‘জনপ্রিয়’ মোদীর পাশেই সঙ্ঘ, বিদ্রোহে ইতি টানলেন আডবাণী
রেন্দ্র মোদীর পক্ষে দলের কর্মী-সমর্থকদের বিপুল সমর্থনের সামনে মাথা নোয়াতে হল লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। বিদ্রোহ ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাতে ইতি টেনে ইস্তফা প্রত্যাহার করে নিতে হল তাঁকে। বিনিময়ে কী পেলেন? সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের ফোন আর তাঁর তোলা প্রশ্নগুলো খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি। আডবাণীর মূল উষ্মা উপেক্ষা করে মোদীকে নির্বাচনী প্রচার কমিটির প্রধান পদেই রেখে দিল বিজেপি।
মোদী-প্রশ্নে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার যে নিজেদের অবস্থান থেকে নড়বে না, সেই ইঙ্গিত গত কালই পাওয়া গিয়েছিল। এমনকী আনুষ্ঠানিক ভাবে আডবাণীকে তাঁর পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করার অনুরোধও করেনি বিজেপি সংসদীয় বোর্ড। তারা জানিয়ে দেয়, পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে না। এর পর আডবাণীর আর বিশেষ কিছু করার ছিল না। তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার না-করে বিদ্রোহে অনড় থাকতে পারতেন। কিন্তু তাতে দলের মধ্যে তিনি আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়তেন বলেই বিজেপি সূত্রের দাবি। বিদ্রোহের সুর আরও চড়া করে দল ছাড়লেও বিশেষ কোনও সুবিধা হতো বলে মনে করছে না সূত্রটি। তাঁদের মতে, এর আগে দল ছেড়ে প্রায় কেউই সফল হননি। সে কল্যাণ সিংহই হোন বা উমা ভারতী বা কেশুভাই পটেল। তা ছাড়া, নতুন উদ্যমে আসরে নামার বয়সও আডবাণীর নেই। পরিস্থিতি বুঝে মোহন ভাগবতের ফোন পেয়েই এ যাত্রায় আডবাণী রণে ভঙ্গ দিয়েছেন বলে বিজেপি নেতাদের অনেকের মত। আজ সন্ধ্যায় আডবাণীর বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ জানান, দলের কার্যপ্রণালী নিয়ে আডবাণীর যে উদ্বেগ রয়েছে, সেই সব ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস তাঁকে দেওয়া হয়েছে। মোহন ভাগবতও আজ আডবাণীকে ফোন করেছিলেন। তিনি আডবাণীকে দলের সংসদীয় বোর্ডের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে জাতীয় স্বার্থে দলকে দিশা দেখানো থেকে বিরত না-হতে বলেন। আডবাণী সেই পরামর্শ শুনেছেন।
দেখা দিলেন সংসদে। প্রাক্তন স্পিকার কে এস হেগড়ের জন্মদিনে মীরা কুমারের সঙ্গে। ছবি: এপি
রাজনাথের এই ঘোষণার ৪৫ সেকেন্ডের মধ্যে চলে আসে মোদীর টুইট। তিনি লেখেন, “গত কালই আমি বলেছিলাম, আডবাণীজি লাখো কার্যকর্তাকে হতাশ করবেন না। আমি তাঁর সিদ্ধান্তকে হৃদয় থেকে স্বাগত জানাচ্ছি।” এত দ্রুত প্রতিক্রিয়ায় বিস্মিত অনেকেই বলছেন, আডবাণীর বিদ্রোহ যে টিকবে না, সে বিষয়ে কি তবে আগে থেকেই নিশ্চিত ছিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। তাই কি সোমবারই লিখে দিয়েছিলেন, “আডবাণীজি কিছুতেই দলের লাখো কার্যকর্তাকে নিরাশ করবেন না।” তাঁদের দ্বিতীয় বিস্ময়, আজ দুপুর দু’টোয় দু’সপ্তাহের ছুটি কাটাতে অরুণ জেটলির লন্ডন চলে যাওয়াটা। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি আডবাণীর বিদ্রোহকে দল বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেয়নি? তা না হলে জেটলির মতো নেতা, দিল্লিতে যিনি মোদীর প্রধান ভরসা, তিনি সমস্যা সমাধানের আগেই ছুটিতে যান কী করে!
