একাংশ পাইকারি ব্যবসায়ী কৃষি পণ্য বিক্রির উপর সরকার নির্ধারিত ‘ফি বা রিটার্ন’ দিচ্ছেন না বলে বুধবার অভিযোগ করলেন শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির সম্পাদক সন্দীপ দাস। এতে প্রতি বছরে বাজার সমিতির কম করে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। শুধু তাই নয়, কৃষি বিপণন দফতরের লাইসেন্স ছাড়াই তাঁরা ব্যবসা করছেন বলে সন্দীপবাবুর অভিযোগ। তাঁর দাবি, লাইসেন্স নিয়ে একই অবস্থা চলছে নিয়ন্ত্রিত বাজারেও। ব্যবসায়ীদের নোটিশ দেওয়া ছাড়াও প্রয়োজনে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ করা হতে পারে।
শিলিগুড়ি শহরের এই পরিস্থিতির কথা পৌঁছেছে রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ের কাছেও। তিনি বলেন, “বাম আমলেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। ব্যবসা চালু রাখলে লাইসেন্স, ফি, কর সরকারি নিয়ম মেনে ব্যবসায়ীদের দিতে হবে। সব খতিয়ে দেখেছি। প্রয়োজনে আধিকারিকদের আইন মত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটির আওতায় মাল্লাগুড়ির নিয়ন্ত্রিত বাজার চত্বরটি ছাড়াও গোটা শিলিগুড়ি মহকুমা এবং জলপাইগুড়ি জেলার ডাবগ্রাম ও বিন্নাগুড়ি মৌজা রয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের কৃষি বিপণন দফতরের সহকারি অধিকর্তা সন্দীপবাবুকে গত মাসেই শিলিগুড়ির অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কমিটির চেয়ারপার্সন পদে আছেন শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক রচনা ভকত। সম্প্রতি ঠিক হয়েছে, লাইসেন্স এবং ফি জমা না দিলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের তরফেও সবুজ সঙ্কেত মিলেছে।
দফতরের অফিসারেরা জানান, বাজার চত্বরে ৭০০ মত স্টল রয়েছে। সেগুলি মূলত মাছ, ফল, সবজি, ফল ছাড়াও আলু এবং পেঁয়াজের স্টল। এক্ষেত্রে চেকপোস্ট এবং কমিটির কর্মীদের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির উপর ০.৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ করা আদায় করা হয়। কিন্তু চত্বরের ৪৫০ জনের মত ব্যবসায়ীকে নিয়েই সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাজার কমিটির সম্পাদক জানান, এদের অনেকের লাইসেন্স নেই। কারও আবার লাইসেন্স নবীকরণ করানো নেই। অনেকে দীর্ঘদিন স্টলের ভাড়া দেন না। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। ইতিমধ্যে নোটিশ দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা এবং স্টল বন্ধও করে দেওয়া হতে পারে।
এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “বিষয়টি নিয়ে দুই দফায় বৈঠক হয়েছে। কিছুক্ষেত্রে স্টলের নাম পরিবর্তনের সমস্যা রয়েছে। কিস্তিতে বকেয়া মেটানোর কথা বলা হয়েছে। আশা করি কোনও সমস্যা হবে না।” তবে বাজার চত্বরের বাইরে থাকায় প্রায় দুই বাজার ব্যবসায়ী লাইসেন্স না করানো এবং রিটার্ন দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। সন্দীপবাবু বলেন, “শহরের নয়াবাজার, খালাপাড়া এলাকা এরমধ্যে অন্যতম। বিক্রির উপর নির্দিষ্ট টাকাও জমা করছেন না। আমরা সংবাদপত্রে নোটিশ দিয়েছি। এর পরে আইনি ব্যবস্থা নেব।” তিনি জানান, গত বছর বাজার চত্বরের বাইরে থেকে ১৪ লক্ষ টাকা আয় হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের তুলনায় তা খুবই কম। সঠিকভাবে টাকা আদায় হলে সরকারের ঘরে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব জমা পড়বে। তবে বিষয়টি নিয়ে মন্তান্তর রয়েছে শহরের পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে। শিলিগুড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কৈলাস নাকিপুরিয়া বলেন, “প্রথমত আমরা বাজার চত্বরে ব্যবসা করিনা। আর অনেকেই চেকপোস্টে টাকা জমা দেন। আর বহু ব্যবসায়ী তৈরি মালপত্র বিক্রি করেন। সেখানে তালিকাভুক্ত কৃষিপণ্যের বিষয়টি আসে না। কাজেই তাঁদের ওই টাকা দেওয়া কথা নয়। তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতেই পারে।” |