অবাস্তব ভাবনা, বলল সিপিএম
মমতার ফ্রন্ট গড়ার ডাকে সাড়া নবীন-নীতীশের
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেডেরাল ফ্রন্টের দাবির সমর্থনে মুখ খুলল একাধিক দল। বিহারে নীতীশ কুমারের জেডিইউ, ওড়িশায় নবীন পট্টনায়কের বিজেডি ছাড়া উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টিও ফেডেরাল ফ্রন্ট গড়ার প্রশ্নে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।
ইউপিএ সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যের আঞ্চলিক শক্তিগুলিকে নিয়ে ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠনের ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছেন মমতা। গতকাল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের টানাপোড়েনের পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকে ফের ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠনের ডাক দেন তিনি। আজ সেই দাবিকে সমর্থন করে জেডিইউয়ের সাধারণ সম্পাদক কে সি ত্যাগি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাক সময়োচিত এবং জেডিইউ ওই দাবিকে সমর্থন জানায়।” জেডিইউ সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে নীতীশ কুমারও মমতার ওই দাবির সমর্থনে মুখ খুলেছেন। তিনি দলীয় নেতৃত্বকে নিয়মিত ভাবে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
মুলায়ম সিংহের সমাজবাদী পার্টিও বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ কিরণময় নন্দ এ দিন কলকাতায় বলেন, “নানা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কংগ্রেস আগামী লোকসভা নির্বাচনে কোনও ভাবেই ক্ষমতায় ফিরবে না। বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক দলকে সরকার গঠন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে হবে। এই অবস্থায় একমাত্র ফেডেরাল ফ্রন্টই আগামী দিনে দেশকে বিকল্প সরকার উপহার দিতে পারে।” তাঁর বক্তব্য, মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে আঞ্চলিক দলগুলির নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা উচিত। যাতে লোকসভা ভোটের পরে দ্রুত সরকার গঠন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। কংগ্রেস ও বিজেপির থেকে সমদূরত্ব রেখে চলা নবীন পট্টনায়ক এবং মমতা পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন। এ দিন নবীন বলেন, “একটা ফেডেরাল ফ্রন্ট বা তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ে ওঠা দেশের জন্যই অত্যন্ত জরুরি।” সব মিলিয়ে লোকসভা ভোটের আগে আঞ্চলিক দলগুলির জোট গঠনের সম্ভাবনা খানিকটা হলেও অবয়ব পেতে শুরু করেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, আঞ্চলিক দলগুলির ওই জোট কি লোকসভার ম্যাজিক সংখ্যা ২৭২ ছুঁতে পারবে? কংগ্রেস বা বিজেপির কোনও একটি বড় দলের সরাসরি সমর্থন ছাড়া কি সরকার গড়া সম্ভব হবে ফেডেরাল ফ্রন্টের পক্ষে?
গত তিনটি লোকসভা নির্বাচনেই দেখা গিয়েছে, কংগ্রেস ও বিজেপি, দেশের দু’টি প্রধান বড় দল সব মিলিয়ে তিনশো-সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি আসন দখল করতে সক্ষম হচ্ছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনেও যদি সেই প্রবণতা বজায় থাকে, তা হলে বিজেপি ও কংগ্রেস দু’টি দলকে একেবারেই বাদ দিয়ে মমতা-নীতীশদের পক্ষে দিল্লিতে সরকার গড়া কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছে রাজনীতির সঙ্গে যুক্তরা। অতীতেও দেখা গিয়েছে, তৃতীয় ফ্রন্টের তরফে দেবগৌড়া বা গুজরাল যখন প্রধানমন্ত্রী হন, তখন কংগ্রেস পিছন থেকে সমর্থন করেছিল। তারও আগে বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ সরকার গড়েছিলেন বিজেপি ও বামেদের সমর্থন নিয়েই। ফলে মমতাদের ফেডেরাল ফ্রন্ট আসলে সোনার পাথরবাটি কি না, সে প্রশ্নও উঠছে।
তা ছাড়া মমতা-নীতীশরা ফেডেরাল ফ্রন্ট গড়ে সমস্ত অ-কংগ্রেসি অ-বিজেপি দলকে একই ছাতার তলায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেটা কি আদৌ করা সম্ভব? বিশেষ করে রাজ্য রাজনীতিতে যারা সর্বক্ষণ পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী, তারা কতটা এক সঙ্গে জোট করে সরকার গড়বে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অনেকেরই বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে মমতা-সিপিএম, বিহারে লালু-নীতীশ, উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম-মায়াবতী, তামিলনাড়ুতে জয়ললিতা-করুণানিধি রাজ্য রাজনীতিতে যারা সর্বক্ষণের প্রতিদ্বন্দ্বী, তারা দিল্লিতে হাত ধরাধরি করে সরকার গড়বে, এমন সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ফেডেরাল ফ্রন্টের সমর্থক হলেও বামেদের পাশে পাওয়ার ব্যাপারে খুব বেশি আশাবাদী নন নবীন। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বিমান বসু আবার বলেছেন, “যে দলের নেত্রী এই ফেডেরাল ফ্রন্ট গড়ার ডাক দিয়েছেন, তিনি বা তাঁর দল সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন না। অতীতে দেখা গিয়েছে তাঁর দল সর্বদলীয় বৈঠকে যোগ দেয় না। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে ফেডেরাল ফ্রন্ট তৈরি অকল্পনীয়, অসম্ভব, অবাস্তব।”
এমন পরিস্থিতি হলে কী ভাবে এগোবে ফেডেরাল ফ্রন্টের কাজ? যদিও সে সবকে ততটা গুরুত্ব না দিয়ে কিরণময় নন্দ বলেন, “কে সরকারে থাকবে, কে থাকবে না, পরে ভেবে দেখা যাবে। কিন্তু আগামী দিনে বিজেপি ও কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রে কোনও সরকার গঠন অত্যন্ত জরুরি। আর সে ক্ষেত্রে ফেডেরাল ফ্রন্টই একমাত্র বিকল্প।”
লোকসভা নির্বাচনের আগে আঞ্চলিক দলগুলি ফেডেরাল ফ্রন্টের নাম করে একে অপরের সমর্থনে পাশে দাঁড়াতে চাইছে ঠিকই। কিন্তু নির্বাচনের পরে সরকার গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেই ছবিটি পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন রাজনীতির সঙ্গে যুক্তরা। তাঁদের বক্তব্য, বর্তমানে ফেডেরাল ফ্রন্ট বলে যাকে প্রচার করা হচ্ছে, তা আসলে একটি সাময়িক ব্যবস্থা। ফলে মমতা বা নীতীশ যে ফ্রন্ট গড়ার ডাক দিচ্ছেন, তা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে এখন থেকেই।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.