর শিল্পাঞ্চলের লাগোয়া সরাইকেলা-খরসঁওয়া জেলার আসঙ্গি গ্রামের শ্বশুররা।
‘ঘরজামাই’ হতে চায়— এমন পাত্রই আগে খুঁজতেন গ্রামের সকলে। বাইরের শহরে বিয়ে দিলে মেয়েদের সব সময় দেখা যাবে না, সে চিন্তাতেই থাকতেন তাঁরা। সব সময় তেমন ছেলে পাওয়া যেত না। নতুন উপায় তখনই খুঁজে বের করেন সকলে মিলে।
আসঙ্গির বাসিন্দারা জানান, গ্রামের পাশেই বিঘের পর বিঘে ফাঁকা জমি ছিল। এলাকার কোনও মেয়েকে বিয়ে করলেই ওই জমির কিছুটা অংশ পাবেন জামাইএমনই প্রস্তাব ছড়িয়ে দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, শিল্পাঞ্চলে চাকরির ব্যবস্থার দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়।
ফল মেলে হাতেনাতেই।
চক্রধরপুরের সুবাহু প্রধানের মতো অনেকেই সেখানে পৌঁছে যান। বছর দশেক আগে সুবাহুর বিয়ে হয় আসঙ্গির মিতালির সঙ্গে। তাঁর কথায়, “টাকাপয়সার অভাব ছিল আগে। বিয়ের পর দেড় কাঠা জমি দেন শ্বশুরমশাই। চাকরিও পাই। ওই জমিতে বাড়ি তৈরি করেছি। পরিবার থাকে সেখানেই। যখন-তখন বাপের বাড়ি যাওয়া যায় বলে স্ত্রীও খুশি থাকেন।”
আসঙ্গি গ্রাম সংলগ্ন জামাইপাড়া। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।
জামাইদের বসতি সেই এলাকার নাম লোকমুখে এখন পরিচিত ‘জামাইপাড়া’ হিসেবেই।
তবে তাঁদের জামাইদের ‘ঘরজামাই’ বলতে আপত্তি আসঙ্গির শ্বশুর-শাশুড়িদের। অমূল্য প্রধানের কথায়, “ঘরজামাইরা তো শ্বশুরবাড়িতে থাকে। এ গ্রামের কোনও জামাই মেয়ের বাপের বাড়িতে থাকে না। আমি জামাইকে কিছুটা জমি দিয়েছিলাম। কিন্তু বাড়িটা তো ও নিজেই তৈরি করেছে। শুধু-শুধু কেনই বা ওকে ঘরজামাই বলব!”
আসঙ্গি গ্রামের লাগোয়া সেই জামাইপাড়ায় ঘুরে দেখা গেল, বিঘের পর বিঘে পড়ে থাকা ফাঁকা জমির একপাশে সপরিবারে রয়েছেন গ্রামের জামাইরা। দেড়-দু’কাঠা জমিতে ছোট্ট বাড়িও তৈরি করেছেন সকলে।
সরাইকেলা-খরসঁওয়া এবং পূর্ব সিংভূমের সীমানা-সংলগ্ন ওই এলাকার কাছেই যন্ত্রাংশ তৈরির শিল্পাঞ্চল। দু’দশক আগে সেখানে কাজের সন্ধানে যান পোটকার বাসিন্দা নারায়ণ মহাকুর। তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয় অমূল্যর মেয়ে নমিতার। নারায়ণের কথায়, “আমার বাবা-কাকাদের পরিবার অনেক বড়। দেশের বাড়িতে জায়গার সমস্যাও ছিল। চাকরির খোঁজে ঘুরতে ঘুরতে এখানে চলে এসেছিলাম। বিয়ের প্রস্তাব পাই তখনই। কারখানার কাছেই শ্বশুরমশাই দেড় কাঠা জায়গা দেন। তারপর থেকে এখানেই পরিবার নিয়ে থাকছি।”
জামাইষষ্ঠীর দিন শুধু শ্বশুরবাড়ির আদর আর জোড়া ইলিশ, না কি জমি-চাকরির নিশ্চিত বন্দোবস্ত কোন শ্বশুরের দিকে ঝুঁকবেন আগামী দিনের জামাইরা?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.