প্রায় ৫০ কোটি টাকা নয়ছয়ের মামলায় ধৃত ইঞ্জিনিয়র মৃগাঙ্কমৌলি সরকারকে ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার আর্জি মঞ্জুর করল শিলিগুড়ি আদালত। বুধবার শিলিগুড়ির এসিজেএম মধুমিতা বসু ওই নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযুক্তকে হাজির করানোর পরে তাঁকে নির্দোশ বলে দাবি করেন তাঁর আইনজীবী পার্থ চৌধুরী। সেই সঙ্গে আইনজীবী দাবি করেন, এসজেডিএ-এর তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী বাস্তুকার স্থায়ী আমানত ভেঙে ঠিকাদার সংস্থাকে টাকা দিয়েছেন। আইনজীবীর যুক্তি, মৃগাঙ্কবাবু মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের অধীনে কাজ করতেন। সেই কারণেই মৃগাঙ্কবাবুর তরফে প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের ভূমিকা খতিয়ে দেখার দাবি তোলা হয় আদালতে। এ ব্যাপারে মৃগাঙ্কবাবু পুলিশকে সমস্ত সাহায্য করারর আশ্বাস দিয়েছেন।
ঘটনা হল মৃগাঙ্কবাবু যে প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের কথা উল্লেখ করেছেন, তাঁর নাম হল গোদালা কিরণ কুমার। অন্ধ্রপ্রদেশে আদি বাসিন্দা ওই আইএএস অফিসার কিরণকুমার বর্তমানে মালদহের জেলাশাসক পদে রয়েছেন। কিন্তু, জি কিরণ কুমার সব শুনে বলেন, “এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।”
বস্তুত, প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন এসজেডিএ-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, “মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের সই ছাড়া টাকা ঠিকাদার সংস্থা পাবে না। যে কাজ হয়নি, তার জন্য বিল জমা দিলে তিনি সই করবেন কেন? |
যেখানে বহু কোটি টাকার কাজ কম সময়ে হয়েছে বলে বিল জমা হয়েছে, সেখানে তা যাচাই করে দেখার দায়িত্ব মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের থেকেই যায়। আমাদের সময়ে এমন কখনও হতে দিইনি।” এসজেডিএ-এর অন্দরেও বিষয়টি নিয়ে জল্পনা চলছে। সরকারি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই এসজেডিএ-এর দুর্নীতির বিষয়ে কাউকে যেন কোনও প্রভাবশালী মহল আড়াল করতে না-পারে সে জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্য সচিবের কাছেও আর্জি পৌঁছেছে। আদালত সূত্রে জানা গিয়ে, ধৃত মৃগাঙ্কবাবুর বিরুদ্ধে ৩টি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো এবং মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি তৈরির কাজে সরঞ্জাম কেনা এবং কাজ না হলেও খাতায় কলমে তা হয়ে গিয়েছে দেখিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ঠিকাদার সংস্থাকে দিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। নিকাশি তৈরির কাজের অভিযোগের ব্যাপারেই মৃগাঙ্কবাবুকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করে এ দিন আদালতে তোলা হয়েছে।
সরকারি আইনজীবী সুদীপ রায় বাসুনীয়া বলেন, “ওই নিকাশি প্রকল্পের সরঞ্জাম কেনা এবং কাজ হয়েছে বলে ১৭ কোটি ৬ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা একটি ঠিকাদার সংস্থাকে গত ৬ মার্চ দেওয়া হয়। এর আগে এসজেডিএ’র ধৃত ইঞ্জিনিয়ার (বিদ্যুৎ বিভাগ) সপ্তর্ষি পাল পরিদর্শন করে ওই কাজ হয়েছে বলে নোট দেন। তা খতিয়ে দেখে মৃগাঙ্কবাবু একট শংসাপত্র দেন। তার ভিত্তিতে মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক ঠিকাদার সংস্থাকে টাকা দিয়েছেন।” প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা পুলিশের তরফে খতিয়ে দেখার জন্য ধৃত মৃগাঙ্কবাবুকে পুলিশে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “ধৃত ইঞ্জিনিয়ার পুলিশকে সাহায্য করতে চাইলে খুবই ভাল ব্যাপার। তিনি সমস্ত জানালে আমরাও সেই মতো ব্যবস্থা নিতে পারব।” তাঁর যুক্তি, “মৃগাঙ্কবাবু কিছু তথ্য দিলে তা সত্যতা প্রমাণ হলে পুলিশ নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”
উল্লেখ্য বিভিন্ন কাজে ৫০ কোটি টাকা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে মুখ্য মন্ত্রীর নির্দেশে এসজেডিএ’র তরফে তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী বাস্তুকার মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, সপ্তর্ষি পাল এবং ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়। মৃগাঙ্কবাবুর পদাবনতি হয়। তাকে আপাতত বরখাস্ত করা হয়। সপ্তর্ষি পালকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। পুলিশ তাদের ধরতে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ ওঠে। শেষ পর্যন্ত সপ্তর্ষি পাল এবং মৃগাঙ্কবাবু গ্রেফতার হলেও ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধারকে পুলিশ এখনও ধরতে পারেন।
মৃগাঙ্কবাবুর আইনজীবী পার্থ চৌধুরী বলেন, “মৃগাঙ্কবাবুকে ফাঁসানো হয়েছে। কোটেশনের মাধ্যমে ওই সমস্ত কাজের বরাত দেওয়া হয়। এসজেডিএ’র ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে টাকা দেওয়া হয়েছে ঠিকাদার সংস্থাকে। এসজেডিএ’র বিভিন্ন কাজে আর্থিক দুর্নীতির পিছনে যে সত্যটা রয়েছে তা সামনে আসুক। তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ হয়নি। তাঁর ভূমিকা খতিয়ে দেখা দরকার।” |