শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিপুল অঙ্কের টাকা নয়ছয়ের মামলার তদন্তে নেমে সাব অ্যাসিস্ট্যন্ট ইঞ্জিনিয়রদের জেরা করল পুলিশ। মঙ্গলবার পুলিশের তদন্তকারী অফিসাররা ওই ইঞ্জিনিয়রদের জেরা করেন। তবে ঘটনায় যে দুজন অ্যাসিস্ট্যান্ড ইঞ্জিনিয়রের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কর্তৃপক্ষ, সেই মৃগাঙ্কমৌলি সরকার ও সপ্তর্ষি পালকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। যে ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাদের কর্ণধার অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে তাঁরা ফেরার। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। রোজই নথিপত্র বাজেয়াপ্ত, প্রকল্প স্থলের ছবি তোলানোর কাজ চলছে।”
প্রায় ৫০ কোটি টাকা নয়ছয়ের মামলার নথিপত্র ঘেঁটে তদন্তকারী অফিসাররা দেখেছেন, তাতে তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী অফিসার গোদালা কিরণকুমারের সই সাপেক্ষে বিলের টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, গোদালা কিরণকুমারকে জেরা করা হবে কি না সেই ব্যাপারে তদন্তকারী অফিসাররা কিছু বলতে রাজি হননি। প্রসঙ্গত, জি কিরণকুমার বর্তমানে মালদহের জেলাশাসক। তিনি দীর্ঘদিন এসজেডিএ-এর মুখ্য কার্যনির্বাহী অফিসারের পদে ছিলেন। তাঁর সময়ে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে শতাধিক ক্লোজড সার্কিট টিভি বসানোর কাজ শুরু হয়। ওই সময়ে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত নানা মঞ্চে তাঁকে দেখা গিয়েছে। এসজেডিএ-এর অন্দরেও অফিসার-কর্মীদের একাংশ আইএসএস অফিসার জি কিরণকুমার গোটা ঘটনার দায়িত্ব এড়াতে পারেন না বলে দাবি করেছেন। তাঁকে আড়াল করতে কোনও মহল থেকে চেষ্টা হচ্ছে কি না সেই প্রশ্নে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান গৌতম দেবের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন সংস্থার একাধিক কর্মী।
এমনকী, বাম আমলে এসজেডিএ-এক চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও বলেছেন, “এসজেডিএ-এর বিধি অনুযায়ী, ১ কোটি টাকার উপরে কোনও টাকা কাউকে দিতে গেলে বোর্ডের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী অফিসার কীসের ভিত্তিতে ওই টাকা দেওয়ার জন্য অনুমোদন করেছেন তা প্রকাশ্যে আসাটা গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্য কার্যনির্বাহী অফিসার ও তৎকালীন চেয়ারম্যান দায় এড়াতে পারেন না। কাউকে আড়াল করার চেষ্টা হলে মানুষ কিন্তু যথাসময়ে জবাব দেবেন।”
এই ব্যাপারে প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক জি কিরণকুমার বিশদে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি সরকারি নিয়ম মেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সব কাজ করেছেন বলে দাবি করেছেন। প্রাক্তন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য তো গোড়া থেকেই বলেছেন, “আমি পারিবারিক কারণে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলাম। সেটা আমাকে দেওয়া হয়েছে। এখন যাবতীয় বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বর্তমান চেয়ারম্যান।” |