কালীঘাট মন্দিরের সর্বাঙ্গীন সুষ্ঠু পরিবেশ যদি রক্ষা করা না যায়, তা হলে আদালত রাজ্য সরকারকে মন্দির অধিগ্রহণ করার কথা বলবে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল প্রশ্ন তুলেছেন, দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে যদি পরিচ্ছন্ন ও ভক্ত-সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যায়, তা হলে কালীঘাট মন্দিরের ক্ষেত্রেও তা করা যাবে না কেন?
কালীঘাট মন্দির নিয়ে এক সেবায়েতের দায়ের করা জনস্বার্থের মামলা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শুনানি চলছে। হাইকোর্ট বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নির্দেশও দিয়েছে। অভিযোগ, সাময়িক ভাবে পরিবর্তন লক্ষ করা গেলেও আবার আগের অবস্থানে ফিরে গিয়েছে মন্দির ও মন্দির সংলগ্ন এলাকা।
কলকাতা হাইকোর্ট কালীঘাট মন্দিরের পবিত্রতা, নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা এবং মর্যাদা রক্ষায় বদ্ধপরিকর বলে শুক্রবার জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল। তিনি বলেছেন, সারা দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত যে মন্দিরে আসেন, সেই মন্দির যদি যথাযথ ভাবে পরিচালিত না হয়, তা হলে রাজ্য সরকারকে তা অধিগ্রহণ করতে বলবে আদালত।
রাজ্য সরকারের আইনজীবী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় হাইকোর্টে এ দিন একটি পরিকল্পনা জমা দিয়ে বলেন, রাজ্যের মুখ্য স্থপতি ওই পরিকল্পনা তৈরি করেছেন। রাজ্য সরকার সেই অনুযায়ী কালীঘাট মন্দিরের সংস্কার করতে চায়। তিনি বলেন, মন্দিরের ভিতরে এবং মন্দিরের গায়ে বসা সমস্ত দোকান তুলে দেওয়া হবে। তবে কোনও দোকানদারকেই রাজ্য সরকার পথে বসাতে চায় না। তাঁদের প্রত্যেককে মন্দিরের কাছাকাছি কালী টেম্পল রোডের এক প্রান্তে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। সরকারি আইনজীবী আদালতে বলেন, স্বর্ণালঙ্কার ও অর্থ মিলিয়ে ভক্তেরা বিগ্রহকে যা দেন, তিনি তাঁর কিছুই পান না। মন্দিরের দৈনিক আয় লুঠপাট হয়ে যাচ্ছে। স্বর্ণালঙ্কার দিলে খাতায় লেখা হয় ‘দেখে মনে হচ্ছে সোনার’। সেবায়েত ও পূজারিরা মন্দিরের জন্য কিছুই করছেন না, এই অভিযোগ করেন অশোকবাবু। মন্দিরের সিসিটিভি চলছে কি না, তা-ও দেখা হয় না। গর্ভগৃহে ক্যামেরা বসানো নিয়েও সমস্যা রয়েছে। এক-এক জন সেবায়েতের পাঁচ-ছটি করে দোকান রয়েছে।
মন্দির কমিটির পক্ষে প্রধান বিচারপতিকে জানানো হয়, মন্দিরের পরিচ্ছন্নতা দেখভালের জন্য দু’জন কর্মী আছেন। ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, যেখানে দৈনিক লক্ষাধিক ভক্ত আসেন, সেখানে দু’জন কর্মী উপরে পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব থাকাটা বিস্ময়কর। তিনি মন্দির কমিটিকে এজেন্সি নিয়োগ করতে বলেন। ওই এজেন্সি মন্দিরের ভিতর ও সংলগ্ন এলাকার পরিচ্ছন্নতা রক্ষার দায়িত্বে থাকবে। মন্দিরের কাছে একটি পুলিশ-পিকেট বসানোর পরামর্শ দেন প্রধান বিচারপতি। তারাই নিরাপত্তা ও সিসিটিভি ‘মনিটর’ করবে। গর্ভগৃহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করার কথা ভাবা হচ্ছে বলেও মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়, নিরাপত্তার জন্য টেম্পল রোড দিয়ে বিশেষ ভিআইপি ছাড়া কোনও গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হবে না। ভক্তেরা তা হলে স্বস্তিতে মন্দিরে যেতে পারবেন। এ দিন প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ সব পক্ষকে তাঁদের পরিকল্পনা নিয়ে এবং মন্দিরের আয় ও জমা টাকার হিসেব নিয়ে হাইকোর্টে যেতে বলেছে। সব কিছু খতিয়ে দেখে আগামী শুক্রবার হাইকোর্ট চূড়ান্ত নির্দেশ দেবে। |