অনলাইন-ভর্তির বিরোধিতায় ফের টিএমসিপি-র তাণ্ডব
নলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে মালদহ কলেজে উত্তেজনা চলছিলই। এ বার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন ব্যারাকপুরের স্বামী মহাদেবানন্দ মহাবিদ্যালয়।
গত কয়েক দিন ধরে উত্তর ২৪ পরগনার ওই কলেজে অন লাইনে ভর্তি নিয়ে তাদের আপত্তির কথা হুমকিতেই সীমাবদ্ধ রেখেছিল তারা। বুধবার কলেজ জুড়ে ঘণ্টা দেড়েক ধরে তাণ্ডব চালিয়ে ব্যারাকপুরের ওই কলেজে শাসকদলের ছাত্র সংসদের সমর্থকেরা দেখিয়ে দিল, তারা সরকারি সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা করে না।
ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে কলেজগুলিতে অনলাইনে ভর্তির সুপারিশ করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তাতে ছাত্র সংসদগুলির বিশেষত টিএমসিপির স্বার্থে ঘা লাগছে কেন? এ ব্যাপারে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার ব্যাখ্যা: “গ্রামাঞ্চলে অনলাইন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ছাত্রেরা তেমন স্বচ্ছন্দ নয়।” তবে তিনিও কবুল করেছেন, সরকারের নীতি মেনে অনলাইনেই ভর্তি প্রক্রিয়া চালু রাখতে হবে কলেজগুলিতে।
তা হলে মালদহ থেকে ব্যারাকপুর, টিএমসিপি’র সমর্থকেরা সরকার বিরোধী আন্দোলনে সামিল হচ্ছেন কেন? মালদহের মতো এ দিন ব্যারাকপুরের ওই কলেজের শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বের কাছে এর স্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি। মালদহ কলেজে টিএমসিপি-র ঘেরাও-বিক্ষোভে ক্ষুব্ধ হয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রভাস চৌধুরী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। ব্যারাকপুরের কলেজের গোলমালের পরে তাই প্রশ্ন উঠছে, টিএমসিপি কি শাসক দল তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে?
ভাঙচুরের পরে ব্যারাকপুরের মহাদেবানন্দ মহাবিদ্যালয়।
এ দিন ব্যারাকপুরের ওই কলেজে বহিরাগতদের নিয়ে হামলা চালায় টিএমসিপি-র সদস্যেরা। এমনই অভিযোগ কলেজ কর্তৃপক্ষের। ওই কলেজের ছাত্র সংসদ টিএমসিপি-র দখলে রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধার কথা তুলে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে সেই সংসদের সদস্যরাই অধ্যক্ষের ঘর ঢুকে তছনছ করে টিভি, কম্পিউটার, যাবতীয় আসবাব। কলেজের কন্ট্রোল রুমেরও সব ক’টি কম্পিউটার, টিভি, ল্যাপটপও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে, নষ্ট হয়ে গিয়েছে কলেজের পুরো ‘ডেটাবেস’। পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স নামে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কলেজের ছাত্র সংসদের সম্পাদক চাঁদবাবু-সহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে।
অধ্যক্ষ নয়নকুমার সরকার বলেন, “চাঁদবাবুর নেতৃত্বেই হামলা হয়েছিল। কলেজের সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। সব রেকর্ড নষ্ট করে দিয়েছে ওরা। ছাত্র হিসাবে এত দিন সহমর্মিতা দেখালেও এ দিনের ঘটনা আমাদের লজ্জা।’’ এ দিনের ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও। নোয়াপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মঞ্জু বসু বলেন, ‘‘দলে আলোচনা করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
মালদহ কলেজের ঘটনাতেও সমান অস্বস্তিতে শাসক দল। দলীয় সূত্রের খবর, বুধবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু স্থানীয় বিধায়ক তথা পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীকে টেলিফোন করে সমস্যার মেটানোর আবেদন করেছিলেন। এর পরেই কলেজে পরিচালন কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। কলেজ সূ্ত্রে খবর, বৈঠকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্তকে বহাল রাখা হয়। পাশাপাশি, কলেজ থেকেও ফর্ম বিলি করে পুরনো নিয়মেও ভর্তি প্রক্রিয়া চালুর বিষয়টি চলবে। অধ্যক্ষের ইস্তফাও গ্রহণ করা হয়নি।
পযর্টনমন্ত্রী বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী টেলিফোন করে সমস্যা মেটানোর কথা বলেছিলেন। তার পরেই বৈঠকে অনলাইনের পাশাপাশি পুরনো পদ্ধতি চালু থাকবে বলে ঠিক হয়েছে।” টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাসের অবশ্য কোনও হেলদেল নেই। তিনি বলেন, “গ্রামের ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে অনলাইনে ভর্তির বিরোধিতা করেছিলাম। এ দিন অনলাইনের পাশাপাশি কলেজে পুরনো ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় আমরা খুশি।”
মঙ্গলবার থেকে ফর্ম দেওয়া শুরু হয়েছে রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজে।
বুধবার কলেজের বাইরেই শিবিরে অনলাইনে ফর্ম পূরণের জন্য ভিড়।
বিভিন্ন জায়গায় আবার অনলাইন প্রক্রিয়ায় ভর্তিতে ছাত্র সংগঠনগুলি বাড়িয়ে দেওয়া সাহায্যের হাতও দেখা গিয়েছে। রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজ গেটের সামনে ছাত্র পরিষদ ও টিএমসিপি-র তরফে শিবির করে ল্যাপটপের মাধ্যমে আবেদনকারীদের বিনা পয়সায় অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তির ফর্ম পূরণ করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা কী ওই ছাত্র সংগঠনগুলির সদস্য পদ সংগ্রহেরও ‘বিকল্প’ পদ্ধতি নয়?
স্থানীয় কিছু যুবকও ৮০ থেকে ১০০ টাকায় আলাদা শিবির করে পড়ুয়াদের অনলাইনে ভর্তির ফর্ম পূরণ করে দিচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। হাওড়া জেলা এসএফআইয়ের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উষ্ণীষ সিংহ রায়ের অভিযোগ, “আন্দুলের প্রভু জগদ্বন্ধুু কলেজের বাইরে টিএমসিপি ৫০ টাকায় ছাত্রছাত্রীদের ফর্ম ফিল-আপ করাচ্ছে। অথচ, অন্য সাইবার কাফেতে খরচ তার চেয়েও কম।” ওই কলেজের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ সাঁতরা অবশ্য তা মানতে চাননি। তিনি বলেন, “সাইবার কাফেতে ফর্ম ভরতে অনেক বেশি খরচ বলেই আমরা ৫০ টাকায় ফর্ম ভরে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” কিন্তু এ দায়িত্ব ছাত্র সংগঠনগুলিকে নিতে কে বলল?
উত্তর মেলেনি।

—নিজস্ব চিত্র।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.