নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ -র কাজে ৫০ কোটি টাকা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে দফতরে এক সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং ঠিকাদার সংস্থার এক প্রতিনিধিকে ধরল পুলিশ। বুধবার রাতেই তাদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম প্রবীণ কুমার এবং অমলকৃষ্ণ সাহা। প্রবীণবাবু এসজেডিএ সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র (বিদ্যুত্ বিভাগ)। বাড়ি উত্তর প্রদেশের মথুরায়। শিলিগুড়িতে কোর্ট মোড়ের কাছে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। অমলবাবু অভিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থার প্রতিনিধি। বাড়ি দমদমের গঙ্গানগরে। বৃহস্পতিবার তাদের শিলিগুড়িতে আদালতে তোলা হলে ৫ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট মধুমিতা বসু।
আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে এসজেডিএর যে অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, বিদ্যুত্ বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সপ্তর্ষি পাল ও কলকাতার ঠিকাদার সংস্থার অন্যতম কর্ণধার অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল তাদের কাউকেই অবশ্য পুলিশ এ দিন পর্যন্ত ধরতে পারেনি। তাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে আর্থিক দুর্নীতির বিষয়টি জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় তাদের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযুক্তদের দ্রুত ধরতেও মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পরেও অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হওয়ায় বিব্রত উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। পুলিশ কী ভাবে তদন্ত করছে তা বলতে পারব না। তবে অভিযোগ পেয়ে এসজেডিএ’র তরফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১ আধিকারিককে বরখাস্ত করা হয়েছে। অন্য জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঠিকাদার সংস্থাকে শোকজ করা হয়। তাদের নামে ৪টি অভিযোগ পুলিশে জানানো হয়েছে।” শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “বুধবার রাতেই দুই জনকে ধরা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। যাদের নামে অভিযোগ হয়েছে তারা পলাতক। পুলিশ তাদের খুঁজছে।”
এসজেডিএ এবং পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, ১৬ কোটি ৯৭ লক্ষ ৫৭৭৪০ টাকা করে বাগডোগরা, মালবাজার এবং ময়নাগুড়িতে ৩ টি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর জন্য জন্য কলকাতার ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা হয়। বিদ্যুতিক প্রকল্পের তিনটি চুল্লির সরঞ্জাম কেনা না হলেও কাগজেকলমে সেই কাজ করা হয়েছে দেখিয়ে ৯ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা করে প্রায় ৩০ কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া হয় ঠিকাদার সংস্থাকে। মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে এসটিপি (সোয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট)-২ এবং এসটিপি-৩ তৈরির কাজেও একই ভাবে যন্ত্রাংশ না কিনে কাগজেকলমে তা কেনা হয়েছে দেখিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া হয় ওই একই ঠিকাদার সংস্থাকে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত ১৬ মে এসজেডিএ মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদী প্রধাননগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরেই ঠিকাদার সংস্থার পক্ষে অমল কৃষ্ণ সাহাও সম্প্রতি প্রধাননগর থানায় পাল্টা অভিযোগ করে জানান, ময়নাগুড়িতে শ্মশানের বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর যন্ত্রাংশ প্রকল্পের জায়গায় অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেগুলির জন্য পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন। পুলিশ এলাকায় গিয়ে দেখে সেখানে কোনও যন্ত্রাংশ নেই। এসজেডিএ’র অন্যান্য প্রকল্পের ঠিকাদারদের একাংশ অভিযোগ তুলেছিলেন, পুলিশ-আধিকারিক যোগসাজোশ করে তদন্তের কাজে গড়িমসি করা হচ্ছে। তাতে ওই সমস্ত যন্ত্রাংশ কিনে প্রকল্পের কাছিকাছি জায়গায় সেগুলি নিয়ে রাখতে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এর পরেই কোথায় কী অবস্থায় বিভিন্ন প্রকল্পগুলি রয়েছে তার ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ তোলে পুলিশ। ইতিমধ্যেই এসজেডিএ’র দফতর থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বিভিন্ন নথিপত্র।
সরকারি আইনজীবী সুদীপ রায় বসুনিয়া বলেন, “ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি তছরুপ, ভুয়ো নথিপত্র পেশ করা, জালিয়াতি, প্রতারাণার অিঊযোগে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে। আগামী ২৮ মে তাদের ফের আদালতে তোলা হবে।” প্রবীনবাবুর বাবা রঞ্জিত কুমার দাবি করেন, তাঁর ছেলেকে পুলিশ ফাঁসাতে চাইছে। তিনি বলেন, “১৬ মে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। আর ১৭ মে এসজেডিএ কর্তৃপক্ষ প্রবীনকে চুক্তির ভিত্তিতে সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (বিদ্যুত্ বিভাগ) পদে নিয়োগ করে। তার আগে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে এসজেডিএ’তে কাজে যোগ দেয় ও।”
|