ব্লক, প্রয়োজনে থানা ভিত্তিতে বিভিন্ন এলাকায় শিবির করে শিলিগুড়ি মহকুমায় জমি দখল, ভুয়ো নথি দিয়ে জমি কেনাবেচা-সহ জমি সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার শিলিগুড়ির সার্কিট হাউজে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকরা-সহ পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। ঠিক হয়েছে প্রতিমাসে ব্লকস্তরে শিবির করে ওই কাজ হবে। মহকুমা ভূমি সংস্কার আধিকারিক, মহকুমাশাসক, অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ওই শিবির হবে। বিষয়গুলি নিয়ে মহকুমাশাসক, মহকুমা ভূমি সংস্কার দফতরের তরফে নিয়মিত বৈঠকের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “সমস্যাগুলি নিয়ে শিবিরেই শুনানির ব্যবস্থা করা হবে। সেখানেই বিষয়গুলি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করা হবে।” এমনকী পুলিশের তরফেও থানাগুলিতে জমি সংক্রান্ত নথি সম্পূর্ণ আলাদাভাবে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “প্রতিটি থানাকেই জমি সংক্রান্ত অভিযোগের জন্য আলাদা নথি তৈরি করতে বলা হয়েছে। শিবিরগুলিতে যে অভিযোগ আসবে সেগুলি দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।” সেই কারণে জমি সংক্রান্ত আইনকানুন বিষয়ে কখন কী পদক্ষেপ নিলে সুবিধা হবে সে ব্যাপারে কর্মশালা হবে থানার পুলিশ কর্তাদের জন্য।
বিশেষ নজরদিতে বলা হয়েছে আদিবাসীদের জমি উদ্ধারের দিকে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাসিন্দা, অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের তরফে তাই জমি সংক্রান্ত অভিযোগ থাকলে সেগুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। পুলিশ নিজেই উদ্যোগী হয়ে মামলা করবে। খড়িবাড়ির বাসিন্দা সিসিলিয়া সোরেন অভিযোগ জানান, বছর তিনেক আগে তিনি ১ একর ৩৩ ডেসিমেল জমি কিনেছিলেন। তার নথি, নামজারির কাগজ সমস্তই রয়েছে। সেখানে তিনি চা বাগান করেছেন। যে ব্যক্তিদের কাছ থেকে জমি কিনেছিলেন তারা জমিতে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। তা নিয়ে মামলাও হয়েছে। আদালত জমি উদ্ধারের নির্দেশও দিয়েছে বলে সিসিলিয়া দাবি করেন। এ দিন তাঁকে বৈঠকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তাঁর নথিপত্র দেখে দ্রুত তার জমি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্তা এবং ব্লক প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
অন্য দিকে শিলিগুড়ি মহকুমায় কয়েকশো একর সরকারি জমি দখল হয়ে গিয়েছে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের কর্তাদের। এ দিন বৈঠকে ঠিক হয়েছে আগামী ২৪ জুনের মধ্যে মহকুমার প্রতিটি ব্লকের ভূমি সংস্কার দফতরের তরফে এ ব্যাপারে খোঁজখবর করে কোথায় কত পরিমাণ সরকারি জমি দখল হয়ে রয়েছে তার রিপোর্ট দেওয়া হবে জেলা প্রশাসনকে। সেগুলি উদ্ধার করতে এত দিন কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারেও জানাতে বলা হয়েছে। বিস্তারিত রিপোর্ট নিয়ে ওই সমস্ত জমি উদ্ধারে নামবে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই মাটিগাড়ায় দুই দফায় অভিযান চালিয়ে ৩৫ একর সরকারি জমি দখল মুক্ত করা হয়েছে। সরকারি জমি উদ্ধার করতে লাগাতার অভিযান চলবে বলেও জানান জেলাশাসক। |