শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তরফে দুর্নীতির মামলায় তদন্তের নামে প্রহসন হচ্ছে বলে অভিযোগ করল দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট। মঙ্গলবার দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের পক্ষে ডাকা নাগরিক কনভেনশনে ওই অভিযোগে সরব হন কয়েকশো বাসিন্দা। তাঁদের অভিযোগ, ওই দুর্নীতির সঙ্গে অভিযুক্তদের একাংশকে আড়াল করতে একটি প্রভাবশালী মহল সক্রিয়।
তাঁদের অনেকেরই সন্দেহ, সেই চাপের জন্যই ৩ জন ইঞ্জিনিয়রকে গ্রেফতার করা হলেও তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণকুমার কিংবা বোর্ডের সদস্যদেরও কাউকে তদন্তকারী অফিসাররা এখনও ডাকেননি। তাই পুলিশের একাংশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বাম নেতারা ওই মামলার তদন্ত ভার কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীন কোনও সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার দাবি তুলেছে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা এসজেডিএ-এর বাম আমলের চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “কেন্দ্রের দেওয়া বহু টাকা আমরা কষ্ট করে আদায় করেছিলাম। সেই টাকা দুই শহরের উন্নয়নের জন্য রাখা ছিল। তৃণমূল আমলে তা নয়ছয় করা হয়েছে বলে এখন তদন্তের নামে প্রহসন হচ্ছে। আমরা কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ কোনও সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের দাবি করছি।”
|
শিলিগুড়ির সুভাষপল্লির একটি ঠিকাদার সংস্থায় অভিযানে
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন অবশ্য দাবি করেছেন, তদন্ত ঠিক পথেই এগোচ্ছে। তিনি বলেন, “মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও ধরা হবে। যেমন স্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ মিলছে, সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্টকে ডেকে জেরাও করা হচ্ছে। সমস্ত বিষয়ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” মঙ্গলবার রাতে শিলিগুড়ির সুভাষপল্লিতে একটি ঠিকাদার সংস্থার অফিসে হানা দেয় পুলিশ। তিনটি তালা ভেঙে দফতরে ঢুকে নথিপত্র, বেশ কিছু চেকবই বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, সংস্থাটির নাম নিউ ইন্ডিয়া কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। ওই সংস্থার কর্ণধার সঞ্জীব ঘোষ, অজয় মৈত্র এবং তাপস দাসকে খোঁজা হচ্ছে বলে তদন্তকারী অফিসারেরা জানান।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই মামলায় এখনও যে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে তাঁদের জেরায় প্রচুর তথ্য মিলেছে। ধৃতদের মধ্যে অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র সপ্তর্ষি পাল, মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র প্রবীণ কুমার ও ঠিকাদার সংস্থার প্রতিনিধি অমলকৃষ্ণ সাহাকে জেরা করে অভিযুক্তদের সম্পত্তি সম্পর্কে ধারনা পাওয়ার চেষ্টাও করছে পুলিশ। অভিযুক্তদের তরফে অবশ্য তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনেই সব করেছেন বলে গোড়া থেকেই দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই ঘটনার তদন্তে নেমে শিলিগুড়ির আরেকটি ঠিকাদার সংস্থার নামও সামনে এসে পড়েছে। সেই সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। পাশাপাশি, জোড়াপানি সংস্কারের নামে প্রচুর টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে কেন মামলা হচ্ছে না সেই প্রশ্নেও সরব হয়েছে বামফ্রন্ট। দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের তরফে সিপিআইয়ের উজ্জল চৌধুরী, ফরওয়ার্ড ব্লকের অনিরুদ্ধ বসু আরএসপির তাপস গোস্বামীদের অভিযোগ, পুলিশের একাংশের ভূমিকা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় বলেই তদন্তের ভার কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে দেওয়া উচিত।
|