মির্জা গালিব স্ট্রিটের খাদ্য ভবনে খোদ খাদ্যমন্ত্রীর ঘরে ঢুকে কে বা কারা তাঁর আপ্ত-সহায়কের টেবিলে ‘হুমকি-পোস্টার’ রেখে গিয়েছে। খাদ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, পোস্টার রেখে গিয়েছে মাওবাদীরাই।
শুক্রবার সকালে যখন ওই পোস্টার পাওয়া যায়, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তখন তাঁর দফতরের সচিব ও অফিসারদের নিয়ে নিজের ঘরে বৈঠক করছিলেন। এই ঘটনায় খাদ্য দফতরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। মন্ত্রী বলেন, “পোস্টার পাওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে সব জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী আমাকে কোনও বন্ধ খাম বা পার্সেল নিজের হাতে নিতে নিষেধ করেছেন।”
খাদ্যমন্ত্রীর ঘরে ওই সব পোস্টার পৌঁছল কী ভাবে?
কে বা কারা কখন কী ভাবে ওখানে পোস্টার রেখে গেল, সেটা স্পষ্ট নয়। এ দিন পৌনে ১০টা নাগাদ খাদ্য দফতরের নিজের ঘরে অফিসারদের নিয়ে বৈঠক শুরু করেন খাদ্যমন্ত্রী। তাঁর আপ্ত-সহায়ক (সিএ) অভিজিৎ দাস তখনও দফতরে পৌঁছননি। তিনি আসেন বেলা ১০টা ১০ মিনিটে।
কিছু ক্ষণের মধ্যে মন্ত্রীর ঘরের সামনে পৌঁছে যান পুলিশকর্মীরাও। আপ্ত-সহায়ক ঘরে ঢুকে তাঁর টেবিলে একটি প্যাকেট দেখতে পান। প্যাকেটটি খুলতেই বেরিয়ে পড়ে ১১টি পোস্টার। আলতা দিয়ে বাংলায় লেখা ওই পোস্টারে জঙ্গলমহলে অশান্তির জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করা হয়েছে। জঙ্গলমহলে নতুন খোলা রেশন দোকান বন্ধ না-করলে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে জানান জ্যোতিপ্রিয়বাবু। |
খাদ্যমন্ত্রী জানান, জঙ্গলমহলের ৫৫টি নতুন রেশন দোকান বন্ধ করে দিতে বলে বেশ কিছু দিন ধরেই হুমকি আসছিল। কিন্তু কলকাতা শহরের বুকে মন্ত্রীর ঘরে এ ভাবে মাওবাদী পোস্টার পড়ার ঘটনায় বিপদের ইঙ্গিত রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “খাদ্য দফতর পুরোপুরি অসংরক্ষিত। এখানে মন্ত্রী ও সচিবের ঘরের দরজায় দিনে-রাতে কোনও তালা পড়ে না। ২৪ ঘণ্টাই দরজা খোলা থাকে। রাতে শুধু বাড়ির বাইরের গেটগুলিতে শাটার টেনে বন্ধ করে দেওয়া হয়।”
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রায় দু’মাস আগে করিডরে সিসিটিভি-র ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু পুর দফতর এখনও ক্যামেরা বসায়নি। ক্যামেরা থাকলে কে বা কারা ওই কাজ করল, তা ধরা পড়ে যেত।” তিনি আরও জানান, খাদ্যসচিব নিউ মার্কেট থানায় এফআইআর দায়ের করে জানিয়েছেন, যখন পোস্টারগুলি পাওয়া যায়, তার কিছু আগেই একটি অচেনা লোককে মন্ত্রীর ঘরের করিডর দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছে।
কী ভাবে ওই পোস্টার খাদ্যমন্ত্রীর আপ্ত-সহায়কের টেবিলে এল, তা নিয়ে ধন্দে লালবাজারের কর্তারাও। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, “কী ভাবে ওই পোস্টার খাদ্য ভবনে ঢুকল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
কী লেখা রয়েছে ওই পোস্টারে?
পুলিশ জানায়, ‘খাদ্যমন্ত্রীর মুন্ডু চাই’, ‘অযোধ্যা পাহাড়ে, জঙ্গলমহলের রেশন আউটলেটগুলি বন্ধ করতে হবে’, ‘জঙ্গলমহলকে অশান্ত করছ কেন মুখ্যমন্ত্রী জবাব দাও’, ‘ধানের সহায়ক মূল্য কুইন্টাল প্রতি ২০০০ হাজার টাকা করতে হবে’, ‘১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বান্দোয়ান এলাকায় রেশনের অতিরিক্ত দোকান বন্ধ করতে হবে’, ‘কথা না-রাখলে শাস্তি মৃত্যু’ এই সব কথা আলতা দিয়ে লেখা ছিল। পোস্টারগুলির তলায় লেখা রয়েছে, ‘মাওবাদী সেকেন্ড স্কোয়াড’। লালবাজার সূত্রের খবর, খাদ্য ভবনের বাইরে রাতে পুলিশি প্রহরা থাকে। সে-ক্ষেত্রে পুলিশের নজর এড়িয়ে কারও পক্ষে ওই পোস্টার নিয়ে খাদ্য ভবনের ভিতরে ঢোকা সহজ নয়। লালবাজারের কর্তাদের সন্দেহ, খাদ্য ভবনের কোনও কর্মীই ওই পোস্টারগুলি সঙ্গে নিয়ে ঢুকেছিলেন। তাঁর খোঁজ চলছে। মন্ত্রী জানান, পোস্টারের খবর পেয়ে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের খাদ্য নিয়ামকেরা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে তিনি এই ঘটনাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে রাজি নন। ধান সংগ্রহ অভিযান জোরদার করার জন্য তিনি চলতি মাসের ২৫ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত ওই তিন জেলা সফর করবেন। |