স্বচ্ছতার স্বার্থে কলেজে কলেজে স্নাতক স্তরে ভর্তি প্রক্রিয়া অনলাইন করার পক্ষপাতী রাজ্য সরকার। অথচ মালদহ কলেজে অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-র বিরুদ্ধেই।
কলেজ সূত্রে খবর, টিএমসিপি অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করার পরে ক্ষুব্ধ হয়ে মঙ্গলবার ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রভাস চৌধুরী তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিও চেয়েছেন। কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি সন্তোষ চক্রবর্তী এই ঘটনায় বিস্মিত।
তিনি বলেন, “ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ভাল কাজ করছেন। অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া কেন বন্ধ করে দেওয়া হবে, বুঝতে পারছি না। প্রভাসবাবুর ইস্তফাপত্র হাতে পাইনি। উনি যাতে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি না নেন, তার চেষ্টা করা হবে।”
পরিচালন সমিতির সভাপতি এ কথা বললেও স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “ওই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ঠিক প্রশাসক নন। উনি ইস্তফা দিয়েছেন, সেটা ওঁর বিষয়। তবে কলেজ পরিচালনায় উনি ব্যর্থ।”
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য এ দিন বলেন, “কেবল ওই কলেজেই নয়, সর্বত্রই অনলাইন ভর্তির পক্ষে রাজ্য সরকার। এই ব্যবস্থা বাম আমলে ছিল না। চালু করেছে বর্তমান সরকার।” মালদহ কলেজের সমস্যা সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “পুলিশ সুপারকে বলেছি, অধ্যক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করতে। তিনি চাইলে উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে।” টিএমসিপি’র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা জানান, “নীতিগত ভাবে আমরা চাই অনলাইনেই ভর্তি করা হোক। তবে গ্রামাঞ্চলে অনেক জায়গায় ছাত্রছাত্রীরা অনলাইনে ভর্তির ব্যাপারে স্বচ্ছন্দ না হওয়ায়, সাবেক ব্যবস্থাও পাশাপাশি চালু রাখতে বলেছি। তবে শিক্ষামন্ত্রী স্বচ্ছতার কারণে অনলাইনের কথাই বলেছেন।” ওই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে তাঁর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্যও এই দিন রাতে অনুরোধ করেছেন শঙ্কুদেববাবু।
কলেজ সূত্রের খবর, গত সোমবার দুপুরে টিএমসিপি মালদহ কলেজে অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়ার দাবিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ঘরে গিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে ঘেরাও বিক্ষোভ দেখায়। তখন অনলাইনে ভর্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘেরাও মুক্ত হন প্রভাসবাবু। তবে তারপরেই শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
মঙ্গলবার সকালে প্রভাসবাবু পরিচালন সমিতির সম্পাদকের কাছে ইস্তফাপত্রও পাঠিয়ে দেন। প্রভাসবাবুর ইস্তফা দেওয়ার খবর জানাজানি হতেই এ দিন মালদহ কলেজ টিচার্স কাউন্সিল ও অশিক্ষক কর্মচারীরা বৈঠক ডাকেন। সেখানে সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত হয়, ভর্তি হবে অনলাইন প্রক্রিয়াতেই।
প্রভাসবাবু বলেন, “টিএমসিপি সমর্থকেরা জোর করে অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। গোটা রাজ্যে অনলাইন ভর্তি চালু হয়েছে। অনলাইনে ভর্তি চালু হলে ভর্তি প্রক্রিয়া অনেক স্বচ্ছ হবে। পরিচালন কমিটিতে সিদ্ধান্ত নিয়েই তা চালু হয়েছিল।” তিনি বলেন, “যে ভাবে জোর করে এটা বন্ধ করা হয়েছে, তাতে আমার পক্ষে কলেজ চালানো সম্ভব নয়। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। তাই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছি।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস অবশ্য দাবি করেছেন, “ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একটি রাজনৈতিক দলের নির্দেশেই ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করে বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এখন তা না পেরে ইস্তফা দিয়েছেন।” |