নিজের বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে আডবাণীর অনুপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রাজনাথ অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, “আমিই আডবাণীজিকে না-থাকতে অনুরোধ করেছিলাম। এটা আমার সাংবাদিক বৈঠক। সেটা উনি বসে বসে শুনবেন, এটা ভাল দেখায় না।” কিন্তু অনেকেই বলছেন, আডবাণী হাজির থাকলে অবধারিত ভাবে তাঁর দিকে প্রশ্ন আসত যে, কী পেয়ে বিদ্রোহে ইতি টানলেন তিনি? এর জুৎসই জবাব আডবাণীর কাছে নেই। রাজনাথরাও আজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেননি। বিবৃতি পড়ে তড়িঘড়ি বিদায় নিয়েছেন।
মোদীর কাছে কেন হারলেন আডবাণী?
বিজেপি শিবিরের ব্যাখ্যা সেই একটাই। দলের অগণিত কর্মী-সমর্থকের চাপ। সেই চাপের জেরেই সঙ্ঘ পরিবার আজ মোদীর পিছনে। তা না-হলে মোদী যে নাগপুরের প্রথম পছন্দ, এমন নয়। মোদীর ‘রক্ষণাবেক্ষণের খরচ’ অনেক বেশি বলেই সঙ্ঘ পরিবারের মত। তা ছাড়া, মোদীকে কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, তা নিয়েও তাদের সংশয় রয়েছে। কিন্তু রামমন্দির আন্দোলনের সময় রথে সওয়ার আডবাণীর পিছনে সমর্থনের ঢল দেখে তাঁকে যেমন মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল সঙ্ঘ, মোদীর ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই ঘটেছে।
আডবাণী শিবির অবশ্য পুরোপুরি হার মানতে নারাজ। তাদের মতে, প্রবীণ নেতার ‘উদ্বেগ’ খতিয়ে দেখার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেটিই তাঁর জয়। উদ্বেগ খতিয়ে দেখা হলেই দলীয় নীতির পরিবর্তন সম্ভব।
কী ভাবে সেটা সম্ভব হবে?
তিন রকম সম্ভাবনার কথা বলছেন আডবাণী-পন্থীরা। এক, সঙ্ঘের পক্ষ থেকে সুরেশ সোনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনাথ সিংহ, অরুণ জেটলিদের নিয়ে একটি অক্ষ তৈরি করেছেন। সেই অক্ষ ভাঙতে হবে। দুই, নরেন্দ্র মোদীকে প্রচার কমিটির প্রধান করা নিয়ে এমনিতে আডবাণীর কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু তিনি এর পাশাপাশি আরও একটি কমিটি গড়তে চাইছিলেন। এ বারে আলোচনা হলে সেটিরও বাস্তবায়ন সম্ভব। তিন, প্রচার কমিটির প্রধানের সঙ্গে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার বিষয়টি যোগ করা ঠিক হবে না। কারণ এই শিবিরের মতে, বিজেপি কিছুতেই একার ক্ষমতায় সরকার গড়তে পারবে না। তার জন্য শরিকদের দরকার। শরিকদের কাছে মোদীর সেই গ্রহণযোগ্যতা নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা ইতিমধ্যেই আঞ্চলিক জোট গড়ার ডাক দিয়েছেন। নীতীশ কুমার তো বটেই, আজ এনডিএ-র আর এক পুরনো শরিক নবীন পট্টনায়কও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, জাতীয় স্তরে মোদী গ্রহণযোগ্য নন। সে দিক থেকে আডবাণীই এই মুহূর্তে এনডিএ-র কাছে গ্রহণযোগ্য মুখ। এই কারণেই আডবাণী কিন্তু এনডিএ-র চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেননি।
আডবাণীর মত বদলের পর তাঁর বাড়িতেই সাংবাদিক বৈঠকে রাজনাথ-সুষমা। মঙ্গলবার। ছবি: পি টি আই
মোদী-পন্থীরা অবশ্য এ রকম কিছু ঘটার সম্ভাবনা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, প্রচার কমিটির বাইরে নির্বাচনী রণকৌশল কমিটি গড়ার চেষ্টা আডবাণী আগেও করেছেন। কিন্তু গোয়ার বৈঠকে তা খারিজ হয়ে গিয়েছে। নতুন করে ওই কমিটি গড়ে মোদীর ডানা ছাঁটার সম্ভাবনা নেই। আজ মোহন ভাগবতও আডবাণীকে তেমন কোনও ইঙ্গিত দেননি। উল্টে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া উচিত বলে আডবাণীকে পরোক্ষে তাঁর সীমাবদ্ধতার কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন।
বিজেপির বিবৃতি
আমি গত কাল বলেছিলাম, আডবাণীজি
লক্ষ লক্ষ কার্যকর্তাকে হতাশ করবেন না।
আজ আমি তাঁর সিদ্ধান্তকে হৃদয় থেকে
স্বাগত জানাচ্ছি!

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.