কালীঘাট মন্দিরের নিরাপত্তায় এ বার জোড়া পদক্ষেপ। থানায় মনিটর বসিয়ে মন্দিরের ভিতরে চালানো হবে নজরদারি। পাশাপাশি, বাধ্যতামূলক করা হবে সেবাইতদের পরিচয়পত্র।
দিনের বেশিরভাগ সময়েই দর্শনার্থীদের ভিড়ে ঠাসা থাকে কালীঘাট মন্দির। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী এই মন্দিরের নিরাপত্তার কথা ভেবে কালীঘাট থানায় দ্রুত মনিটর বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে থানায় বসেই পুলিশ দেখতে পাবে মন্দিরে কারা ঢুকছে, কী করছে। মন্দিরের উন্নয়ন নিয়ে এক জনস্বার্থের মামলায় ১৭ মে হাইকোর্ট একটি কমিটি গড়ার নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের নির্দেশে গড়া সেই কালীঘাট মন্দির উন্নয়ন কমিটি সম্প্রতি কালীঘাটে এ নিয়ে বৈঠক করে। কমিটির সম্পাদক তথা রাজ্যের পর্যটন সচিব বিক্রম সেন ছাড়া বৈঠকে ছিলেন কলকাতার পুর-কমিশনার, কেএমডিএ-র সিইও-সহ একাধিক পুলিশ অফিসার ও পুরসভার সিভিল, আলো ও নিকাশি দফতরের আধিকারিকেরা। কমিটি সূত্রের খবর, মন্দিরের ভিতরে থাকা ২২টি নজরদারি ক্যামেরা মনিটর করা হত মন্দিরের একটি ঘরে। থানায় মনিটর বসানোয় এ বার থেকে ওই সব নজরদারি ক্যামেরার ছবি দেখা যাবে থানার ভিতরে বসেই। মন্দিরের উপর সবসময় নজর রাখতেই এই ব্যবস্থা জরুরি বলে মনে করেছে আদালত। কমিটির এক সদস্যের কথায়, “মন্দিরে আসা নানা ধরনের লোকের উপর কড়া নজরদারির প্রয়োজন ছিল।”
হাইকোর্টের রায়ে আরও বলা হয়েছে, কালীঘাট মন্দিরে পাণ্ডা থাকবে না। কালীঘাট মন্দির কমিটির সভাপতি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মন্দিরে সাতশোরও বেশি সেবাইত আছেন, পাণ্ডা নেই। কালীঘাট মন্দির উন্নয়ন কমিটিও আদালতের নির্দেশ মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেবাইতদের এ বার থেকে পরিচয়পত্র নিয়ে মন্দির চত্বরে যাতায়াত করতে হবে। বিক্রমবাবু জানান, কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে কালীঘাট থানার পুলিশ দেবে ওই পরিচয়পত্র। মন্দিরে ঢোকা-বেরোনোর সময়ে ওই পরিচয়পত্র লাগিয়ে রাখতে হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে আদালতের এই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। |
নিরাপত্তার পাশাপাশি মন্দিরে আগত দর্শনার্থীদের কথা ভেবে ওই চত্বরে পানীয় জল ও পর্যাপ্ত শৌচাগার বানানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। যত শীঘ্র সম্ভব তা করতে পুরসভার সিভিল দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে কমিটি। বিক্রমবাবু জানান, পুজোয় নৈবেদ্যর ডালার দর নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। আদালতের নির্দেশ ১১, ২১, ৫১ ও ১০১ টাকার ডালা রাখতে পারবেন দোকানদারেরা। কোন ডালায় কী কী থাকবে তার তালিকাও দোকানের সামনে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। মন্দিরে পুজো দিতে আসা একাধিক মানুষের বক্তব্য, ডালা কিনতে গিয়ে নানা সমস্যা হত। আদালতে দর বেঁধে দেওয়ায় সুবিধা হবে। যদিও স্থানীয় এক বাসিন্দার বক্তব্য, “এর পরেও দোকানগুলি নির্দেশ না মানলে কী হবে?” বিক্রমবাবু বলেন, “ডালার দাম কেউ বেশি নিলে তা পুলিশকে দেখতে বলা হয়েছে। পুলিশ নজরদারি চালাবে। তা ছাড়া কারও অভিযোগ থাকলেও পুলিশকে জানাতে পারেন।” তাতেও কাজ না হলে কমিটি হস্তক্ষেপ করবে বলে কমিটি সূত্রে খবর।
এ দিকে কাউন্সিল অফ সেবাইত কমিটির কর্মসমিতির সদস্য মনোজমোহন চক্রবর্তী শুক্রবার বলেন, “আদালতের রায়ে ভাল-মন্দ দুই-ই আছে। কী ভাবে তা প্রয়োগ হবে দেখছি। কোথাও অসুবিধা হলে আবার আদালতের দ্বারস্থ হতে পারি।”
|